প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৪ এপ্রিল, ২০২০, শুক্রবার
করোনা আক্রান্ত রোগীর ব্যবস্থাপনায় একাধিক “কোভিড হাসপাতাল” ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এর অনেকগুলো হাসপাতাল সারাদেশে কোভিড রোগী ভর্তি করে সেবা দিচ্ছে। কোনো কোনো হাসপাতাল আবার এই ঘোষণায় বিব্রত হয়েছে। পূর্বপ্রস্তুতির সুযোগ না দিয়ে কোভিড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা দেয়া বিব্রতকর বটে। পরে আবার ঘোষণা ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। ঢাকা শহরের মধ্যে যে কয়টি হাসপাতাল শুরুতে কোভিড রোগীর জন্য ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, তার মধ্যে ঢাকা জেলার বাইরের গাজীপুরের একটি হাসপাতালের নামও ছিল।
এমন অসংগতির ধারাবাহিকতা রোধেই কিনা জাতীয় কমিটি গঠন করে কমিটির তত্ত্বাবধানে পরিকল্পনা, সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়নের কৌশল গৃহীত হয় যা জনমনে স্বস্তি আনে।
সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের অন্যান্য স্থানের চেয়ে, এমনকি বাংলাদেশের সারা বছরের তুলনায় রোগীদের তথ্যগোপন করে চিকিৎসা নেয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
ফলে অনেক চিকিৎসক নার্স ও হাসপাতালের অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত হন। বেশ কয়েকটি সরকারি বেসরকারি হাসপাতালের বিশেষায়িত ইউনিট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। এখন আর কোভিড রোগী আলাদা করে না দেখে প্রত্যেক রোগীকে কোভিড বিবেচনায় চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
এই প্রেক্ষিতে গত ১৮ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. মো. আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক নোটিশে রোগী ব্যবস্থাপনায় কিছু বিশেষ নির্দেশনা জারি হয়। এতে বলা হয় –
১। হাসপাতালের সব ইউনিট তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের ৩টি গ্রুপে ভাগ হয়ে সেবা দিবে। একটি গ্রুপ ২ বা ৩ শিফটে (১২ বা ৮ ঘন্টার শিফট) ডিউটি করবে। এভাবে টানা ১০দিন সেবা দেয়ার পর ১টি গ্রুপ ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে যাবে। ডিউটি ও কোয়ারেন্টাইন সময়ে তাঁরা সবাই হাসপাতাল নির্ধারিত আবাসিক হোটেল/গেস্ট হাউজে থাকবেন। আবাসন নির্ধারণ করবেন প্রতিষ্ঠান প্রধান, প্রয়োজনে প্রশাসনের সহযোগিতা নিবেন। এরপর চাইলে তাঁরা ৬ দিনের জন্য নিজ পরিবারে সময় দিতে পারবেন। ৬ দিন পর পুনরায় হাসপাতালে কাজে ফিরবেন।
উক্ত ২০ দিনে রিজার্ভ গ্রুপ এসে কাজ করবে। অর্থাৎ প্রতি ১০ দিনে হাসপাতালের ১টি গ্রুপ হাসপাতালে থাকবে এবং সংক্রমণ একই সাথে ৩টি গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকছে না।
আবাসন এখনো বেশিরভাগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করতে পারেননি। এদিকে প্রতিদিনই হাসপাতালে রোগী আসছেন।
২। পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তি এবং গর্ভবতী মায়েদের এই টিম থেকে বিরত রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাঁরা টেলিমেডিসিন সার্ভিসে যুক্ত হবেন।
অনেক হাসপাতালে এটি মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ আছে। বেসরকারি হাসপাতালে হয় টিমে রাখছে অথবা বিনা বেতনে ছুটি বা চাকরি থেকেই বাদ দেয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা জাতীয় কমিটি এ ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেয় দেখার বিষয়।
এজমা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, হাই ব্লাড প্রেসার ইত্যাদি সমস্যা করোনায় স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় বলে প্রমাণিত। হেলথ সার্ভিসের অনেকে এসব অসংক্রামক ব্যাধিতে ভুগছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয় নি।
৩। নির্দেশনায় আরও বলা আছে স্থানীয়ভাবে মানসম্মত পিপিই সংগ্রহ করতে।
এটা কী প্রক্রিয়ায় হতে পারে তা উল্লেখ নেই। দেশে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানসম্মত পিপিই উৎপাদন করতে সক্ষম কোনো কারখানা নেই।
এমনিতেই সরকারি হাসপাতালে রোগীর উপচে পড়া ভিড় থাকে। যত বেড ও ওষুধ পথ্য বরাদ্দ, তার দ্বিগুণ বা তিনগুণ রোগী থাকে প্রতিদিন। জনবল তিন ভাগে ভাগ করার পর খর্বিত জনবল দিয়ে এত রোগীর চিকিৎসা কিভাবে সম্ভব তা পরিষ্কার নয়। আবার স্থানীয়ভাবে “মানসম্মত পিপিই” সংগ্রহের নির্দেশ বাস্তবায়নযোগ্য কিনা তাও বিবেচিত হয়নি বলেই মনে হয়। এগুলো নিশ্চিত না করে পিপিই donning doffing এর নির্দেশনা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা নেয়ার নির্দেশ কেবলই দায়সারা নির্দেশ বলেই মনে হয়। Donning doffing এর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা অনেক হাসপাতালেই আজও করা হয়নি।
চিকিৎসক নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি আগের মতোই রেখে করোনা যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া দূরদর্শিতার পরিচয় নয় বলেই সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
প্ল্যাটফর্ম নিউজ ডেস্ক