২১ ডিসেম্বর ২০১৯
বিজয়ের এই ডিসেম্বর মাসে স্মরণ করা হচ্ছে ক্যাপ্টেন ডা. সৈয়দ মইন উদ্দিন আহমেদ, একজন বীর প্রতীক, কে।
ক্যাপ্টেন ডা. সৈয়দ মইন উদ্দিন আহমেদ ১৯৭০ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করেন। তিনি K-23 ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। একই বছর ডিসেম্বরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দান করেন। তার প্রথম পোস্টিং হয় কুমিল্লা সেনানিবাসে ৪০ ফিল্ড এম্বুলেন্স-এ। কুমিল্লায় অবস্থিত ৫৩ ব্রিগেডের ৩১ পান্জাব রেজিমেন্টকে অপারেশান- সার্চলাইট কার্যকরী করার জন্য পাঠানো হয় সিলেটে। তারা অবস্থান নেয় খাদিমনগরে। ক্যাপ্টেন মইনকে ৩১ পান্জাব রেজিমেন্ট-এর Regimental Medical Officer হিসেবে পাঠানো হয়। অপর বাঙালি অফিসার বরিশালের ক্যপ্টেন মাহবুব সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালাচনা করে ক্যাপ্টেন মইনকে জানান, যে করেই হোক তাদের পালাতে হবে। অন্যথায় পাকিস্তানিরা তাদের হত্যা করবে।
২ এপ্রিল ১৯৭১ তারা পালাতে গিয়ে ধরা পরে। চোখ, হাত, পা বেঁধে একটি ঘরে তাদেরকে বন্দি করা হয়। পরে চোখের ও পায়ের বাঁধন খুলে দেয়া হয়। ৪ এপ্রিল কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল সরফরাজ খান মালিকের নির্দেশে এক মেজর দরজা খুলে ঢুকে ক্যাপ্টেন মাহবুবের নাম ধরে ডাক দেয়। ফিরে তাকাতেই ক্যাপ্টেন মাহবুবের উপর এক বার্স্ট গুলি করে। বিছানা থেকে নিচে পড়ে যান তিনি। রক্তে ডুবে যায় তার শরীর। এরপর গুলি করা হয় ক্যাপ্টেন মইনকে। তার বাম উরুতে গুলি লাগে। তিনি মরার ভান করে পড়ে থাকেন।
পাঠান উপ-অধিনায়ক মেজর সৈয়দ আনোয়ার শাহ ছিলেন চাকুরীতে অধিনায়কের সিনিয়ার। তিনি অধিনায়ককে অনুরোধ করেন আহত দুই বাঙালি অফিসারকে সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে। তিনিই তাদের রেখে আসেন হাসপাতালে। হাসপাতালে ছিলেন এক সিংহ হৃদয় সার্জন প্রফেসর সামসুদ্দিন আহমেদ। তিনি তাদের যথাসম্ভব চিকিৎসা দেন। তিনি ক্যাপ্টেন মইনকে পালিয়ে যেতে উপদেশ দেন।
ক্যাপ্টেন মইন তাকেও পালিয়ে যেতে অনুরোধ করলে প্রফেসর সামসুদ্দিন বলেন, আমি তো ডাক্তার। আমি মুক্তিযাদ্ধা এবং পাকিস্তানি নির্বিশেষে চিকিৎসা করি। আর তা ছাড়া আমার ভর্তি রোগীদের কী হবে? ক্যাপ্টেন মইন বললেন, স্যার আমি ওদের এতোদিন ডাক্তার ছিলাম। আমাকে ছাড় দেয় নাই। এরা মানুষ না। পরে পাকিস্তানিরা প্রফেসার সামসুদ্দিন, ডা.লালা, একজন নার্স এবং একজন এ্যাম্বুলেন্স-এর ড্রাইভারেকেও হত্যা করে। ৫ই এপ্রিল ক্যাপ্টেন মাহবুব মারা যান।
ক্যাপ্টেন ডা. মইন যোগ দেন ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট-এর ক্যাপ্টেন আজিজুর রহমান (বীর উত্তম) এর সাথে আশ্রমবডি ক্যাম্পে। গড়ে তোলেন ১০ বেডের ছোট্ট হাসপাতাল। ৫ই জিসেম্বর আবারও ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হলে ক্যাপ্টেন ডা. মইন মেনে নিতে পারেন নি। চাকুরী ছেড়ে, দেশ ছেড়ে চলে যান আমেরিকা। সত্তর পার করেছেন দু’বছর হলো। দেশের জন্য কাঁদেন। সময় তার মূল্য নিতে শুরু করেছে। শ্রবণশক্তিও প্রায় হারিয়ে ফেলেছেন। শরীর সায় দেয় না। তবুও গত ৪ঠা মার্চ কামরুল হাসান ভূইয়াঁকে দেখতে যান। জীবনযুদ্ধের তিনি আজও এক অপরাজিত সৈনিক।
উল্লেখ্য, মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনজন চিকিৎসক বীর প্রতীকদের মধ্যে আছেন: ক্যাপ্টেন সৈয়দ মইনউদ্দিন আহমেদ, মেজর আখতার আহমেদ (প্রয়াত) এবং ক্যাপ্টেন সিতারা বেগম।
তথ্যসূত্রঃ কামরুল হাসান ভূইয়াঁ
স্টাফ রিপোর্টার /নাজমুন নাহার মীম