শজিমেকহা’র ৪ জন ইন্টার্ন চিকিতসকদের ৬ মাস স্থগিতাদেশ এবং ৪টি ভিন্ন মেডিকেলে বাকী ট্রেনিং সম্পন্নের নির্দেশ প্রসঙ্গে, লিখেছেন ডা. মেহেদী হাসান বিপ্লব।
১। শজিমেক এর সদ্য ঘটনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আস্ফালন অহেতুক ছিলোনা সেটা তিনি ইতোমধ্যে প্রমাণ করেছেন।এতক্ষনে খবরটি সবাই জানেন।
২। বিগত ২/৩ বছরে সারা দেশে অসংখ্য চিকিৎসক নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী কখনো উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মনে করতে পারছিনা।তদন্ত কমিটিও কখনো গঠিত হয়নি এবং সে ঘটনাগুলোর কোন সুরহাও হয়নি।তাতে অবশ্য আপামর চিকিৎসক সমাজ বা এর নেতৃবৃন্দের তেমন কোন সংগঠিত তৎপরতা চোখে পড়েনি।
২৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পুরো ঘটনা কখনো বোঝাতে পারেনা।এর আগে ও পরের ব্যাপার যাচাই করেই সিদ্ধান্তে আসতে হবে।
কিন্তু ২ জন স্বনামধন্য চিকিৎসক ও চিকিৎসক নেতার সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি ঠিক সেররকম রিপোর্টই দিয়েছেন যেরকমটা দিলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দিল খুশ হয়।এর পেছনের রহস্য কাওকে ব্যাখ্যা করার কোন প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে হয়না।
৩। কিছুদিন আগে এক সদর হাসপাতালে আমাদের এক জুনিয়র ছোটভাই অহেতুক রোগীর আক্রমণের শিকার হন নৈশকালীন কর্তব্য পালনের সময়।ফোনে তার সাথে বিএমএ ও স্বাচিপের এক প্রভাবশালী নেতা মামলা না করতে অনুরোধ করেন(পড়ুন আদেশ),আক্রমণকারী স্থানীয় প্রতিমন্ত্রীর আত্নীয় বলে কথা!
সেখানকার ভিডিও ফুটেজ দেখে কোন নেতা বা মন্ত্রীর মানবতার দন্ড উত্থিত হয়নি।স্বপ্রণোদিত হবার খায়েশ কোন আদালতেরও হয়নি!কারণ আর কিছুই না,আক্রমণের শিকার একজন সামান্য চিকিৎসক!মন্ত্রী বা এমপির আত্নীয় কেউ নন।
৪। গতকাল রাতে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে একজন কনসালট্যান্টকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়।তিনি এখন হাসপাতালে ভর্তি।স্থানীয় বিএমএ দুজনের গ্রেপ্তারের খবর নিশ্চিৎ করেছেন।
৫। কয়েকমাস পূর্বে সাতক্ষীরার শম্পারানীর ঘটনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ওসিকে ক্লোজ করা হয়েছিলো(যদিও আমি মনে করি ক্লোজ/বদলী করা কখনো শাস্তি হতে পারেনা) এবং লেনিন ভাইয়ের স্ট্যাটাসের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যেখানে চিকিৎসক লাঞ্চনার ঘটনা ঘটবে সেখানে আর চিকিৎসক পদায়ন করা হবে না।আমরা এখনো পর্যন্ত এটার বাস্তব কোন প্রতিফলন দেখতে পাইনি।এ ব্যাপারে লেনিন ভাইয়ের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
৬। চিকিৎসকরা যেরকম আতঙ্ক ও হতাশায় ডুবে যাচ্ছেন তাতে ভবিষ্যতে দেশের চিকিৎসা সেবার জন্য অশনিসংকেত। চিকিৎসাব্যবস্থার উপর জনগনের আস্থা নষ্ট করে দেশের সবচেয়ে সফল (সকল প্রশংসা ও পুরষ্কার স্বাস্থ্য খাতের কল্যানেই পেয়েছে বাংলাদেশ) এ খাতকে ধ্বংস করে পাশ্ববর্তী দেশে হেলথ ট্যুরিজম বৃদ্ধির চক্রান্তে গনমাধ্যম সহ আর কারা কারা জড়িত রয়েছেন তা এখনি খুঁজে বের করা দরকার।
৭। শজিমেক ইন্টার্নরা স্বেচ্ছা অবসরের ঘোষনা দিয়েছে।দেশের অনেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ণরা এর সাথে একাত্নতা ঘোষনা করে আন্দোলনে সামিল হবে।পদে পদে সিনিয়র চিকিৎসক ও নেতারা বাধা প্রদান করবেন ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করবেন।এসব পুরোনো কথা।কিন্তু এগুলোকে অতিক্রম করে আমরা আমাদের পেশার মর্যাদা রক্ষা করে দেশকে ভয়াবহ পরিণতির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য এ আন্দোলনকে সফল করতে পারবো কিনা সেটা জুনিয়রদের হাতেই।সিনিয়র কারো সাথে কোন আলোচনা দরকার নেই।তাই করতে হবে যা পরিস্থিতির দাবী।
৮। সিনিয়রদের উদ্দেশ্যে একটাই কথা বলবো।নগর পুড়ছে অনেকদিন থেকেই,দেবালয় কিন্তু এড়াবে না,তার নমুনা অলরেডি আপনারা দেখতে পাচ্ছেন।ফরিদপুরে কাল কনসালট্যান্ট মার খেয়েছেন,কিছুদিন আগে ঢাকা শিশু হাসপাতালে এক সহকারী অধ্যাপক লাঞ্চিত হয়েছেন।কে জানে কাল আপনি হবেন না!
ভয় দেখাতে আসবেন না কেউ।আমরা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক।পদ, পোস্ট হারানোর বা ভবিষ্যতে না পাবার ভয় কোনকালেই পাইনি।
সিস্টেম বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন কখনোই সরকার বিরোধী নয়।
যদি লক্ষ্য থাকে অটুট,বিশ্বাস হৃদয়ে,
হবেই হবে দেখা,দেখা হবে বিজয়ে।
জয় বাংলা,জয় বঙ্গবন্ধু।
লেখক ঃ ডা. মেহেদী হাসান বিপ্লব, Central Councillor-Bangladesh Medical Association