চিকিৎসক ডায়েরিঃ সদ্য পাশকরা ডাক্তারদের জন্য দিকনির্দেশনা

 

 

 

16114968_1297586856973340_2260374938848750783_n

প্রায় সব গুলো মেডিকেল কলেজেই নতুন ইন্টার্ন চিকিৎসক জয়েন করে ফেলেছে আবার কেউ কয়েকদিনের মাঝেই করবে। নতুন ডাক্তার ফিলিংসটাই অন্য রকম।এতদিন বই খাতা কলমের মাঝেই পড়া শুনা সীমাবদ্ধ ছিল আর এখন সেই পড়াশুনার প্যাক্টিক্যাল এপ্লিকেশন।সম্পর্কটা সরাসরি পেশেন্টের সাথে।

 

আমার এক বছরে অনেক ধরণের অভিজ্ঞতা হয়েছে।যার মাঝে কয়েকটি ব্যাপার শেয়ার না করলেই না।

 

 

১। হসপিটালে সাধারণত যে পেশেন্টগুলো ভর্তি হয় তারা ক্রিটিকাল। শুধু ওষধ দিয়ে কাজ হলে ওরা আউটডোর থেকেই বিদায় নিত। ইনডোরে যে পেশেণ্ট গুলো ভর্তি হয় তাদের সব সময় ফলোআপের মাঝে রাখতে হয়।

মনে রাখবেন ,পেশেণ্ট হসপিটাল ভর্তি হলে তারা প্রথম যে ডাক্তারের মুখোমুখি হবে সেই ডাক্তার হল ইন্টার্ন ডাক্তার। তাই তার উপর অনেক কিছুই ডিপেন্ট করছে। প্রভিশনাল ডায়াগনোসিস একজন ইন্টার্ন ডক্টরই করে থাকে।

আপনি একেবারেই একজন নতুন ডাক্তার।জ্ঞানের পরিধি একেবারেই সীমাবদ্ধ।যে জিনিসটা নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকবে সে ব্যাপারে অবশ্যই সিনিয়রদের হেল্প নিবেন।
মনে রাখবেন,আন্দাজে কোন পেশেণ্টকে ট্রিট করবেন না।মানুষ,গিনিপিগ না , এক্সপেরিমেন্ট করার জিনিস না।

 

২। “ডোন্ট গিভ হোপ”

মনে রাখবেন একজন ডাক্তারের মুখের কথা রোগী এবং পেশেণ্ট পার্টির কাছে অনেক কিছু। ধরুন একিউট এবডোমেন নিয়ে একজন পেশেণ্ট ভর্তি হল সাথে ইম্পেন্ডিং শক।পেইন ম্যানেজ করলেন আর পেশেণ্ট পার্টিকে বলে ফেললেন, ভয়ের কিছু নাই । আমরা আছি,রোগী আশংকা মুক্ত।
অথচ এই পেশেণ্টগুলো খুব বেশী খারাপ হয়ে যায় হটাত করেই।

কিছুক্ষণ পর রোগী মারা গেল।তখন কথা উঠতেই পারে,আশংকা মুক্ত হলে এখন রোগী মারা গেল কিভাবে???
নিশ্চই ডাক্তার ভুল চিকিতসা করে মেরে ফেলেছে? অথবা সঠিক চিকিৎসা রোগী পায় নি।

বাকি সিনারিও বলার অপেক্ষা রাখে না।

তাই রোগীর সঠিক অবস্থা জেনেই কেবল মাত্র কমেন্ট করুন। আন্তাজে হুট হাট কথা না বলাই ভালো ।

 

 

 

৩। যে জিনিসটা আমরা একেবারেই করতে চাই না অথচ,একজন ডাক্তারের সেইফটির জন্য খুবই ইম্পরট্যান্ট তা হল কাউন্সিলিং । প্লীজ এই জিনিসটা এড়িয়ে যাবেন না। পেশেণ্ট রিসিভ করে অন্তত দু মিনিট হলে কাউন্সিলিং এর জন্য ব্যায় করুন।
একজন রোগীর এটেন্ডেণ্ট হিসেবে পেশেণ্টের সব কিছু জানার রাইট তার আছে । এটা এড়িয়ে যাবার কোন ওয়ে নাই।

 

 

