দিনাজপুরের ৫০শয্যার বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ২ জন। এদের একজন ডা. সমরেশ দাশ এবং ডা. আফরোজ সুলতানা লুনা। চিকিৎসক সংকট থাকেলও দুই চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা সেবা স্বাভাবিক রাখতে প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু গত বুধবার সড়ক দুর্ঘটনায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সমরেশ দাশ আহত হয় এবং ডা. আফরোজ সুলতানা লুনা সন্তানসম্ভাবা হওয়ার কারণে মাঝে মাঝে শরীরের জটিলতা দেখা দিচ্ছে। দুজনের ছুটি নেওয়ার মতো পরিস্থিতি থাকলেও উপজেলার ৪ লাখ লোকের কথা চিন্তা করে অসুস্থ শরীরের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা দিয়ে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। তাই দুই চিকিৎসক অসুস্থ থাকলেও থেমে থাকেনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সমরেশ দাশ জানান, বুধবার বিকেলে উপজেলা সদর হতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোটরসাইকেল নিয়ে আসার পথে দুর্ঘটনায় আমি আহত হই। এতে আমার বাম হাতের কলার বর্ন চিড় ধরেছে। প্রচণ্ড ব্যথা বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছি না। এখনও বেশ ব্যথা রয়েছে। কষ্ট হলেও রোগীদের কথা চিন্তা করে ছুটি নেইনি। হাসপাতালে আমার চেয়েও অনেক অসুস্থ রোগী সেবা নেওয়ার জন্য ছুটে আসে। আমাদের কাছে রোগীর সেবা দেয়াই পরম ধর্ম। আমরা সে শপথ গ্রহণ করে এ পেশায় এসেছি।
ডা. আফরোজ সুলতানা লুনা বলেন, আমি আমার অনাগত প্রজন্মের জন্য যেমন ভাবছি। তেমনি একজন চিকিৎসক হিসেবে তাদের কথাও ভাবতে হচ্ছে যারা অসুস্থ। এই এলাকার ৪ লাখ মানুষ আমাদের প্রতি ভরসা করে আছে। তাই চিকিৎসক সংকটের কারণে আপাতত ছুটি নেওয়ার কথা ভাবছি না। আমার অনাগত প্রজন্মকে আল্লাহর হেফাজত করবেন আমাদের কাছে এটাই একমাত্র ভরসা।
রবিবার দুপুরে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার অধ্যাপক কালিপদ রায় বলেন, কয়েক জন অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাসহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে শুনি দুই চিকিৎসক অসুস্থ। তারপরেও অসুস্থ শরীরে তারা চিকিৎসা সেবা প্রদান অব্যাহত রেখেছেন। দেখলাম দুই চিকিৎসককে প্রায় শতাধিক রোগী ঘিরে রেখেছেন। দেশের অনেক এলাকার ঘটনা আমাদের হতাশ করলেও বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ রকম দৃশ্য দেখে আমরা ভরসা পাই। এ রকম দৃশ্য একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমরা গর্ববোধ করি। দৃশ্যটা দেখে মনে হয় মুক্তিযুদ্ধের লড়াইটা সার্থক হয়েছে। চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তাদের সুনাম অক্ষুণ্ন রেখেছে। তবে এই মুহূর্তে চিকিৎসক, অ্যাম্বুলেন্স সংকট সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. মো. জাঙ্গাহীর করিব জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যার। এখানে চিকিৎসকের পদ ৩০টি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসারের দায়িত্ব পালন করে আসছি। পাশাপাশি ২জন চিকিৎসক কর্মরত আছেন। রবিবার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন ৫০ জন রোগী এবং বহির্বিভাগে ২৫০ জন রোগীকে সেবা প্রদান করা হয়েছে।
তবে সংকট থাকলেও দুই জন চিকিৎসক দিয়ে সেবা প্রদান কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর ডা. সমরেশ দাশকে ছুটি নিয়ে বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছিল। তবে তিনি সেটি গ্রহণ করেননি। দুই চিকিসৎকের অসুস্থ তার বিষয়টি জেলা সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল কুদ্দুস এবং রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ডা. অমল চন্দ্র সাহা মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেছেন।
হাসান জুয়েল/বীরগঞ্জ/দিনাজপুর/জেবি
কৃতজ্ঞতাঃ আজকেরপত্রিকা