ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ এর প্ল্যাটফর্ম পোস্ট অনুসারে।
সেদিন রাতে প্লাটফর্মে ছোটভাই মোহিব নীরব’র শেয়ার করা পোস্টটি অন্যান্য অনেক চিকিৎসকের মতো আমারো নজর কেড়েছে।
পোস্টটি পড়ে অন্য অনেকের মতো আমিও হতবিহ্বল ও বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম, আমার অজান্তেই আমারও চোখের কোনটা অন্য অনেকের মতোই নোনাজলে ভিজে উঠেছিলো।
অনেকের মতো আমিও কখনো ভাবতেই পারেনি যে একজন চিকিৎসককে তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর ডেলিভারি খরচ বা আসন্ন ডেলিভারি সংক্রান্ত সম্ভাব্য বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য রাস্তায় উবার চালিয়ে অর্থ উপার্জন করতে হবে!
কোন পেশাকেই আমি ছোট করে দেখতে চাইনা।
উবার চালানোতে দোষের বা অসম্মানের কিছু নেই কিন্তু একজন নবীন চিকিৎসক কতোটা অসহায় আর বিপর্যস্ত হলে তার নিজপেশা ছেড়ে উবারে ড্রাইভিং করতে বাধ্য হয় সেটা বোধ করি সকল চিকিৎসকই অনুমান করতে পারবেন।
অনুমান করতে পারবেন না শুধু সমাজের অন্যান্য শ্রেণীপেশার মানুষগুলো!
কারন তারা মনে করে চিকিৎসকমাত্রই কসাই,
তাদের কাড়ি কাড়ি টাকা।
সমাজের এই মানুষগুলো জানেনা, এই মানুষগুলো বুঝতে চায়না প্রতিষ্ঠিত এবং বিখ্যাত কিছু চিকিৎসক ছাড়া অন্যান্যদের আর্থিক অবস্থা একেবারেই যাচ্ছেতাই বিশেষ করে নবীন চিকিৎসকদের অবস্থা তো এতোটাই মানবেতর যে সেটা বলে আর লজ্জা পেতে চাই না!!
রাজধানী ঢাকাতে সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর পাশে অবস্থান করে চাকরিবিহীন একজন নবীন চিকিৎসকের পক্ষে ঢাকায় চেম্বার করে বা প্রাইভেট প্রাক্টিস করে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় খরচ মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত অর্থ উপার্জন যে কতোটা অসম্ভব তা শুধু সেইসব নবীন চিকিৎসকেরাই জানেন।
অন্যকারো পক্ষে তা কল্পনা করাও সম্ভব নয়!
এর চেয়ে বরং উবার চালিয়েও ন্যূনতম স্বচ্ছলতা আনা সম্ভব! একারনেই হয়তো নিজের পেশা ছেড়ে নবীন চিকিৎসক ভাইটি আমার উবারে যোগ দিয়েছিলো!
ভাগ্যিস ড্রাইভিং লাইসেন্সটি করা ছিলো তার, না হলে কি হতো খোদা মালুম!!
যাইহোক, গতকাল রাতে মোহিবের লেখাটি পড়ে সাথে সাথে মোহিবকে ফোন করে বল্লাম চিকিৎসক ভাইটিকে আগামীকাল সকালে আমার সাথে যোগাযোগ করতে বলো। তাকে নিয়ে বিএসএমএমইউ’র মাননীয়া উপ-উপাচার্য(শিক্ষা) ম্যাডামের সাথে কথা বলতে চাই।
সকালে চিকিৎসক ভাইটি আসলো।
আগে ওর নিজমুখে ওর গল্পটি আদ্যোপান্ত শুনে নিলাম। গল্পটি বলতে গিয়ে ভাইটির চোখ দু’টি যেমন আর্দ্র হয়ে এসেছিলো আমার চোখ দু’টিও তেমনি আর্দ্র হয়ে আসলো। ওকে জড়িয়ে ধরে আশ্বাস দিয়ে বল্লাম কতটুকু পারবো জানিনা তবে চেষ্টার ত্রুটি করবো না একবিন্দুও।
যেই কথা সেই কাজ।
চিকিৎসক ভাইটিকে সাথে নিয়ে উপ-উপাচার্য(শিক্ষা) ম্যাডামের কাছে গিয়ে তার পুরো গল্পটি বল্লাম। গল্পটি শুনে ম্যাডাম আমাদের চেয়েও বেশী আপ্লুত হয়ে পড়লেন, মাতৃস্নেহে তার চোখ দুটোও ছল ছল করে উঠলো!
আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে আছি কিংবা যারা ম্যাডামকে আগে থেকেই চিনেন তারা জানেন নিয়মের ব্যাপারে ম্যাডাম কতোটা স্ট্রিক্ট!
ম্যাডামকে নিয়মের বাইরে যেতে হয়নি।
নিয়মের মধ্যে থেকেই ব্যাপারটির সুরাহা করে দিয়েছেন তিনি।
চিকিৎসক ভাইটি তার বকেয়া পারিতোষিক ফিরে পাবে।
এবং পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের আর কোন রেসিডেন্টদের যেন এমন সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয় সে ব্যাপারেও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হবে।
উপ-উপাচার্য(শিক্ষা) ম্যাডামকে অশেষ ধন্যবাদ আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও নিরন্তর শুভ কামনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সকলের জন্যও আন্তরিক শুভ কামনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরের বাইরের সকল রেসিডেন্টদের জন্যও শুভ কামনা।
_______________________
ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ।
সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ,স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, চিকিৎসক পরিষদ, বিএসএমএমইউ।
ফিলিপ ভাইঃএভাবে একজনের সমস্যার সমাধান হলো।প্রতিবছর ১০০০০-১১০০০ তরুন ডাক্তার বের হচ্ছে যাদের জন্য কোন কর্মসংস্থান বাড়ানো হয়নি।এবার বিসিএস এর মাধ্যমে ১২০০০-১৩০০০ ডাক্তার চাকুরি পাবে।কিন্তু বাকি প্রায় ৪৫০০০-৫০০০০ ডাক্তার এর কোন করমসংস্থান হলোনা।