বুধবার, ০৯ এপ্রিল, ২০২৫
গতকাল মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) কক্সবাজারের কুতুবদিয়া থেকে উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশ্যে স্পিডবোটে যাত্রা করা এক প্রসূতি স্পিডবোটেই সন্তান প্রসব করেন। কাকতালীয়ভাবে স্পিডবোটে এক চিকিৎসক থাকায় প্রসূতিকে কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি।
বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে পেকুয়ার মগনামা ঘাটের কাছে হঠাৎ করেই শুরু হয় প্রসববেদনা। আর ঠিক তখনই কাকতালীয়ভাবে স্পিডবোটে উপস্থিত ছিলেন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী পরিচালক ও চিকিৎসক ডা. সৈকত বড়ুয়া। প্রশাসনিক কাজ শেষে তিনি ফিরছিলেন মহেশখালীতে। ছিলেন আরও দুই সহকর্মী।
“আমি বুঝতেই পারিনি এমন একজন মুমূর্ষু রোগী বোটে রয়েছেন,” বলেন ডা. সৈকত। “বোটে ওঠার কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রসববেদনা শুরু হলে পাশে থাকা দাই মা এবং মায়ের চিৎকারে বিষয়টি স্পষ্ট হয়।”
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ডা. সৈকতের নির্দেশে বোটটি মগনামা ঘাটে ভেড়ানো হয়। যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন তিনি এবং দাই মা। আধুনিক কোনো যন্ত্রপাতি ছিল না, ছিল শুধু মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ ও মানবিকতা। যা কিছু ছিল হাতের কাছে—কাথা, কাপড়, হ্যান্ড স্যানিটাইজার—তা দিয়েই নতুন শিশুর পৃথিবীতে আগমনের আয়োজন করেন তারা।
ডা. সৈকত বলেন, “আমি কর্ড কেটে দেই, নবজাতককে সুরক্ষা দেই, মায়ের ভাইটালস চেক করি এবং নিশ্চিত হই যে মা ও নবজাতক ঝুঁকিমুক্ত।” পরবর্তীতে মা ও শিশুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় স্থানীয় হাসপাতালে।
এই ঘটনাটি শুধু একটি চিকিৎসা নয়, বরং মানবতার এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত। কিন্তু এর পেছনে উঠে আসে একটি বড় প্রশ্ন—বাংলাদেশের উপকূলীয় দ্বীপ অঞ্চলে এমন পরিস্থিতিতে কাদের ভরসা করবেন মানুষ?
স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের নেতা মাহবুবুর রহমান বলেন, “দ্বীপাঞ্চলে যেখানে হাসপাতাল নেই, সড়ক নেই, সেখানে ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স না থাকা এক রকম অবহেলা। সরকারকে এখনই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।”
ডা. সৈকত বড়ুয়ার আবেদন, “প্রতিটি দ্বীপ উপজেলায় যেন প্রশিক্ষিত প্যারামেডিক টিম ও অন্তত দুটি ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স থাকে। সাগর পাড়ি দিয়ে রোগী আসা মানে জীবন-মৃত্যুর সীমানা অতিক্রম করা। সেখানে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে, প্রতিটি প্রাণই মূল্যবান।”
প্ল্যাটফর্ম/এমইউএএস