রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
- গতবছর ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৫৭০ জন বাংলাদেশি স্বাস্থ্যসেবার জন্য বিদেশ ভ্রমণ করেছেন।
চিকিৎসা নিতে অন্য দেশে যাওয়াকে দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার সক্ষমতা এবং দুর্বলতার প্রতিফলন বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অর্থনৈতিক প্রভাব যতটা তীব্র, ততটাই উদ্বেগের। এই খাতে বাংলাদেশ প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার হারায়, যার বেশিরভাগই যুক্ত হচ্ছে ভারতে।এ অবস্থায় দেশের স্বাস্থ্যখাতের সংস্কার, অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রযুক্তিতে বিনোয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশকে মেডিকেল হাব হিসেবে গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন তারা।
গতকাল শনিবার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) আয়োজিত ‘চিকিৎসা সেবায় বিদেশমুখীতা: আমাদের উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা বলেন, মেডিকেল ট্যুরিজম বা বিদেশে গিয়ে চিকিৎসাসেবা নেওয়া একটি দেশের স্বাস্থ্যখাতের সেক্টরের ব্যর্থতা প্রকাশ করে। আজ এই মেডিকেল ট্যুরিজম বা চিকিৎসা পর্যটন হলো ১০০ বিলিয়ন ডলারের একটি বৈশ্বিক ব্যবসা। ভারত, থাইল্যান্ড, তুরস্ক এবং সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলো এক্ষেত্রে পাওয়ার হাউস হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫ লাখ ডলার খরচ হতে পারে এমন একটি লিভার ট্রান্সপ্লান্ট ভারতে মাত্র ৫০ হাজার ডলারে করা যায়। কেন লক্ষ লক্ষ মানুষ চিকিৎসাসেবার জন্য নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যায় তা বোঝার জন্য এই একটি উদাহরণই যথেষ্ট।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে তারা বলেন, অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ মেডিকেল ট্যুরিজমের শিকারে পরিণত হয়েছে। আশি ও নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের কিছুসংখ্যক অভিজাত শ্রেনীর লোক চিকিৎসার জন্য বাইরে যেত। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়া আগের তুলনায় অনেকগুণ বেড়েছে। ২০২৩ সালে ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৫৭০ জন বাংলাদেশি স্বাস্থ্যসেবার জন্য বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। যা আগের বছরের তুলনায় ৪৮ শতাংশ বেশি। এটা নিছক কোনো পরিসংখ্যান নয়, বরং এটি আমাদের স্বাস্থ্যসেবা খাত নাগরিকদের চাহিদার সাথে কতটুকু তাল মেলাতে পারছে তারই ইঙ্গিত দেয়।
এর সমাধান তুলে ধরে আলোচকরা বলেন, এটি আত্মবিশ্লেষণ ও যুতসই সমাধানের দাবি রাখে। চ্যালেঞ্জটি বিশাল, কিন্তু এর মধ্যেই সম্ভাবনার বীজ লুকিয়ে আছে। এমন একটি বাংলাদেশ আমরা গড়তে পারি, যেখানে সারাদেশেই বিশ্বমানের হাসপাতাল থাকবে। যা শুধু দেশের নাগরিকদেরই নয়, বরং বাইরের রোগীদেরও আকৃষ্ট করবে। আর এই সম্ভাবনা কেবল সাহসী ও যুগান্তকারী পদক্ষেপের ওপরই নির্ভরশীল।
এজন্য সরকারের উচিত স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোখাতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করা এবং সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত বিশেষায়িত স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া। বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবা জায়ান্টদের সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতা এই অগ্রগতিকে দ্রুততর করতে পারে। তাছাড়া স্বাস্থ্যখাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশকে তার চিকিৎসা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচিগুলোকে বৈশ্বিক মানে উন্নীত করতে হবে এবং মেধা ধরে রাখতে শক্তিশালী প্রণোদনা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। দুর্নীতি ও অদক্ষতাকে মোকাবিলা করার জন্য স্বচ্ছতা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা এই প্রচেষ্টাগুলোর ভিত্তি হতে হবে।
প্ল্যাটফর্ম/