প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১২ এপ্রিল, ২০২১, সোমবার
লেখাঃ ডা. মোঃ আহাদ হোসেন
কনসালটেন্ট ও পেইন ফিজিশিয়ান, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা।
চিফ কনসালট্যান্ট- ব্যথা বিষয়ক
বাংলাদেশ সেন্টার ফর রিহ্যাবিলিটেশন, কাটাবন, ঢাকা।
গ্ৰোয়িং পেইন সাধারণত সাধারণত বাচ্চাদের হয়ে থাকে। তিন বছর থেকে শুরু করে বার বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের এই ধরনের ব্যথা হতে পারে। পরিসংখ্যানে দেখা যায় শতকরা ১০ থেকে ২০ ভাগ বাচ্চাদের এই ধরনের ব্যথায় আক্রান্ত হতে পারে। বাচ্চাদের এই ধরনের ব্যথায় সাধারণত চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে সঠিকভাবে নির্ণয় না হলে বা অন্য কোন ব্যথাকে গ্রোয়িং পেইন বলে চিহ্নিত করলে অনেক সময় বাচ্চাদের ক্ষতি হতে পারে। তাই আজকের লেখায় জানানোর চেষ্টা করব গ্ৰোয়িং পেইন এর বিস্তারিত এবং কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
গ্রোয়িং পেইন এর লক্ষণ সমূহঃ
1. এই ধরনের ব্যথা সাধারণত সন্ধ্যা বা রাতের দিকে দেখা যায় এবং সকালের দিকে থাকে না।
2. বাচ্চাদের গ্রোয়িং পেইন সাধারণত পায়ে অনুভূত হয় এবং উভয় পা ই আক্রান্ত হয়। হাতে বা অন্যান্য জায়গায় এই ব্যথা খুব কমই দেখা যায়।
3. ব্যথার তীব্রতা সাধারণত স্বল্প, মধ্যম ও কিছু সময় ক্ষেত্রে এমন তীব্র ধরনের হতে পারে যাতে রাতে বাচ্চাদের ঘুম ভেঙে যায়।
4. এই ব্যথাটি সাধারণত সব সময় থাকে না। কিছু সময় থাকে আবার কিছু সময় থাকেনা। কিছুদিন ব্যথা থাকে আবার কিছুদিন সুস্থ থাকে।
5. কিছু কিছু বাচ্চাদের এই গ্রোয়িং পেইন এর সময় পেটে ব্যথা বা মাথাব্যথার সমস্যাও থাকতে পারে।
গ্রোয়িং পেইন এর কারণঃ
গ্ৰোয়িং পেইন শব্দটি শুনে মনে হচ্ছে বাচ্চাদের বেড়ে ওঠা এর সাথে ব্যথার সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু আসলে বিষয়টি এরকম নয়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে বাচ্চাদের বেড়ে ওঠার সাথে ব্যথার কোন সম্পর্ক নেই।
তার পরেও যে সকল কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে
1. যেসকল বাচ্চাদের পায়ে গঠনগত ত্রুটি থাকে, বাচ্চাদের পা এবং জয়েন্ট সমূহ অত্যাধিক একটিভ থাকলে এই সমস্যা হতে পারে।
2. বাচ্চাদের পায়ে রক্ত চলাচল জনিত সমস্যা থাকলে।
3. অপুষ্টিজনিত কারণে দুর্বলতা থাকলে।
4. যে সকল বাচ্চাদের ব্যথার সহনশীল ক্ষমতা কম থাকে।
5. যেসকল বাচ্চারা পারিবারিক সমস্যার কারণে মানসিক চাপে থাকে।
6. ডে কেয়ার বা পরিবার ভিন্ন অন্য কোনো তত্ত্বাবধানে থাকা বাচ্চাদের এ জাতীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গ্রোয়িং এইজ এর ঝুঁকি বাড়ায়ঃ
1. সাধারণত প্রিস্কুল বাচ্চাদের এবং স্কুলে যাওয়া বাচ্চারা এই সমস্যার ঝুঁকি তে থেকে।
2. গ্রোয়িং পেইন ছেলেদের চেয়ে মেয়ে বাচ্চাদের বেশি হয়।
3. যে সকল বাচ্চারা দৌড়ঝাঁপ বেশি করে অথবা অত্যাধিক একটিভ থাকে তাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেনঃ
1. যদি গ্রোয়িং পেইন সব সময়ের জন্য বা কিছু দিনের জন্য অব্যাহতভাবে থাকে।
2. যদি সকাল বেলাতেও এই ব্যথা থেকে যায়।
3. যদি ব্যথার তীব্রতা এমন হয় যে বাচ্চার স্বাভাবিক চলাফেরা ব্যাহত হচ্ছে।
4. গ্ৰোয়িং পেইন যদি বাচ্চার জয়েন্ট সমূহের অনুভূত হয়।
5. এইটা তার সাথে যদি আঘাতজনিত কোনো সমস্যায় জড়িত থাকে।
6. এই ব্যথার সাথে যদি জ্বর, দুর্বলতা, ক্ষুধামন্দা ও ওজন কমে যাওয়া এজাতীয় সমস্যা থাকে।
বাসায় প্রাথমিক চিকিৎসাঃ
যদি কোনো বিশেষ কারণ না থাকে তাহলে গ্ৰোয়িং পেইন কিছুদিন পর এমনিতেই ঠিক হয়ে যায়। তবে বাসায় কিছু ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে যাতে করে বাচ্চাদের আরাম বোধ হয়। রাতে বাচ্চাদের পা এবং হাত হালকা ম্যাসাজ করে দেয়া যেতে পারে। ব্যথাযুক্ত জায়গাগুলোতে গরম কাপড় বা গরম পানির বোতল দিয়ে সেঁক দেয়া যেতে পারে।
ব্যথা যদি আরো বেশি হয় বা কষ্টদায়ক হয় সেক্ষেত্রে প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে খাওয়া যেতে পারে।
হাত ও পায়ের কিছুই স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ আছে যেগুলো চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিয়মিত করা এই ব্যথার ক্ষেত্রে ভালো উন্নতি এনে দেয়।
শেষ কথাঃ
গ্ৰোয়িং পেইন বাচ্চাদের জন্য খুব একটা সমস্যার বিষয় নয়। তবে সুনির্দিষ্ট কারণ থাকলে এই ব্যথা নিয়ে সচেতন না থাকলে অনেক সময় সেটা দীর্ঘমেয়াদি ব্যথায় পরিণত হতে পারে। বাচ্চাদের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী ব্যথা কষ্টকর। তাই সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়ের জন্য গ্রোয়িং পেইন সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। সঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারলে অনেক ব্যথাই নির্মূল করা সম্ভব। ভালো থাকুক আমাদের বাচ্চারা।