একটি সাহসের গল্প!
এটি আমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর প্রায় এক বছরের ব্যবধানে ঘটে যাওয়া ভিন্ন ভিন্ন কিছু ঘটনার সার সংক্ষেপ :
প্রেক্ষাপট ১: আগস্ট ২০১৪ -জুন ২০১৫
একজন স্থানীয় মাদকসেবী যার ডাকনাম টাইগার প্রায়শই ইমার্জেন্সী এবং আউটডোর এ চিকিৎসকদের থেকে ফ্রি ঔষধ, প্যাড,কলম নিয়ে যেত। কেউ দিতে না চাইলে সে কোমর থেকে ছুরি এবং একবার পিস্তল বের করে ভয় দেখাত। এমনকি একজন প্রেগন্যান্ট ডাক্তারও তার এই আক্রোশ এর শিকার হয়।ভয়ে সবাই এর সব দাবী মেনেই নিত।এভাবেই ১০ মাস পার হয় নবনিযুক্ত চিকিৎসকদের এই সন্ত্রাসীদের মানিয়ে চলতে চলতে।উর্ধ্বমহলে অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি। এরপর এখানেই নতুন একজন সাহসী চিকিৎসক এর পদায়ন হয় যার জন্যই এই প্রেক্ষাপট ২ এর সৃষ্টি।
প্রেক্ষাপট ২: জুলাই ২০১৫-চলমান
এই সাহসী ভাইটি, যিনি আমার চোখে আমাদের একজন রোলমডেল, তার জরুরী বিভাগে ডিউটি চলছিল।উনার সেটাই প্রথম ইমার্জেন্সী ডিউটি। যথারীতি টাইগার নামক মহামানব(!)টির আগমন ঘটে। সে তখন একেবারে পাঁড় মাতাল অবস্থায়। সে ইমার্জেন্সীতে ঢুকেই সেখানে সবাইকে অশ্লীল গালাগালি শুরু করে। ভাইয়া প্রথমে চুপ করে শুনে যান। এরপর যখন ধৈর্য এর সীমা অতিক্রম করে, তখন তিনি উঠে তাকে জোরেশোরে প্রতিবাদ করেন। উপস্থিত অন্যেরা তাকে বিরত করার চেষ্টা করে।কিন্তু তিনি তার প্রতিবাদ করতেই থাকেন। এক পর্যায়ে টাইগার ধারালো অস্ত্র বের করে আঘাত করার জন্য। ভাইয়া ভয় না পেয়ে বলেন, আয় মার দেখি। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এই যে, টাইগার একবার ডানে একবার বামে অস্ত্র ঘুরাতে থাকে, একবারও আঘাত করেনা। একপর্যায়ে ভাইয়া সবাইকে বলে হাসপাতালের মেইন গেইট বন্ধ করতে যাতে সে পালাতে না পারে। এরপর একে একে ইউএইচ এফ পিও স্যার, আর এম ও এবং শেষে থানায় ফোন দিয়ে জানান যে, তিনি এখনই কর্মস্থল ত্যাগ করবেন যদি না তাকে সেই মূহুর্তে নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করা হয়।থানা থেকে দ্রূত পুলিশ আসে। ভাইয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাস দেয়া হয়।পরবর্তীতে সেই টাইগারের অভিভাবকদের ডেকে বিচারও করা হয়।এবং টাইগার নামক যন্ত্রনার অবসান হয়।
শিক্ষা:
একজন একজন করে এভাবে সাহসী হলে আমরা সম্মিলিতভাবে আমাদের শক্তিকে আরো বাড়াতে পারব।হয়তো একদিন আমরা আমাদের হারানো গৌরব ফিরে পাব!
বি.দ্র. আমি গ্রামের একজন দরিদ্র সরকারী ডাকতর মাত্র(গ্রামে চাকরী করতে করতে নিজের ডাক্তার নামক স্মার্ট উপাধি ভুলতে বসেছি,তাই ডাকতর) মাত্র। সুতরাং যে কোন ব্যাকরণগত বা ভাষাগত ভূল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
লেখকঃসৈয়দ মোহাম্মদ শাহরিয়ার
পরিমার্জনা: বনফুল