গত ১৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১০টার দিকে বিজয় দিবস উদযাপনের প্রাক্কালে ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৩য় তলা কেবিন ব্লকে দায়িত্বপালনরত অবস্থায় অনারারি মেডিকেল অফিসার ডাঃ মাহফুজ,৬নং ওয়ার্ডে ডাঃ হাসান রোগীর আত্মীয়স্বজন কর্তৃক প্রহৃত হয়েছেন ।
কর্তব্যরত চিকিত্সক ও সেবিকাদের সাক্ষ্য থেকে জানা যায়, ৩ বছরের একটি শিশু ১৫ তারিখ সকালে হেমাটোলজি বিভাগে ভর্তি হয় । মারাত্মক পর্যায়ের রক্তশূণ্যতা ও জ্বর নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীকে বিভাগীয় প্রধান দুরারোগ্য লিউকিমিয়া , এক ধরনের ব্লাড ক্যান্সার ,with septicaemia with severe anaemia বলে সন্দেহ করেন । রক্তের হিমোগ্লোবিন পাওয়া গেল ১.৩ গ্রাম/ডে.লি. যা থেকে হার্ট ফেইলিওর হতে পারে । অণুচক্রিকা মাত্র ৯০০০/cmm যা থেকে যেকোন সময় মারাত্মক রক্তক্ষরণ হতে পারে যা নিয়ন্ত্রণ অযোগ্য । যেকোন সময় বাচ্চার মৃত্যু হতে পারে , তবে এখনি রক্ত দিতে পারলে হয়ত আপাতত বেঁচে যেতে পারে । যদিও এই রোগে সংক্রমণে মৃত্যুর হার অনেক । তাই নানারকম আশঙ্কা ব্যক্ত করে অধ্যাপক স্যার রোগীর বাবা মাকে মানসিকভাবে শক্ত থেকে চিকিত্সা চালিয়ে যেতে বললেন । সকালেই একবার রক্ত দেয়া সম্ভব হয় । রাতে ২য় দফা রক্ত দেয়ার আগে আগে রোগির অবস্থার হঠাত্ অবনতি হয় ।
ডাঃ মাহফুজ সাথে সাথে রোগিকে চেক করেই বুঝে নেন হার্ট ফেইলিওর । শুরু হয়ে যায় কার্ডিয়াক মেসেজ ও ব্যাগ মাস্ক ব্রেদিং । ICU, EMO, REGISTRAR কে জানানো হয় ও ICU তে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয় । অথচ হাসপাতালে ICU BED খালি ছিল না । কিছুক্ষণের মধ্যে registrar এসে উপস্থিত হন । কিন্তু ততক্ষণে নিয়ন্ত্রণ অযোগ্য রক্তক্ষরণে বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে । সারাদিনে এই রোগির লোকজন কয়েকজন ডাঃ ও নার্সের সাথে দুর্ব্যবহার করেছে । বাচ্চা অসুস্থ , তাই এটুকু আমরা ইচ্ছাবিরুদ্ধভাবে মেনে নিই ।
মৃত্যুর ঘন্টাখানেকের মধ্যে ২০-৩০ জন লোক লাঠিসোটা নিয়ে হাসপাতাল আক্রমণ করে । গার্ডদের মারধর করে হাসপাতালে ঢুকে ডাক্তারদের খুঁজতে থাকে । ডাঃ মাহফুজ ও ডাঃ হাসান (সার্জারি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিত্সক , এই রোগির সাথে কোনভাবেই সংশ্লিষ্ট নন) শারীরিকভাবে আক্রান্ত হন । অন্যরা লুকিয়ে আত্মরক্ষা করেন । হোস্টেলেও হামলা হয় । ৩০০গজ দূরের ফাঁড়ি থেকে পুলিশ আসতে ১ঘন্টা লেগে যায় । ৩জন পুলিশ এসে দেখেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে । তাঁরা ফিরে গিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে আসেন । ততক্ষণে ২ঘন্টা পেরিয়ে গেছে ।
উল্লেখ্য , রাতে মাত্র ৬জন ডাঃ ৫৫০ শয্যার হাসপাতালের দায়িত্বে থাকেন ।চরম চিকিত্সক সংকটে যেকোন সময় পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে জানা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট চিকিত্সক নিয়োগে কোন পদক্ষেপ নেয়নি । এই অবস্থায় অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে ও যথেষ্ট চিকিত্সক নিয়োগের দাবিতে এবং কর্মস্থলে নিরাপত্তার দাবিতে আগামীকাল ১৮ ডিসেম্বর থেকে হাসপাতালের চিকিত্সকেরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি আহ্বান করেছেন । তবে রোগিদের স্বার্থে জরুরি চিকিত্সা অব্যাহত থাকবে।