প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৭ জুলাই ২০২০, মঙ্গলবার
চট্টগ্রাম মা, শিশু-ও জেনারেল হাসপাতালে পুরোদমে চলছে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা। গত ৭ জুন থেকে হাসপাতালটির ডেডিকেটেড কোভিড ইউনিটের কাজ শুরু হয়।
চট্টগ্রাম জেলায় প্রতিদিন বাড়ছে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। চট্টগ্রামের মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে কোভিড ডেডিকেটেড ইউনিট খোলার সিদ্ধান্ত নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রি-আইসোলেশন, আইসোলেশন এবং আইসিইউ নিয়ে কাজ করছে কোভিড ডেডিকেটেড ইউনিট।
ট্রায়াজ প্রি-আইসোলেশন ইউনিটের মেডিকেল অফিসার ডা. আফরা বিনতে মুহিত কোভিড ইউনিটে যোগদানের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন,
“চায়নার কোভিড ফাইটারদের দেখে ভাবতাম, আমি কবে এরকম সুযোগ পাবো? মেডিসিনের সিএ ডা. নির্ণয় দাদার একটা পোস্ট অনেক অনুপ্রেরণা জোগায়। আমি এখন ১৭ টা বেডের দায়িত্বে আছি। যেসব রোগীর ১৫ লিটারের কম অক্সিজেন প্রয়োজন, তারাই প্রি-আইসোলেশনে আসেন। এর বেশি অক্সিজেন প্রয়োজন হলে আইসোলেশন এ চিকিৎসা পান। নাইটে ডিউটি করতাম, ১২ ঘণ্টার শিফট। ১০ দিন ডিউটি, ১০ দিন কোয়ারেন্টাইন এবং ১০ দিন বাসায় – এই হচ্ছে আমাদের কাজের শিডিউল।”
প্রি-আইসোলেশন ও আইসোলেশন ইউনিট এ মোট ৩৪ টি বেড রয়েছে। এখানে দুই শিফটে ২৭ জন চিকিৎসক কাজ করছেন এবং প্রতি শিফটে আছেন ৫ জন নার্স। হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে আছে হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানুলা, যার মাধ্যমে রোগীকে ৫০ লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন সরবরাহ করা যায়।
গত ২৮ মার্চ, সাসপেক্টেড রোগী ভর্তি নেওয়ার মাধ্যমে চট্টগ্রাম মা, শিশু-ও জেনারেল হাসপাতালের কোভিড আইসিইউ ইউনিট কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দেয় কোভিড ইউনিটে কর্মরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। এ সম্পর্কে চট্টগ্রাম মা-ও-শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ও এডাল্ট আইসিইউ এর রেজিস্ট্রার ডা. সাইফ উদ্দিন আজাদ জানান,
“কার্ডিওলজিতে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে এক বছরের বেশি সময় ধরে এডাল্ট আইসিইউতে কর্মরত আছি। এ প্রতিষ্ঠানের সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক। মার্চ থেকে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হলেও প্রথম পজেটিভ রোগী ভর্তি হয় ২রা এপ্রিল। এছাড়াও এই মহামারীর শুরু থেকে সাসপেক্টেড রোগীদের আমরা চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। বর্তমানে আমাদের আইসিইউ চট্টগ্রামের অন্যতম ব্যস্ত এবং আধুনিক কোভিড ডেডিকেটেড আইসিইউ।”
এডাল্ট আইসিইউ, এইচডিইউ এর ১০ টি বেড, নতুন কোভিড ডেডিকেটেড ৫ টি আইসিইউসহ মোট ১৫ টি আইসিইউ বেডে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে চট্টগ্রাম মা, শিশু-ও জেনারেল হাসপাতালে। বর্তমানে এডাল্ট কোভিড ও নন কোভিড রোগীদের আইসিইউতে ৮ জন মেডিকেল অফিসার কর্মরত আছেন। এর আগে ২ জন কর্তব্যরত চিকিৎসক করোনা পজিটিভ হয়ে আইসোলেশনে যান। এ আইসিইউ’র মেডিকেল অফিসার ডা. সাজ্জাদ হোসেইন বলেন,
“চট্টগ্রামের বেসরকারি অন্যান্য যেকোন হাসপাতালের আগেই কোভিড সাসপেক্টেড রোগীদের আইসিইউ সাপোর্ট দিয়ে আসছি আমরা। আমাদের রোস্টার ডিউটি করতে হচ্ছে, এখানে আইসোলেশনে থাকার সুযোগ থাকছে না। প্রচুর রোগী পাচ্ছি আমরা, সিরিয়াল নিয়ে আইসিইউ খালি হওয়ার অপেক্ষা করছেন অনেকেই।”
সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান,
“অন্যান্য হাসপাতালগুলোর মতোই, অপ্রতুলতা ও সীমাবদ্ধতা আছে আমাদের এখানেও। এর মাঝে সাধ্যমতো রোগীদের সুস্থ করার চেষ্টা করছি আমরা।”
চট্টগ্রামে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সাথে বাড়ছে, আইসোলেশন বেড ও আইসিইউ এর চাহিদা। আইসিইউ কিংবা আইসোলেশন ওয়ার্ডের একটা সিটের জন্য সিরিয়াল দেওয়া আছে অসংখ্য রোগীর, অপেক্ষা একটা বেড খালি হওয়ার! সীমিত সুযোগে কাজ করে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম মা, শিশু-ও জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা। কেউ আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে আছেন, কেউ সুস্থ হয়ে আবার যোগদান করে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।