৪ । কিছু পেশেণ্ট আছে যেমন ঃ লেট স্টেজ সিকেডি ,সিএলডি,ক্যান্সার মেটস এই পেশেণ্টগুলো যখন হসপিটাল ভর্তি হয় তখন সত্যিকার অর্থে ডাক্তারের তেমন কিছুই করার সাথে না।
ওয়ার্ডে এডভান্স ম্যানেজম্যাণ্ট করা সম্ভব নয়। তাই পেশেণ্টকে প্রায়ই আইসিইউ তে ট্রান্সফার করতে হয়। বেসরকারি হসপিটালে আইসিইউ খরচ অনেক পড়ে আর ভেন্টিলেশন লাগলে তো কথাই নাই ।

আমি অনেক অনেক মানুষকে দেখেছি এরকম ক্রিনিক ডিজিজ এর ট্রিটমেন্ট করতে গিয়ে পুরো ফ্যামিলি পথে বসে গেছে।তাই অবশ্যই এই পেশেণ্টগুলোকে এডভান্স ম্যানেজমেন্টের জন্য ট্রান্সফার করতে চাইলে পেশেণ্ট পার্টকে ডিজিজের আউটকাম সম্পর্কে পূর্ন ধারনা দিন।
তারপর থাকে অপশন দিন।তখন যদি পেশেণ্ট শিফট করতে না চায় তবে অবশ্যই রোগীর পার্টির কাছ থেকে লিখত রাখুন।

 

 

৫ । নিজের একটা ঘটনা বলি।কিছুদিন আগে আমার মা সার্জারী ইউনিটে আমাদের আন্ডারে ভর্তি হয় ,অপারেশননের জন্য।আম্মুকে হাসপাতাল রিসিভ করা থেকে শুরু করে ডিসচার্য দেয়া পর্যন্ত সব কাজ নিজের হাতে করেছি।

নিজের বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি,আম্মুকে ঠিক যতটা যন্ত করে সব কিছু করেছি ,আমাদের আন্ডারে ভর্তি থাকা গরিব আসহায় পেশেণ্টগুলোকে সেই একরকম যন্ত করেছি।
কোন অংশেই আম্মুর চাইতে কম যত্ন করেছি। মনে রাখবেন আপনার বাবা মায়ের জন্য আপনার যতটা ফিলিংস ,পেশেণ্টের জন্যেও তার ছেলে মেয়ের ফিলিংস ততটুকুই।
পেশেণ্ট যেই হোকনা কেন,সবাইকে সমান গুরুত্ব দিবেন।

নিজের সেইফটির জন্য ডকুমেন্টেশন খুবই গুরুত্ত্বপূর্ন। পেশেণ্টের সাথে ঘটে যাওয়া ইম্পরট্যান্ট সব কিছুর ডকুমেন্ট রাখুন।

আরও অনেক কিছুই আছে বলে শেষ করা যাবে না।তবে আমার কাছে এই কয়েকটা ব্যাপার সব চাইতে ইম্পরট্যান্ট মনে হয়েছে।

 

নতুন ডাক্তারদের জন্য শুভ কামনা।
সুস্থ নিরাপদ হোক পথচলা।

 

লেখা ও ছবি ঃ ডাঃ নাহিদ হাসান রিফাত, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ।

Ishrat Jahan Mouri

Institution : University dental college Working as feature writer bdnews24.com Memeber at DOridro charity foundation

10 thoughts on “চিকিৎসক ডায়েরিঃ সদ্য পাশকরা ডাক্তারদের জন্য দিকনির্দেশনা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

প্ল্যাটফর্ম'র পক্ষ থেকে বিএমএ'র নিকট প্রস্তাবনা , আগামিকাল বিএমএ'র নতুন কর্মসূচী

Mon Jun 5 , 2017
    আজ বিএমএ আয়োজিত তরুন চিকিতসকদের মত বিনিময় সভা সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয়েছে বিএমএ অডিটরিয়ামে। সভার শুরুতেই বিএমএ প্রেসডেন্ট ডা: মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীন বিএমএ এর সাম্প্রতিক কর্মকান্ড সম্পর্কে জানান। শিক্ষামন্ত্রীকে প্রক্টর বিষয়ে, স্বাস্থ্য ও  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রিকে  হামলা বিষয়ে যাবতীয় তথ্য দেয়া হয়েছে জানানো হয়।   এছাড়া বিএমএ এ বিষয়ে মামলা করেছে […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo