২০১৫ সালে চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন এমন কয়েকটি উপজেলা ।
জুলাই-হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, লালমনিরহাট
জুন-জামালপুর সদর হাসপাতাল
মে-ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চাঁদপুর
টুঙ্গিপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, গোপালগঞ্জ
মার্চ-টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কক্সবাজার
ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ময়মনসিংহ
ফেব্রুয়ারি-বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, দিনাজপুর
শিবগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চাঁপাই নবাবগঞ্জ
কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নোয়াখালী
গতকাল (৫/৬/২০১৫) শিক্ষা দেয়া হলো জনগণের একমাত্র শত্রু ডাক্তারকে। বারবার কেন এমন হয় তার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দিতে দিতে ক্লান্ত। এবার শুনুন প্রত্যক্ষদর্শী একজন সাধারণ মানুষের বক্তব্য এবং ঐ উপজেলায় কাজ করেন একজন চিকিৎসকের আত্মীয়ার ভাষ্যে গতকাল কী হয়েছিল-
“দিনশেষে আমার এক বন্ধু মন্তব্য করলো – ‘আজকে হাতীবান্ধায় স্মরণকালের সেরা উত্তপ্ত দিন গেল’। উত্তপ্ত বলতে আমার বন্ধুটি সূর্যের প্রখর উত্তাপ বোঝায়নি। সে বুঝিয়েছে অরাজকতা, অস্থিতিশীলতা। আজকের অস্থিতিশীল দিনটি কয়েকজন নিরীহ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, গুরুতর আহত করেছে কয়েকজনকে। এরকম দিন যেন আর কখনো না আসে।
ঘটনার সূত্রপাত আমি নিজের চোখে দেখিনি। অনেকের কাছে শুনে যা মনে হয়েছে, তার সারমর্ম হলো-আলমগীর নামের একজন যুবক আজ সকালের দিকে মেডিকেলের জরুরী বিভাগে যায়। কেউ কেউ বলছে, তাঁকে তাৎক্ষণিক সেবা দেয়া হয়নি। কেউ বলছে ডাক্তার ছিল না। আবার কারো কারো মতে, সে জরুরী বিভাগে গিয়েই স্ট্রোকের দরুন মারা যায়। চিকিৎসা দিয়ে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়নি। কোনটা সত্য কিংবা কোনটা সত্য নয়, বুঝতে পারছি না।
কিন্তু এরপর যা ঘটলো, সেটা খুবই অপ্রত্যাশিত ঘটনা। আমি তখন মেডিকেলের মোড়ে ছিলাম। হরেক রকম ইন্ধনে কয়েক’শ লোক উপজেলার একমাত্র সরকারি স্বাস্থ কমপ্লেক্সে প্রচণ্ড ভাংচুর চালায়। মেডিকেলে কর্মরত চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেদম মারধোর করে। কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদে কর্মরত আমাদের শান্ত-শিষ্ট ধীমান ভাইয়ের আজকে মেডিকেলে ডিউটি ছিল না। তবু তিনি মেডিকেলে গিয়েছিলেন। অমানুষিক মারধোরে তাঁর মাথা ফেটে যায়। সর্বশেষ যা শুনলাম, তাঁর আঘাত গুরুতর। এখন রংপুরে চিকিৎসাধীন আছেন।
শুধু তাই নয়, উন্মত্ত কিছু লোক হাতীবান্ধা উপজেলার একমাত্র প্যাথলজি এবং একমাত্র ক্লিনিকও ভাংচুর করে। এগুলোর দামী দামী যন্ত্রাংশের কোনটিই এখন আর আস্ত নেই। এছাড়া একজন ডাক্তারের বাসায়ও লুটপাট চালানো হয়।
রাত সাড়ে নয়টায় হাতীবান্ধা হাটখোলায় একজন লোকের সাথে কথা হলো। তিনি বললেন, তার গ্রামের পানিতে ডুবে মৃতপ্রায় একটি শিশুকে নিয়ে তারা কয়েকজন মিলে মেডিকেলে গিয়েছিলেন। কিন্তু মেডিকেলে তখন এলোপাথাড়ি ভাংচুর এবং ডাক্তারদের মারধোর চলছে। অগত্যা তারা গেলেন একতা ক্লিনিকে। সেটাও ভেঙ্গেচুরে একাকার করছে একদল লোক। তারা আবার মেডিকেলে ফিরে এলেন। ততোক্ষণে অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে গেছে। মেডিকেলে কর্মরত হামিদ নামের একজন লোক পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে তাকে বাচ্চাটাকে দেখানো হলো। তিনি পরীক্ষা করে বললেন, বাচ্চাটি একটু আগে মারা গেছে। তার নাম জাহিদ। জাহিদের মৃত্যুর জন্য এখন কাকে দায়ী করবো?
হায়রে মানুষ! একজনের মৃত্যুর জন্য সন্দেহের বশবর্তী হয়ে তোমরা আরেকজনকে মেরে ফেলার বন্দোবস্ত করলে? তাতেও তৃপ্ত না হয়ে আরও একজন ডাক্তারকে ঠেলে দিলে মৃত্যুর দিকে?
