প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৭ মে ২০২০, রবিবার
গত ১৬ মে দৈনিক কালের কণ্ঠে এবং বাংলানিউজে ‘দেশে করোনা চিকিৎসায় বড় সাফল্য বা একই করোনা চিকিৎসায় বিস্ময়কর সাফল্য দেখছে বাংলাদেশি গবেষক দল’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে বলা হয় কোভিড-১৯ আক্রান্তদের উপর ইভারমেকটিন ও ডক্সিসাইক্লিন প্রয়োগে গবেষণায় ভালো ফল পাওয়া গেছে। এই প্রতিবেদনগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের পর প্রতিবেদনের বক্তব্য আসলেই সঠিক কিনা এ বিষয়ে বির্তক শুরু হলে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেন ”এটা সত্যিই গবেষণা কিনা আর গবেষণা হলে গবেষণার সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছিল কিনা” আবার ”ওষুধ গুলো ব্যবহারে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে কিনা”।
প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর
বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. তারেক আলম বলেন, তারা কোনো গবেষণা করেননি। মূলত, কোভিড-১৯ পজিটিভ হওয়া কিছু রোগী নিজেদের তথ্য গোপন করে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় তাদের দ্বারা সংক্রমিত হাসপাতালের কয়েকজন ইর্টান ডাক্তার, নার্স এবং ওর্য়াড বয় সহ প্রায় ৬০ জন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার সময় দুটি ওষুধের মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়েছে, এসব রোগীদের অ্যান্টিপ্রোটোজোয়াল মেডিসিন ইভারমেকটিনের সিঙ্গল ডোজ এর সাথে অ্যান্টিবায়োটিক ডক্সিসাইক্লিন মিশিয়ে প্রয়োগ করা হয়েছে। রোগীদের মধ্যে ৬ বা ৭ জনের অবস্থা কিছুটা গুরুতর ছিল এবং বাকিরা ছিলেন প্রাথমিক পর্যায়ের আক্রান্ত।
অ্যান্টিপ্রোটোজোয়াল ওষুধটি তৈরি করা হয়েছিল জাপানের কিতাসাতো বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক সাতোশি ওমুরার এক গবেষণার ওপর ভিত্তি করে, যে কাজের জন্য তিনি ২০১৫ সালে চিকিৎসায় নোবেল পান। টোকিওর ওই বিশ্ববিদ্যালয়েও সম্প্রতি কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় পরীক্ষামূলকভাবে আইভারমেকটিন ব্যবহার করে দেখার ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটি ও মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটি মেডিকেল কলেজও একটি গবেষণায় ল্যাব টেস্টে (সেল কালচারে প্রাণি বা মানুষের শরীরে নয়) এমন ওষুধ প্রয়োগে ভালো ফলাফল আসে এবং পেরু ও ইরাকসহ কয়েকটি দেশে একই পদ্ধতিতে পরীক্ষামূলক চিকিৎসা চলার প্রেক্ষিতে ওষুধগুলো পরীক্ষামূলকভাবে এটি প্রয়োগ করা হয়েছে এবং ভালো ফল পাওয়া গিয়েছে। তাদের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আইভারমেকটিন ব্যবহারে নতুন করোনাভাইরাসের সংখ্যা বৃদ্ধির হার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে যায় আর ইউনিভার্সিটি অব উটাহর গবেষকরা বলছে, আইভারমেকটিন প্রয়োগে কোভিড-১৯ রোগীদের বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে বলে তারা দেখতে পেয়েছেন।
আইভারমেকটিন আর ডক্সিসাইক্লিনের এই ককটেল এর আগে সার্স মহামারীর সময়ও ব্যবহার করা হয়েছিল জানিয়ে ডা. তারেক আলম বলেন, “এই ওষুধ ভাইরাসকে মারে কিন্তু কীভাবে মারে সেটা আমরা এখনও বের করা যায়নি।
তাদের ফলাফলকে আমলে নিয়ে অন্য রোগের জন্য তৈরি দুটি ওষুধের মিশ্রণ রোগীদের ওপর প্রয়োগ করে বাংলাদেশেও ভালো ফলাফল পেয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, “প্রথমত বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কোভিড ডেডিকেটিভ হাসপাতাল নয়, ফলে এখানে গবেষনা নয় চিকিৎসায় সুস্থ হয়েছে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীরা। তিনি আরও বলেন, এখানে কোভিড পজিটিভ ৬০ জন কয়েক দিনের মধ্যে নেগেটিভ হয়েছেন অর্থাৎ, শতভাগই সেরে উঠেছেন। ডাক্তার তারেকের মতে, “এই ওষুধ যে কেউ ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। শুধু চিকিৎসা প্রদানকারী ডাক্তাররা যদি মনে করেন কারো ওপর এটা প্রয়োগ করা যেতে পারে তাহলে তারাই শুধু করতে পারবেন। আর এই ওষুধ গুলো স্বল্পমূল্যের তাই আমাদের দেশের জন্য এই ওষুধ ব্যবহার খুবই সুবিধাজনক হবে।”
তিনি জানান, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আইসিডিডিআরবি এই ওষুধের প্রয়োগ নিয়ে গবেষণা শুরু করবে যেমনটি দেশের বাইরেও একাধিক প্রতিষ্ঠান শুরু করেছে।
তথ্যসূত্রঃ
Boom Bangladesh news portal
ekattor.tv news
bdnews 24 bangla
নিজস্ব প্রতিবেদক
সিলভিয়া মীম