প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১ এপ্রিল, ২০২১, বৃহস্পতিবার
আমাদের সমাজে, চিকিৎসকরা ঈশ্বরের একটি রূপ হিসেবে বিবেচিত হয় কারণ তারা রোগ নিরাময় করে মানুষকে নবজীবন দান করে। যখন আমরা জীবন-মৃত্যুর লড়াইয়ে হেরে যেতে শুরু করি, তখন আমাদের জয়ী করবার জন্য চিকিৎসকরাই পাশে এসে দাঁড়ান। বাংলাদেশের সকল আন্দোলন যেমন ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণ অভ্যূত্থান, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা পরবর্তী প্রগতিশীল আন্দোলনে চিকিৎসকদের ভূমিকা ছিল অতুলনীয়। স্বাধীন বাংলাদেশের পরবর্তী সময়ে এই দেশের চিকিৎসকরা সবকিছু গুছিয়ে আনা থেকে শুরু করে অনেক কম পরিমাণ রসদ নিয়েও দেশের স্বাস্থ্যখাতকে এক উন্নত অবস্থানে নিয়ে গেছে যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। বর্তমানে মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে সবাই যখন আতঙ্কে জর্জরিত, তখন সমস্ত রোগীর সেবা করতে এগিয়ে এসেছেন এই ডাক্তার, নার্সরাই। নিজেদের জীবনের প্রতি মায়া ত্যাগ করে তাঁরা লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। পৃথিবীতে ডাক্তারদের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত ঠিকই, তবে এই করোনা ভাইরাস মহামারীর সময় তাদের ভূমিকা আবারও প্রমাণ করে দিল যে, তাঁরা ছাড়া সমগ্র মানবজাতি অচল এবং তাঁরা আছেন বলেই আমরা সুস্থভাবে বেঁচে আছি। করোনার আতঙ্কের অভিঘাত সামলে পরিস্থিতি মোকাবিলায় যাঁরা সর্বাত্মক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর বিনম্র কৃতজ্ঞতা। স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর অভাব, সীমিত পরীক্ষা ব্যবস্থা, অপর্যাপ্ত চিকিৎসাসামগ্রী সত্ত্বেও বাংলাদেশের চিকিৎসক ও অন্যান্য চিকিৎসা পেশাকর্মীরা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে রােগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করেছেন। প্ল্যাটফর্মের তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত ১৭৭ জন চিকিৎসক (২৭ মার্চ, ২০২১ পর্যন্ত) এই করোনা যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেছেন। সামগ্রিকভাবে আমাদের দেশের স্বাস্থ্যখাতে ও করােনা মােকাবেলায় চিকিৎসকদের ভূমিকা অপরিসীম। তাই চিকিৎসকদের কার্যক্রম ও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ চিকিৎসকদের সংগঠন প্ল্যাটফর্ম অফ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল সােসাইটি ও বাংলাদেশ মেডিকেল টিচার্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট তাদের বিভিন্ন পর্যায়ের সমন্বিত সভায় ১ এপ্রিল – ৭ এপ্রিল পর্যন্ত চিকিৎসক সপ্তাহ উৎযাপন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এবারের প্রতিপাদ্য হলো – স্বাস্থ্যখাতের সকল অংশে চিকিৎসকদের সমান অংশীদারিত্ব নিশ্চিত এক আধুনিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অন্যতম শর্ত।
উল্লেখ্য, ১ এপ্রিল চিকিৎসক সমাজের প্রবাদ পুরুষ জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলাম এর জন্মবার্ষিকী। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন। বাংলাদেশের পােস্টগ্র্যাজুয়েট চিকিৎসা ব্যবস্থার স্থপতি এই কিংবদন্তি চিকিৎসক গােটা জীবন ধরে চিকিৎসা গবেষণা, শিক্ষকতা, নিয়মানুবর্তিতা ও প্রশাসনিক বিচক্ষণতায় এক নজির স্থাপন করে গেছেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন তৎকালীন আইপিজিএমআর (বর্তমান শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) এ পরিচালকের দায়িত্ব পালন
করেছেন। ১৯৬০ সালের শেষের দিকে ডা. নুরুল ইসলামের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পােস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিসিন অনুষদ খােলা হয়। ১৯৮২ সালে ঔষধনীতি প্রণয়নের মাধ্যমে তিনি ক্ষতিকর ও অপ্রয়ােজনীয় ঔষধের ব্যবহার বন্ধে কাজ করেছিলেন। চিকিৎসাক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি রাষ্ট্রপতি স্বর্নপদক (১৯৬৩), স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯৭), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (২০০৩) ইত্যাদি নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। চিকিৎসক সপ্তাহের শেষ দিন ৭ এপ্রিল হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। সারা বিশ্বজুড়ে এই দিনটি অত্যন্ত মর্যাদার সাথে পালিত হয়। এই তাৎপর্যপূর্ণ দিনটি উৎযাপনের মাধ্যমেই চিকিৎসক সপ্তাহের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে।
চিকিৎসাক্ষেত্রে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের এই সাফল্য ধরে রাখতে প্রয়ােজন যথার্থ অনুপ্রেরণা। তাই উপরােক্ত দুই সংগঠনই প্রতি বছর চিকিৎসক সপ্তাহে তাঁদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ “চিকিৎসক পদক’ প্রদান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতের বিভিন্ন অঙ্গনে গুরত্বপূর্ণ অবদান রাখা সকল চিকিৎসক এবং অন্যান্য যাঁরা এই চিকিৎসা খাতে গুরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তাঁদেরকে এই চিকিৎসক পদক প্রদান করা হবে।
চিকিৎসক সপ্তাহ -২০২১ এর কর্মসূচিঃ
১ এপ্রিল, ২০২১ খ্রিঃ
★রাত ৯.০০ – ১০.০০ ঘটিকা > চিকিৎসক সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান
★রাত ১০.০০-১১.০০ ঘটিকা > সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
২ এপ্রিল, ২০২১ খ্রিঃ
★রাত ৮.০০ – ৯.০০ ঘটিকা >আলােচনা সভাঃ মেডিকেল শিক্ষাব্যবস্থা; অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ।
★রাত ৯.০০ – ১০.০০ ঘটিকা >আলোচনা সভাঃ স্বাস্থ্যব্যবস্থা; দেশ ও বিদেশ।
★রাত ১০.০০ – ১১.০০ ঘটিকা > অটিজম দিবস উপলক্ষে অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে কার্যক্রম।
৩ এপ্রিল, ২০২১ খ্রিঃ
★রাত ৮.০০ – ৯.০০ ঘটিকা > আলােচনা সভাঃ বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা: সম্ভাবনা ও শঙ্কা
★রাত ৯.০০ – ১০.০০ ঘটিকা >করােনায় শহীদ চিকিৎসকদের নিয়ে ডকুমেন্টারি প্রদর্শন।
৪ এপ্রিল, ২০২১ খ্রিঃ
★সন্ধ্যা ৭.০০ – ৮.০০ ঘটিকা > ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসকদের নিয়ে সােশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা।
★রাত ৮.০০ – ৯.০০ ঘটিকা > এ বিষয়ক ডকুমেন্টারি প্রদর্শন
৫ এপ্রিল, ২০২১ খ্রিঃ
★সন্ধ্যা ৭.০০-৭.০১মিনিট > মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন ও করােনা যুদ্ধে শহীদ সকল চিকিৎসকদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন।
★রাত ৮.০০ – ৯.০০ ঘটিকা > আলােচনা সভাঃ মেডিকেল রিসার্চ ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট।
৬ এপ্রিল, ২০২১ খ্রিঃ
★রাত ৮.০০ – ৯.০০ ঘটিকা > সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
★রাত ৯.০০ -১০.০০ ঘটিকা >বিভিন্ন চিকিৎসকদের শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদর্শন।
৭ এপ্রিল, ২০২১ খ্রিঃ
★রাত ৯.৩০ – ১০.৩০ ঘটিকা > বাংলাদেশ মেডিকেল টিচার্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ও প্ল্যাটফর্ম অফ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল সােসাইটির যৌথ উদ্যোগে
“চিকিৎসক পদক ২০২১” এর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে চূড়ান্ত মনােনীত সম্মানিত ব্যক্তিদের নাম ঘােষণা
এবং সমাপনী অনুষ্ঠান।
বিঃদ্রঃ উপরোক্ত সব কর্মসূচি অনলাইনে অনুষ্ঠিত হবে।
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাকিবুল হাসান শাওন