বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৪
বাংলাদেশেই সম্ভব হবে গণঅভ্যুত্থানে মুখে গুলিবিদ্ধ খোকন চন্দ্র বর্মণের (২৩) চিকিৎসা। মাইক্রোভাসকুলার সার্জারির মাধ্যমে দেশেই তার মুখ পুনর্গঠন করা করা যাবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তবে আন্তঃবিভাগ সমন্বয় না থাকায় খোকনকে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বিদেশে নেওয়ার কথা উঠেছে বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
বর্তমানে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসারত খোকন গত ৫ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার সামনে পুলিশের গুলিতে আক্রান্ত হন। খুব কাছ থেকে গুলি করায় তার নাক ও ঠোঁট উড়ে গেছে, হারিয়েছে ডান চোখের দৃষ্টি। বাম চোখে কোনো রকম দেখতে পান। এ অবস্থায় তার চিকিৎসায় গঠিত ১৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে তাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
তবে ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জনরা বলছেন, খোকনের চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিদেশে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। এমনকি তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিতেও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন দেশের কয়েকজন চিকিৎসক।
প্রথম আলোর বরাতে জানা যায়, বার্ন ইনস্টিটিউটের প্লাস্টিক সার্জন সহযোগী অধ্যাপক তানভীর আহমেদ বলেন, “খোকনের মুখ পুনর্গঠনের প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল। বার্ন ইনস্টিটিউট থেকে তাঁর মুখের বীভৎস অবস্থা ঢাকার কাজ চলছে। বিষয়টি বেশ জটিল হলেও, এর চিকিৎসা এখানেও সম্ভব। কিন্তু বীভৎস অবস্থা ঢাকলেই তো হবে না, তিনি যাতে কথা বলতে পারেন, নিজে খেতে পারেন, তার ব্যবস্থাও করতে হবে। বার্ন ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, জাপান, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের চিকিৎসা, শিক্ষা ও গবেষণার জন্য সমঝোতা চুক্তি আছে। সে অনুযায়ী বিভিন্ন দেশের বড় বড় হাসপাতালগুলোর চিকিৎসকদের কাছে খোকনের বিষয়টি জানানো হয়েছে, হচ্ছে। অনলাইনে বোর্ড মিটিং চলছে।”
একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এর বরাতে জানা যায়, রংপুর মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটের ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারির সহকারী অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, “তার (খোকন) প্রাথমিক চিকিৎসা হয়েছে ঢাকা ডেন্টাল কলেজে, পরে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারিতে নেওয়া হয়। তার চিকিৎসায় প্রাথমিকভাবে প্রোস্টেথিসিস সার্জারির কথা ছিল, কিন্তু সেটা সাময়িক। স্থায়ীভাবে চেহারা পুনর্গঠন করতে গেলে দুই থেকে তিনটি পর্যায়ে অস্ত্রোপচার করতে হবে। অনেকে বলছে আমাদের সাথে রাশিয়ার কথা হয়েছে, ওখানে ভালো… প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের গানশুট ইঞ্জুরি এক ধাপে সমাধান হয় না, একাধিক ধাপে এটা করতে হয়। অবশ্য, তার একবারেই কোনো কিছু ভালো হয়ে যাবে না, চেহারা সম্পূর্ণ ফিরে আসবে তা সম্ভব নয়। কিন্তু পার্ট বাই পার্ট মাইক্রোভাসকুলার সার্জারি করে পুনর্গঠন করতে হবে। মাইক্রোভাসকুলার সার্জারির অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। প্রতি সপ্তাহে সার্জারি করি। যদিও তাকে (খোকন) প্রথম দিকে নেওয়া হলে ভালো হতো। কিন্তু এখন যে সময় নেই, তাও না। এই চ্যালেঞ্জটা নেওয়া যায়। তবে মেডিকেল বোর্ড আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি। দেশে আন্তঃবিভাগ সমন্বয় করে কাজগুলো হয় না বলেই এমনটা হয়েছে।”
প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদকঃ মঈন উদ্দীন আহমদ শিবলী