প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২২ জুন ২০২০, সোমবার
চিকিৎসকদের প্রতি ঘৃণ্য মন্তব্য ও অপপ্রচার রোধে এবং একজন চিকিৎসক খুন হওয়ার বিষয় সমর্থনকারীদের বিরুদ্ধে সাইবার আইনের আওতায় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ।
বিগত ১৫ জুন খুলনায় এক রোগী মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডা. আব্দুর রাকিব খানকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে উক্ত রোগীর স্বজনেরা। এই সংবাদটি যমুনা টিভির ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়। সেখানে অনেকের মন্তব্য এমন মানহানিকর ছিল, যা নৈতিকতা অনুযায়ী বা মানবিক দিক বিবেচনা করে কোনভাবেই সুস্থ বলে বিবেচনা করা যায় নি। মন্তব্যে কিছু অংশ বিশেষ ছিল এরকম “শুওরের বাচ্চা ডাক্তার পয়সাপিসাচ ওর মতো ডাক্তারকে ধরে ধরে পিটায়ে মেরে ফেলাই একমাত্র বিচার, একদম ঠিক কাজ করেছে ধন্যবাদ জানাই রোগীর স্বজনকে, আমার মনচায় ডাক্তার গুলোকে গুলি করে মারতে, ওরা ডাকাতের চাইতেও খারাপ মানবতা বলতে কিছু নাই, খালি টাকার ধান্দায় থাকে মায়া দয়া নাই সুয়োরগুলো”। খুন হওয়া সেই চিকিৎসক সম্পর্কে ঘৃণামূলক বক্তব্য ছড়িয়ে দিয়েছে কিছু লোক এবং রোগীর স্বজনের হাতে চিকিৎসকের খুন হওয়ার বিষয়টিকে ন্যায়সঙ্গত করার চেষ্টা করেছে। তারা শুধু হত্যার মত একটি অপরাধকে প্রকাশ্যে সমর্থনই করছেন না, একই সাথে চিকিৎসকদের সম্পর্কে ঘৃণ্য বক্তব্য ছড়িয়ে দিচ্ছে, যা অত্যন্ত অনৈতিক ও অনুচিত।
চিকিৎসকদের এরূপ হেয় প্রতিপন্ন করা এবং হত্যাকে প্রকাশ্য সমর্থন করার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের অধীনে সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগ। সাইবার সিকিউরিটি বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “লিখিত আবেদন ও প্রাপ্ত প্রমাণের ভিত্তিতে সেই ঘৃণ্য মন্তব্যকারী ও হত্যার পক্ষ গ্রহণকারীদের অনেকজনকেই চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। তাদেরকে সতর্ক করার জন্য পুলিশি কর্মকান্ড ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে”।
উল্লেখ্য, ডিজিট্যাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৫(১) ধারার (ক) উপধারা অনুযায়ী, “যদি কোন ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোন ডিজিট্যাল মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে, এমন কোন তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ করেন, যাহা আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শক অথবা মিথ্যা বলিয়া জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও, কোন ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্থ বা হেয় প্রতিপন্ন করিবার অভিপ্রায়ে কোন তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ বা প্রচার করেন তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।”
দেশের করোনা পরিস্থিতিতে প্রসবকালীন জটিলতায় হাসপাতালে ভর্তি করা নিয়ে রোগীরা বিড়ম্বনায় পড়েন।ডা. রাকিব খান হাসপাতালে রোগী ভর্তিতে ছিলেন উদার। বহু রোগী এসময় চিকিৎসা পেয়েছেন, এমন একজন প্রসূতি প্রসব পরবর্তী জটিলতায় পড়েন। তাঁর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজে রেফার করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে রেফার করা হয়। পথিমধ্যে রোগী মৃত্যুবরণ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রোগীর স্বজন ডা. রাকিবের হাসপাতালের সামনে তাঁর জন্য অপেক্ষা করেন। ডা. রাকিব হাসপাতালে প্রবেশের সময় তাঁকে প্রচন্ড মারধর করে রোগীর আত্মীয়রা। এতে তিনি মাথায় আঘাত পান এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়। এই হত্যাকাণ্ডে দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে চিকিৎসকদের সংগঠনগুলো দাবি জানিয়ে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ তৎপর হলো।
ডা. রাকিব খান এলাকায় জনপ্রিয় চিকিৎসক ও “গরীবের বন্ধু” হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন।