গনি মিয়ার মাথায় একবার একটা সুপারী পড়েছিল। যেহেতু ব্যাপারটা মাথার তিনি ভাবিলেন দেশসেরা নিউরোলজিষ্টকে দেখাইতে হবে। খোজ নিয়া দেখিলেন আগামী ছয় মাসে সেই অধ্যাপকের কোন সিরিয়াল নাই। সে দমিবার পাত্র নয়। টাকায় বাঘের চোখ মেলে, সিরিয়াল মিলিবেনা কেন? গতবার বৃষ্টিতে ভিজে দুতিনটা হাচি ও কাশি দিয়েছিল । তখন নাক কান গলা ও বক্ষব্যাধির শীর্ষ প্রফেসরদের দেখাইতে গিয়া একই ঝামেলায় পড়েছিল। পরে বড় স্যারদের ফি যত টাকা তার চেয়ে মাত্র দুইগুন বেশী টাকা চেম্বারের বাইরের লোকটাকে ঘুষ দিয়া সে এপয়েন্টমেন্ট পেয়ে গিয়েছিল।
তার ভাতিজাও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার । কিন্ত তার কাছে সে যায়না। ইয়ং ডাক্তারে রুচি হয়না। চাচাই ভাতিজারে পাত্তা দেয়না, অন্য মানুষ কেন দিবে? ভাতিজা চেম্বারে বসে বসে পেপার পড়ে আর মাছি মারে।
নিউরোলজিষ্ট স্যারের সিরিয়াল পেতে নানা পথ, নানা উপায় ফলো করতে করতে তার অনেক সময় ও অর্থ বিনাশ হয়ে গেল। ফেসবুকের ইনবক্সে ”সিরিয়াল পাবার সহজ তরিকা” জাতীয় লিন্কও সে শুভাকাঙ্খীদের কাছ থেকে পেয়েছিল। আর্থিকভাবে সে কিছুটা ঋনী হয়ে গেল। অবশেষে সে সিরিয়াল পাইলো । আমি পাইলাম আমি সিরিয়াল পাইলাম বলিয়া সে জমি ও গরু বেচার দুঃখ ভুলে গেল।
শেষমেষ সে মহেন্দ্রক্ষন আসিল। আজ গনি মিয়া প্রফেসর স্যারকে দেখাবে। চেম্বারে গিয়া দেখে সেখানে রোগীতে রোগারন্য। সে ভাবিল সব হয়তো মানুষ না। সাথে কিছু জ্বিনও আছে। নইলে গ্রামের হাটের মত এমন গুম গুম শব্দ হইতেছে কোথ্থেকে?
মাঝরাতে তার ডাক পড়িল। স্যার বলিলেন, আপনার সমস্যা কি?
সে বলে, স্যার, বহুদিন আগে… ।
স্যার বলেন, বহুদিন আগে কি হয়েছিল?
সে বলে, স্যার, বহুদিন আগে… ।
স্যার বলেন, বহুদিন আগে কি হয়েছিল?
ভাইভার টেবিলে পড়া ভুলে যাওয়া ছাত্রের মতো সে জবাব দেয়, মনে নাই স্যার!
বাড়ী পৌছার পর তার মনে পড়ে, বহুদিন আগে তার মাথায় একটা সুপারী পড়েছিল।
লিখেছেন: আমিনুল ইসলাম