১ এপ্রিল, ২০২০:
ডা. নুসরাত মোস্তফা নওরিন
আজ সকালে ডিউটি ছিল। যথারীতি সকাল ৮টা বাসা থেকে বের হলাম। মিরপুর ১৩ নং থেকে বনানী ১১, খুব বেশি পথ না। কিন্তু দেশের এই লকডাউন অবস্থায় আমার এই পথটা যেতেই অনেক প্যারা নিতে হচ্ছে। ৩ বার করে রিকশা বদলাতে হচ্ছে। তাও সব সময় রিক্সা, সিএনজি পাচ্ছি না। নিজের গাড়ি না থাকলে যা হয়। আর যারা ক্যান্টনমেন্ট, কচুক্ষেত এলাকায় থাকেন তারা মনে হয় ভাল বুঝবেন কত প্যারা নিতে হয় ওদিক দিয়ে আসতে। এর মধ্যে হাসপাতালকে বলার পরও তারা ট্রান্সপোর্ট এর ব্যবস্থা করছে না।
এখন আসি আসল কথায়। আজ যথারীতি ২ বার রিকশা বদলে কচুক্ষেত আসার পর কিছু না পেয়ে আবার রিকশা নিলাম। যেভাবই হোক ডিউটিতে যেতে হবে। কিন্তু আর্মি চেকিং করে কোন ভাবেই রিকশা ছাড়বেনা। এটা তাদের নিয়মের বাইরে। নিজের আইডি কার্ড দেখিয়ে পরিচয় দিয়ে বললাম, ডাক্তারদের ইমারজেন্সি মুভমেন্ট এর জন্যে প্রধানমন্ত্রী নিজেই সহযোগিতা করতে বলেছে সেখানে আপনারা কেন করবেন না। এরপরের ব্যপারটার জন্য আমি একদমই প্রস্তুত ছিলাম না। চেকপোস্টের সিনিয়র একজন আর্মি পারসন এসে বলল, ‘ম্যাডাম আমি আপনার রিকশা যেতে দিয়ে রুলস ব্রেক করতে পারি না। কিন্তু দেশের এই পরিস্থিতি আমাদের নিজের গাড়িতে আপনাকে পৌছে দিতে পারি।’
এবং সকালে তারা তাদের গাড়িতে করে হাসপাতালে পৌছে দিল। যাওয়ার পথে বলছিল ‘আপনারা অনেক রিস্ক নিয়ে কাজ করছেন, আপনাদের ভয় লাগেনা?’
আমি বললাম ‘আপনাদের যদি দেশের কাজ করতে ভয় না লাগে আমাদের কেন লাগবে। দেশটাতো আপনার আমার সবার।’
সত্যি আজকে ওনাদের চোখে যে সম্মান আমি ১ জন ডাক্তারের জন্য দেখলাম, তাতে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে ডাক্তার হিসাবে। এই সংকটময় সময়ে কিছু মানুষতো আছে যাদের কাছে এখনোও আমাদের সম্মান অনেক। যারা আমাদের অন্য দেশের মত রিয়েল হিরো মনে করে। হ্যাটস অফ টু দোজ পিপল। যতদিন বেঁচে আছি এই সংকটময় সময়ে সেবা দিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।