পদ্মা-মহানন্দা-পুনর্ভবার কোল ঘেঁষে গড়ে উঠা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ইতিহাসের পথ পরিক্রমায় কখনোই বাংলার শ্বাসত প্রতিবাদমুখর ঐতিহ্যের পথ থেকে বিচ্যুত হয়নি; বরং স্বদেশী ও ভিনদেশী সব রকমের শোষণ, নিপীড়ন ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রামে এই এলাকা স্বাধীনচেতা মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে বারবার। সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সংগঠিত নীল বিদ্রোহ ও সাঁওতাল বিদ্রোহ, পাকিস্তান আমলে নাচলের কৃষক বিদ্রোহ, বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, এমনকি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে স্বৈরাচার বিরোধী গণঅভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসী তাদের অধিকার সচেতন সত্তার প্রমান দিয়েছে। এই অঞ্চলকে শত্রুমুক্ত করতে মহান মুক্তিযুদ্ধে অসীম ভূমিকা রেখে শহীদ হয়েছিলেন বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর। জেলার ঐতিহাসিক ছোট সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন মুক্তিযুদ্ধের এই অকুতোভয় বীর।
আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কাঁসা, লাক্ষা, নকশীকাঁথা, গম্ভীরা গানসহ আরো বেশকিছু লোকশিল্পের জন্য হয়েছে সমাদৃত।
ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংষ্কৃতির সাথে সাথে শিক্ষার দিক থেকেও সুনাম রয়েছে অত্র জেলার। বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে অধ্যয়ন করছে জেলার শতশত মেধাবী শিক্ষার্থী। অঞ্চলভিত্তিক এই মেডিকেল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থীদের সংগঠিত করে মানবতার তাগিদে হাতে হাত মিলিয়ে চলার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে জেলার ছাত্রসমাজের জনপ্রিয় মুখ ডা. সাইফ জামান আনন্দ গড়ে তুলেন ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন।’ বর্তমানে এসোসিয়েশনটির সদস্য সংখ্যা প্রায় পাঁচ শতাধিক।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী এবং গঠনতন্ত্র মোতাবেক সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। গতকাল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শতাধিক চিকিৎসক এবং বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি মেডিকেল কলেজ থেকে আগত এসোসিয়েশনের সদস্যবৃন্দের উপস্থিতিতে ফুড ক্লাব পার্টি সেন্টারে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ডা. সাইফ জামান আনন্দ। সম্মেলনের শুরুতেই এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন ডা. কাজী শামিম হোসেন, জেলা বিএমএ সভাপতি ডা. দুররুল হোদা, জেলা স্বাচিপের সভাপতি ডা. আব্দুস সালাম এবং জেলা বিএমএ ও স্বাচিপের সাধারণ সম্পাদক ডা. গোলাম রাব্বানীকে। এরপর গঠনতন্ত্রের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠিত হয়। মোড়ক উন্মোচন করেন সিভিল সার্জন ডা. কাজী শামীম হোসেন। মোড়ক উন্মোচনের পরে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ এবং এসোসিয়েশনের উপস্থিত সদস্যদের প্রত্যেকের হাতে গঠনতন্ত্রের কপি পৌঁছে দেয়া হয়।
সিভিল সার্জন ডা. কাজী শামিম হোসেন তাঁর বক্তৃতায় বলেন, “চাঁপাইনবাবগঞ্জ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন অন্য যে কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে একটি রোল মডেল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ইতিমধ্যে এসোসিয়েশনটি জেলার সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। ভবিষ্যতে সংগঠনটি পরিচালনার ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্রটি একটি সুন্দর দিক নির্দেশনা হিসেবে ভূমিকা পালন করবে।”
জেলা বিএমএ সভাপতি ডা. দুররুল হোদা বলেন, ” ডা. সাইফ জামান আনন্দ এর নেতৃত্ব যে এসোসিয়েশনটি গঠিত হয়েছিল বর্তমানে সেটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষের কাছে একটি আস্থার ঠিকানা হিসেবে পরিণত হয়েছ।”
জেলা বিএমএ এর সাধারণ সম্পাদক ডা. গোলাম রাব্বানি বক্তৃতায় উল্লেখ করেন, ” এসোসিয়েশনটি দিন দিন মেডিকেল স্টুডেন্টদের কাছে একটি স্বপ্নের সংগঠণে পরিণত হয়েছে।” উপস্থিত অতিথিবৃন্দ নিজ নিজ অবস্থান থেকে এসোসিয়েশনটির পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
জেলার চিকিৎসক অভিভাবকদের উপস্থিতিতে এসোসিয়েশনের সদস্যবৃন্দ সর্বসম্মতিক্রমে যে কমিটি প্রস্তাব করেন সেটি অনুমোদনের জন্য স্বাক্ষর করেন জেলা বিএমএ এর সম্মানিত সভাপতি ডা. দুররুল হোদা, সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক ডা. গোলাম রাব্বানী এবং এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সদ্য বিদায়ী আহ্বায়ক ডা. সাইফ জামান আনন্দ। নবগঠিত কমিটির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী মোঃ আতিকুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন বারিন্দ মেডিকেল কলেজের ৫ম বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী ওয়াহিদ আনসারী। নবগঠিত কমিটির নেতৃবৃন্দ ১ মাসের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার এবং পূর্ববর্তী কমিটির সাফল্য অব্যাহত রাখার অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন।