হেইল স্মিথ, ১৭ বছর এই ফরাসী নারি হঠাৎ করে একদিন খাওয়া বন্ধ করে দেন। বলে থাকেন মৃত মানুষের খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তারপরে বলতে থাকেন আমি অস্তিত্বহীন, আমি মৃত, আমার শরিরে পচন ধরছে। এমনকি তিনি পচে গলে জাওয়া ভিসেরার গন্ধ পাওয়া শুরু করেন!
এটা একটা বিরল ধরনের মানসিক সমস্যা। এই ধরনের রোগীরা এমনকি কবরস্থানে রাত কাটায়। মেডিকেল সাইন্সে এই রোগকে Walking Corpse Sysdrome বলে।
… … …
ক্রেন ব্রাইনি, ৫৪ বছর বয়সী এই আমেরিকান নারী হঠাৎ করে একদিন তার বাম হাত দিয়ে সবার সামনে তার জামার বোতাম খোলা শুরু করেন আর ডান হাত দিয়ে আটকাতে থাকেন। কিছু দিন পরে তিনি আবিষ্কার করেন যে রেস্টুরেন্টে সারিবদ্ধ টেবিলের পাশ দিয়ে হেটে জাওয়ার সময় তিনি মানুষে খাবার তুলে নিচ্ছেন। জদিও তিনি জামা খোলা আর খাবার চুরি করার ব্যাপারে বারবার বলতে থাকেন যে তিনি ইচ্ছা করে করেন না।
এটাও একটা বিরল ধরনের রোগ যা ক্রেন ব্রাইনির একটা ব্রেইন অপারেশন করার পরে শুরু হয়। এই রোগে হাত রোগীর নিজের মস্তিস্কের কন্ট্রোলে থাকে না। মেডিকেল সাইন্সে এই রোগকে Alien Hand Sysdrome বলে।
… … …
হ্যারি ইস্টলাক, ১০ বছর বয়স থেকে তিনি এক অদ্ভুত সমস্যায় ভুগতে থাকেন। তার শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো কেমন জেন ভারি হতে থাকে। পরে অনেক হাসপাতাল আর ডাক্তার দেখানোর পরে আবিষ্কার করা হয় যে হ্যারির মাংশপেশীগুলো ধীর ধীরে পাথরে পরিনত হচ্ছে। তিনি ৪০ বছর বেঁচে ছিলেন। মৃতুর আগে তার শরীর প্রায় পাথরে পরিনত হয়ে যায়; তার ঠোট ছাড়া আর কিছুই নাড়াতে পারতেন না।
তিনি তার শরীর গবেষণার জন্য দান করে যান। তার পাথরের শরীর ফিলাডেলফিয়ার মাটার মিউজিয়ামে রাখা আছে। মেডিকেল সাইন্সে এই রোগকে Stone Man Syndrome বলে।
… … …
সময়টা ১৯৪১ সাল। মিসেস আস্ট্রাইল, নরওয়ের এই ভদ্রমহিলা হঠাৎ মাথায় আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। সুস্থ হওয়ার পরে যখন তিনি কথা বলা শুরু করেন তখন তার আত্মীয় স্বজন সবাই হতবাক হয়ে যায়। আস্ট্রাইল তো রীতিমত জার্মান উচ্চারণে কথা বলছেন! আস্ট্রাইল তো কোনদিন জার্মানিতে যান নি কিনবা জার্মান শিখেন নি!
সারা কলিন, আমেরিকান এই ভদ্রমহিলা অনেক দিন থেকে মাথা ব্যথা জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। একদিন তীব্র মাথা ব্যাথা হওয়ার পরে তিনি চাইনিজ উচ্চারণে কথা বলা শুরু করেন জদিও তার কোনদিন চায়নায় যাওয়া হয় নি। ২০১৩ সালে এই সারা কলিনকে নিয়ে BBC প্রায় এক ঘণ্টার একটা ডকুমেন্টারি প্রকাশ করে।
এই ধরনে সম্যসা ১৯০৭ সালে প্রথম রিপোর্ট করা হলেও ২০১৬ সাল পর্যন্ত মোট ৬৩ টি কেস রেকর্ড করা হয়েছে। হঠাৎ করে ভিন দেশি উচ্চারণে কথা বলা শুরু হওয়াকে মেডিকেল সাইন্সের ভাষায় Foreign Language Accent Syndrome বলে।
লিখেছেন:
ডা. মোঃ কামরুজ্জামান
উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল