৪এপ্রিল, ২০২০
কোভিড ১৯ আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের নবজাতকের কোভিড১৯ এর উপসর্গ বা প্রভাব খুবই কম এবং এদের উন্নতি সন্তোষজনক – চীনের ডা. ওয়েনহাও ঝৌ ও তাঁর সহকর্মীরা এক গবেষণাপত্রে এ সিদ্ধান্তে এসেছেন যা জার্নাল অফ আমেরিকান মেডিকেল এসোসিয়েশনে ২৬মার্চ ২০২০, প্রকাশিত হয়। উহান প্রদেশের চিলড্রেনস ইউনিভার্সিটি অফ ফুডান এর ন্যাশনাল চিলড্রেন্স সেন্টার এই গবেষণা সম্পন্ন করে।
৩৩ জন নবজাতকের জন্ম পরবর্তী অবস্থা ও চিকিৎসা তাঁরা পর্যবেক্ষণ করেন যাদের মায়েরা প্রত্যেকেই ছিলেন কোভিড ১৯ পজিটিভ। সার্বিকভাবে এদের মাঝে প্রধান উপসর্গ ছিল শ্বাসকষ্ট, এক্সরে তে সুনির্দিষ্ট কিছু ধরা পড়েনি। প্রত্যেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে যায়।
৩৩ এর মধ্যে ৩জনের লক্ষণ জন্মের পরপরই দেখা দিয়েছিল।
১টি বাচ্চা ছিল পরিণত কিন্তু জন্মের আগেই মায়ের পেটে মিকোনিয়াম(নবজাতকের কালো মল) ত্যাগ করেছিল। তার মা ছিলেন কোভিড১৯ নিউমোনিয়ার রোগী। তাই সিজারিয়ান অপারেশন করতে হয়েছিল। জন্মের দুই দিনের মাথায় তার জ্বর দেখা দেয় ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়। বুকের এক্সরে তে নিউমোনিয়া ধরা পড়ে, রক্তের প্রোক্যালসিটোনিন (সংক্রমণ নির্ধারক) বেড়ে যায়। এছাড়া অন্যান্য পরীক্ষায় অস্বাভাবিক কিছু ছিল না । সার্স কোভ ২ এর জন্য পরীক্ষায় নাসারন্ধ্র ও পায়ুপথের রসে ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে ৪র্থ দিন পর্যন্ত। ৬ষ্ঠ দিনে যা আর পাওয়া যায়নি।
২য় বাচ্চাটিও পরিণত এবং মা ছিল কোভিড১৯ নিউমোনিয়া রোগী। সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে জন্ম। বাচ্চা জ্বর বমির সাথে নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল। তাকেও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়। বুকের এক্সরে নিউমোনিয়া, রক্তে শ্বেতকণিকা বেশি কিন্তু লিম্ফোসাইট কম, সিকেএমবি বেশি। তারও নাসারন্ধ্র ও পায়ুপথের নমুনায় ৪র্থ দিন পর্যন্ত সার্স কোভ ২ এর অস্তিত্ব পাওয়া যায় যা ৬ষ্ঠ দিনের মাথায় আর পাওয়া যায় নি।
৩য় বাচ্চাটি ছিল সবচেয়ে নাজুক, অপরিণত – মাত্র ৩১ সপ্তাহ বয়েসী । মায়ের পেটে থাকতেই তার অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে (fetal distress) । তাই দ্রুত সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে বের করা হয়৷ জন্মের পরপরই জরুরি শুশ্রূষা দরকার হয়ে পড়ে। বুকের এক্সরে তে নবজাতকের তীব্র শ্বাসকষ্ট রোগ ধরা পড়ে (ARDS)। পরবর্তী ১৪দিনে সে কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র ছাড়াই সেরে ওঠে। তবে তার আগের ধাপের কম তীব্রতর শ্বাসযন্ত্রের সহায়তা লেগেছে (non-invasive ventilator) । এসময়ে অন্যান্য কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল যা এ ধরনের চিকিৎসায় সাধারণ ঘটনা। আগের দুই বাচ্চার মতো তারও সার্স কোভ ২ প্রথমে ধরা পড়ে, ৭ম দিনে আর ধরা পড়ে না।
এ থেকে ডা. ওয়েনহাও ঝৌ ও তাঁর সহকর্মীরা এই সিদ্ধান্তে আসেন যে বাচ্চার শরীরে সার্স কোভ২ ভাইরাস তাদের মায়ের কাছ থেকেই এসেছে। অপারেশন থিয়েটারে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। তাই বাচ্চার শ্বাসনালী ও পায়ুপথে পাওয়া ভাইরাস নিশ্চয়ই জন্মের আগেই গর্ভফুলের মাধ্যমে মায়ের কাছে থেকে এসেছে।
এর আগের দুটি গবেষণার ফলাফলে কোভিড ১৯ মায়ের গর্ভরস, গর্ভরজ্জুর রক্ত ও মায়ের দুধে ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। নবজাতকের শরীরে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। গর্ভফুলের মাধ্যমে জন্মের আগেই মা থেকে ভ্রূণ সংক্রমণের এটি প্রমাণ।
গবেষক দলের পরামর্শ, সম্ভাব্য রোগী হিসেবে ঝুঁকি থাকলে গর্ভবতী মায়ের পরীক্ষা (স্ক্রিনিং) করা, সংক্রমণ রোধ বজায় রাখা, আক্রান্ত মায়ের সঙ্গরোধ (কোয়ারেন্টাইন) এবং জন্মের পর সার্স কোভ২ সংক্রমণের ঝুঁকি সম্পন্ন নবজাতককে(কোভিড১৯ আক্রান্ত মা) নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা।
জন্মের আগেই আক্রান্ত মায়ের পেটে ভ্রূণ সংক্রমিত হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত হতে অধিকতর গবেষণার প্রয়োজন। তবে চীনের এই গবেষণা যে সেদিকে যথেষ্ট আলোকপাত করেছে তা বলা যায়।
সুতরাং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী গর্ভবতী মায়েদের সতর্কতা অবলম্বনের বিকল্প নেই।