ক্যান্সারের ওষুধের দাম কমিয়ে ভিটামিনের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের

সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

ক্যান্সার ওষুধের দাম কমিয়ে মাল্টিভিটামিন ও মাল্টিমিনারেল জাতীয় ওষুধের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত ১৫ জানুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে এ-সংক্রান্ত চিঠি দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহার বেগম। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, ক্যান্সার ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামালের ওপর আরোপিত অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স (এআইটি) এবং অ্যাডভান্স ট্যাক্স (এটি) কমিয়ে মাল্টিভিটামিন ও মাল্টিমিনারেল জাতীয় ওষুধে এআইটি ও এটি আরোপ করলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে ৩৪০ থেকে ৩৫০ কোটি টাকা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানকে দেওয়া ওই চিঠিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় দেশের দরিদ্র মানুষ ক্যান্সার আক্রান্ত হলে এই ব্যয় করতে গিয়ে নিজে ও পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়।

চিঠিতে বলা হয়, ক্যান্সার চিকিৎসায় সার্জারি, কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাটির মতো বিভিন্ন পদ্ধতির সমন্বয়ের প্রয়োজন। বর্তমানে দেশে কেমোথেরাপির জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টি-ক্যান্সার জাতীয় ওষুধের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩০টি হলেও এর ব্যবহৃত শতভাগ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। অ্যান্টি ক্যান্সার জাতীয় ওষুধ আমদানি করতে কাঁচামালের ওপর আরোপিত কর উৎপাদনকারী বা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে বহন করতে হয়। ফলে ওষুধের দাম বাড়ে এবং এই অতিরিক্ত করের বোঝা দেশের দরিদ্র মানুষকেই বহন করতে হয়। ক্যান্সার প্রতিরোধী ওষুধ তৈরিতে কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে কাস্টমস শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি রয়েছে। কিন্তু ফিনিসড ওষুধ ও কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স (এআইটি) এবং অ্যাডভান্স ট্যাক্স (এটি) বাবদ ৫ শতাংশ করে মোট ১০ শতাংশ কর ধার্য আছে। এআইটি ও এটি প্রত্যাহার হলে এসব ওষুদের দাম কমবে। ক্যান্সার রোগীদের কল্যাণে এই ১০ শতাংশ কর প্রত্যাহার করা হলে বছরে ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি হবে। অন্যদিকে মাল্টিভিটামিন ও মাল্টিমিনারেল জাতীয় অপ্রয়োজনীয় বা তুলনামূলক কম প্রয়োজনীয় ওষুধ আমদানি, উৎপাদন, বিপণন ও গ্রহণে নিরুৎসাহিত করতে হবে। এ জাতীয় ওষুধের বাজার ৩৫০০ কোটি টাকার বেশি। মাল্টিভিটামিন ও মাল্টিমিনারেল জাতীয় ওষুধের কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে এআইটি এবং এটি যথাক্রমে পাঁচ শতাংশ নতুনভাবে প্রয়োগ করলে মোট ১০ শতাংশ কর বাড়বে। এতে ৩৪০ থেকে ৩৫০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হবে।

মাল্টিভিটামিন ও মাল্টিমিনারেল জাতীয় ওষুধ অপ্রয়োজনীয় বা তুলনামূলক কম প্রয়োজনীয় কি না, জানতে চাইলে বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, এগুলো অপ্রয়োজনীয় ওষুধ নয়। বয়স্ক রোগীদের বহুমাতৃক ভিটামিন ও মিনারেল ঘাটতি দেখা দেয়। এ ছাড়া কিডনি রোগী এবং ডায়াবেটিস রোগীদেরও বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল ঘাটতি তৈরি হয়। তখন এসব রোগীকে সুস্থ রাখতে পরীক্ষা করে ঘাটতি পূরণে ভিটামিন ও মিনারেল জাতীয় ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া হাসপাতালে ভর্তি অনেক রোগীর শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে, শিশুদের অপুষ্টিজনিত সমস্যা দূর করতে মাল্টিভিটামিন ও মাল্টিমিনারেল জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়। এমনকি দেশের নারীদের একটি বড় অংশ ঘরে থাকার কারণে ভিটামিন ডি-এর অভাবে ভোগেন। তাদের এই জাতীয় ওষুধ প্রয়োজন হয়।

১৫ জানুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টার লেখা এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ জানুয়ারি পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দ্বিতীয় সচিব (কাস্টমস নীতি) মুকিতুল হাসানের সই করা ওই চিঠিতে বলা হয়, পত্রটি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বর্ণিত বিষয়টি আয়কর নীতিমালা শাখা ও মূসক নীতি শাখা সংশ্লিষ্ট। এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশক্রমে প্রেরণ করা হলো।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এই পরামর্শ বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা মন্তব্য করতে অনীহা প্রকাশ করেন।

তবে বিষয়টিকে অমানবিক ও অগ্রহণযোগ্য ভাবছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সব ওষুধই প্রয়োজনীয়। তাই একটির দাম কমিয়ে আরেকটির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব যুক্তিসংগত নয়। রাজস্ব আদায়ের বহু খাত রয়েছে। জীবন বাঁচানোর পণ্য ওষুধর ওপর কর বাড়িয়ে রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ অমানবিক এবং অগ্রহণযোগ্য। তা ছাড়া দেশে ক্যান্সার রোগীর তুলনায় অপুষ্টিজনিত রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি।

প্ল্যাটফর্ম/

প্ল্যাটফর্ম কনট্রিবিউটর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

বারডেমে প্রথম প্যালিয়েটিভ কেয়ার কর্মশালা চলমান

Mon Feb 17 , 2025
সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ যুক্তরাজ্যের সেন্ট ক্লেয়ার হসপিসের সহায়তায় বারডেম জেনারেল হাসপাতালে প্রথমবারের মতো প্যালিয়েটিভ কেয়ারবিষয়ক তিনদিনব্যাপী এক কর্মশালা শুরু হয়েছে। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে বারডেম হাসপাতালের অডিটোরিয়ামে কর্মশালার উদ্বোধন করা হয়। জেরিয়াট্রিক ডে কেয়ার সার্ভিসের মতো যুগোপযোগী চিকিৎসাসেবার সঙ্গে প্যালিয়েটিভ কেয়ার চালুর মাধ্যমে বারডেম জেনারেল হাসপাতাল আবারও দেশের স্বাস্থ্যখাতে […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo