গতকাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীদের উপর আক্রমনের ঘটনার সুত্রপাত যেভাবে ঘটেছিল,তা সেই মেডিকেলর একজন শিক্ষার্থী প্রবাল সরকারের কাছ থেকে জানা গেল। প্রবাল সরকার লিখেছেন–
এক স্টার্নোক্লেইডোমাস্টয়েড মাসল ঘাড়ের দুইটা ট্রায়াঙ্গলকে আলাদা করেছে। যে আঘাতটা মাসলটার পিছনের অংশ ছিড়ে ঘাড়ের সারভাইকাল ভার্টিব্রাতে যেয়ে আঘাত করেছে, সেটা যদি আর এক ইঞ্চি আগে আঘাত করতো, তাহলে রাস্তা থেকে আমার ছোটভাইটার লাশটা তুলে আনতে হতো!
কি দোষ ছিল তার? আইসিইউতে শুয়ে আছে ঘাড়ে, মাথায়, চোখে ক্ষত নিয়ে। বাম হাতের কনুইয়ের কিছু টেন্ডন নেই, ডান পায়ে এমনই এক ক্ষত একই সাথে ছিড়ে গেছে টিবিয়াল আর্টারি ও টেণ্ডন। দোষ ছিল একটা। ৫৮ ব্যাচের প্রথম বর্ষের ছোটভাইরা কিছুদিন আগে যে ছিনতাইকারীদের হাতেনাতে ধরেছিল, সেই ছিনতাইকারীরা নাসিরাবাদ হোস্টেলে এসে রাতের বেলায় আক্রমণ করলে মেইন হোস্টেল থেকে সবার সাথে সেও বের হয় ছোটভাইদের রক্ষার জন্য। কিন্তু!! নাসিরাবাদের চার নাম্বার সেই গলির সামনে সরস্বতীপূজা চলছিল। পূজা শেষ, কিন্তু কিছু মাতাল মদ খেয়ে মাতলামি করছিল সাউন্ড সিস্টেমে। বুঝতে ভুল করেছিল সে, অমানুষ মাতালদের পাল্লায় কিভাবে যে সে পড়ে গিয়েছিল সবার অগোচরে, কেউই বুঝতে পারে নি।
মানুষ ছিল সেখানে, মাতাল চোর ছিনতাইকারী ছিল সেখানে। আর ছিল আমাদের রক্ষক পুলিশ, দুই দলের মাঝখানে। তাদের চোখের সামনে ছোটভাইটা আমার যখন একের পর এক চাপাতি আর ভাঙা মদের বোতল দিয়ে কোপ খেয়ে যাচ্ছিল, তারা ঠিকই চেয়ে চেয়ে দেখছিল। না বুঝতে দিচ্ছিল ওইপাশে কি ঘটছে, না তারা নিজেরা বাঁচাতে গিয়েছিল তাকে। হা হা হা!
কুপিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় যখন তাকে রাস্তায় ফেলে চলে যায়, তখন এক পুলিশ সদস্য বলে, “যাও, তোমাদের ভাইকে মেরে রাস্তায় ফেলে গেছে, নিয়ে আসো!” হাসপাতালে নেয়ার জন্য যখন পুলিশের ভ্যানটাই চেয়েছিল ছোটভাইরা, তখন আরেকজন বলে, “ডাক্তার তো কি হয়েছে।” পুলিশ প্রটেকশন দিয়েছিল ঠিকভাবেই, ছোটভাইটাকে কুপিয়ে রাস্তায় ফেলে সন্ত্রাসীদের নিরাপদে পালিয়ে যাওয়ার প্রটেকশন।
সমস্যা নেই ভাইয়েরা আমার। ধন্যবাদ আপনাদেরকে, নিজেদের চিনিয়ে দেবার জন্য। ছোটভাইটাকে বাঁচাতে দেন নি, বাঁচাতে পারেন নি। কিন্তু আমাদের উপর ঠিকই গুলি চালাতে একটুকুও হাত কাঁপেনি আপনাদের। ১৪ তারিখ ভালবাসা দিবসে আপনারা সবাই রাস্তায় ফুল বিলিয়েছিলেন, প্রতিদানে সম্মান দিতে চেয়েছিলাম, নেয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন নি। একদিন পর আপনাদের লাল গোলাপের বদলে নাহিদের তাজা লাল রক্ত উপহার দিলাম।
চোখের বদলে চোখ চাই আমি, রক্তের বদলে রক্ত। ছোটভাইয়ের রক্তের কসম কেটে বলছি, এই সন্ত্রাসীদের একটাকেও যদি চিনতে পারি, খুন করতেও হাত কাপবে না আমার। এর জন্যে কেউ আমাকে অমানুষ বললে বলুক, খুনি বললে বলুক। কিন্তু এই শূকরদের সাথে একই দেশে সহবাসের ফতোয়া আমি অস্বীকার করি।
মাফ করে দিস নাহিদ, কিছুই করতে পারলাম না তোর জন্য।
Vivek Bd