আমার হিশাব সরল। আলমগীর নামের যুবকের মৃত্যুর ব্যপারটি তদন্ত করা হতো। জরুরী বিভাগে কর্মরত ডাক্তারের অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যেতো। (ইতোমধ্যে কোনরকম তদন্ত ছাড়াই দুজন ডাক্তারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে) কিন্তু এসব ভাংচুর-মারধোর কেন? এর ফলাফল কী আসলো? একটি শিশুর মৃত্যু, একজনকে গুরুতর জখম করাসহ আরো কয়েকজনকে আহত করা, সরকারি-বেসরকারি সম্পদ বিনষ্ট করা ছাড়া আর কী পেয়েছি আমরা?
বিগত কয়েকমাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ডাক্তারদের মারধোর করার ঘটনা পত্রিকায় পড়েছি। কোনটির বিচার হয়েছে, এরকম কিছু চোখে পড়েনি। এগুলোর কোন বিচার হয়নি বলেই বোধহয় দেশের সর্বত্র এখন এই অবস্থা।
বিচারহীনতার এই সংস্কৃতির অবসান চাই, স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই”-Anisur Rahman Kiron স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া যুবকের বক্তব্য(মূল লেখার বানান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে)।
আমার ইনবক্সে আসা ঐ উপজেলায় কর্মকরত একজন মেডিকেল অফিসারের সহধর্মিনীর বক্তব্য-“ভাইয়া, আমার স্বামীর কর্মস্থল হাতিবান্ধা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তো খুব খারাপ অবস্থা। গতকাল সকালে একজন রোগির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পুরো হাসপাতালে ভাংচুর, আউটডোর এর মহিলা ডাক্তারের উপর হামলা করার চেষ্টা, মহিলা ডাক্তারকে বাঁচাতে ওয়ার্ডের বয় এর হেড ইঞ্জুরি হয়। অন্যান্য ওয়ার্ডবয়দেরও পিটানো হয়েছে। বিকেল পর্যন্ত অবস্থা অপরিবর্তনীয় ছিল। তারপর ইফতারের আগে পুলিশ, সি,এস, ই,এন,ও এসে মিটিং করেন। তারপর পরিস্থিতি সামাল দিতে আউটডোর এর এই মহিলা ডাক্তারকে সাময়িক বরখাস্ত করেন যদিও আপুর কোনো দোষই ছিল না”।
ইমার্জেন্সিতে বুক ব্যথার রোগীর জন্য ইসিজি মেশিন নেই, তীব্র পেট ব্যথার রোগীর জন্য জরুরী এক্সরে অচল অথবা গর্ভবতি মহিলা যার ৯ মাস পূর্ণ হবার আগেই রক্ত-পানি ভাংছে তাঁর জন্য দামি আল্ট্রাসনোগ্রাফ মেশিন থাকলে সেটা চালানো হয় না, লো ভল্টেজে শ্বাসকষ্টের রোগীর নেবুলাইজার চলেনা, পানিতে ডোবা রোগীর জন্য একটা সাকার নাই, কাটা-ছেড়া হালকা জখমের রোগীর জন্য স্টেরিলাইজার নেই যা দিয়ে ফোরসেপ সিজার জীবাণুমুক্ত করা হবে, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তো দুরস্ত। আছে শুধু ডাক্তার। শোপিস ডাক্তার যে ইমার্জেন্সির শোভাবর্ধন করে আর পার্টটাইম উত্তেজিত জনতার চর থাপ্পর কিল ঘুষি হুমকি ধামকি খায়।
এই লেখার কোন উপসংহার নেই, আগস্টে, সেপ্টম্বরে অথবা নভেম্বরে এমনও হতে পারে পরশু দিন নিজের ডিউটির সময় আমার রক্তে উপসংহার লেখা হবে। অভিনন্দন-to whom it may concern. (সব কথা এখন লেখা যায় না)।
* DOCTORS SAFETY নিয়ে আমি একটা প্রজেক্ট বানিয়েছিলাম, যে যে জায়গায় ধর্না দিতে হয় দিয়েছি ফলাফল প্রজেক্টের একটা দুটো শো অফের সেগমেন্ট হয়ত তাঁরা বাস্তবায়ন করবে, আর আমরা অপেক্ষা করবো আবার কখন আক্রান্ত হব।
ডা মোহিব নীরব
মাঝে মাঝে মনে হয় সব কুপাইয়া মাইরা ফেলি, কবে যে আমাকে মাইরা যাবে। দেশের কিছু মানুষের চিকিৎসা পাওয়ার কোনো যোগ্যতাই নাই।
মাঝে মাঝে মনে হয় সব কুপাইয়া মাইরা ফেলি, কবে যে আমাকে মাইরা যাবে। দেশের কিছু মানুষের চিকিৎসা পাওয়ার কোনো যোগ্যতাই নাই।
No safe place for doctors…