চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা রক্ষায় কিছু যৌক্তিক প্রস্তাবনা

লেখকঃ Shahriar Rizvi

ঘটনাঃ
গত ২৩ অক্টোবর কর্তব্যরত অবস্থায় ডা রেহেনেওয়াজ, SACMO নিজাম উদ্দিন ও ওয়ার্ড বয় খলিল দুর্বৃত্তদের হামলায় মারাত্তক ভাবে আহত হন। এর পূর্বে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অনারারি চিকিৎসক পার্শ্ববর্তি চাংখারপুল এলাকায় খাওয়ার পর ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হয়ে আইসিইউ তে ভর্তি হন।তারও পূর্বে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল, রাজশাহী মেডিকেল ও BIRDEM এ দুর্বৃত্তদের হামলা। তারও পূর্বে কর্তব্যরত অবস্থায় হত্যাকান্ডের শিকার হন ডাঃ সাজিয়া আফরিন। হত্যাকান্ডের শিকার হন ডাঃ মুরাদ। আরও অনেক চিকিৎসক ও চিকিৎসা সেবার সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তিবর্গ প্রতিনিয়ত দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হচ্ছেন তার খবর আমরা জানতেই পারিনা।বিভিন্ন চাপের মুখে চাপা পড়ে থকে এসব ঘটনা। এসকল ঘটনার সবগুলোই কর্তব্যরত অবস্থায় অথবা কর্তব্য সম্পর্কিত কাজের সাথে সম্পর্কিত।

যদি:
অনুরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি চলতেই থকে তবে চিকিৎসা সেবার সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তিদের নিরাপত্তার ভবিষ্যৎ কি??? মিডিয়া বারাবরই এসকল ক্ষেত্রে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে।যে ঘটনাগুলো মিডিয়াতে এসেছে তার অনেক ক্ষেত্রেই প্রেজেন্টেশন এমন ছিল যে, চিকিতসকরাই সবগুলো ঘটনার জন্য দায়ী ছিল।তাতে জনগণের কাছে চিকিৎসকদের সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব আরও বদ্ধমূল হয়েছে। আমার পরিচিত বেশ কিছু চিকিৎসক সরকারি পেশা থেকে সরে এসেছেন, নতুনদের কেউ কেউ সরকারি চাকুরির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন এবং বেশিরভাগ চিকিৎসক দেশ ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার বিকল্প পথের সন্ধানে আছেন।কারও কারও মুখে শুনতে পাই, বিকল্প কোন পেশা হলেও বিদেশে যাওয়ার পায়তারা করছেন। যদি প্রতিনিয়ত চিকিৎসকের উপর হামলা চলতেই থাকে তবে এরকম চিন্তাকে অমূলক বলে উড়িয়ে দেওয়া যায়না!আমাদের অনেকেই এসবের বিরুদ্ধে মানব বন্ধন করেছেন, কালো ব্যাজ ধারণ করেছেন। কিছু কিছু ঘটনার ক্ষেত্রে পক্ষে রায়ও পেয়েছি, কিন্তু ঘটনা ঘটেই চলেছে। তার মানে দুর্ঘটনা গুলোর কিছু কিছু প্রতিকার পেলেও প্রতিষেধ হচ্ছেনা। যদি আমাদের পেশাজীবি সংগঠনগুলো এসকল ক্ষেত্রে বরাবরের মত নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেন অথবা কালো ব্যাজ ধারণ করা ও মানব বন্ধন করে ক্ষান্ত দেওয়া ছাড়া স্থায়ি কোন সমাধানের চিন্তা না করেন তবে সেদিন আর বেশি দূরে নেই যেদিন দেখবেন সংগঠনের নেতারা ছাড়া তাদের পেছনে দাড়ানোর মত কোন চিকিৎসকই আর অবশিষ্ট নেই!দেখবেন অনেক মেধাবী যারা কিনা মেধা পাচারের বিপক্ষে সোচ্চার ছিলেন তারাই পাচার হয়ে গেছেন। তবে সমাধান কি!!!

এবং কেবল যদিঃ
আমাদের এই চিকিৎসা সেবায় জড়িতদের নিরাপত্তার প্রয়োজনে স্থায়ী কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তবেই কিছুটা সমাধান আশা করা যায়। আপনি কখনোই দুর্বৃত্তদের সাথে তাদের আচরণ ফিরিয়ে দিতে পারবেন না। কেননা, পাচ বা ছয়টি বছর ধরে আপনাকে এক রোবটে পরিণত করা হয়ছে যেখানে মানবসেবা নামক একটা সফটওয়্যার ইনস্টল করে দেওয়া হয়েছে। যার কারনে আপনি সজ্ঞানে মানুষের উপকার না করতে পারেন ক্ষতি অন্তত করবার চিন্তা করবেন না। তবে আসুন বিকল্প কি কি সমাধান আমাদের হাতে আছে? আমি যে কথাগুলো পেশ করব তা দাবি হিসেবে নয়, প্রস্তাবনা হিসেবে করব। আমদের চিকিৎসকদের প্রয়োজন মনে হলেই তা দাবি হিসেবে উঠতে পারে। প্রস্তাবনাঃ

১। চিকিৎসা সেবা দানকারি ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিষ্ঠানের রক্ষা কবচ হিসেবে আইন পাশ করা। দূর্বলের রক্ষার্থে আইনের থেকে কার্যকর কোন অস্ত্র নেই। অন্য কোন প্রস্তাবনা গ্রহণ না করেও শুধুমাত্র আইনের দরুণই বর্তমান পরস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব। এক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তি দেশ ভারতের উদাহরণ অন্যতম দৃষ্টান্ত। এক্ষেত্রে ভারতের এক চিকিৎসকের প্রেজেন্টেশন থেকে তথ্য পাওয়া যায় যে, ২০০৮ সালে আইন পাসের পূর্বে চিকিৎসকদের উপর বড় ধরনের হামলার ঘটনা বছরে ২০ টির উপর ঘটলেও ২০১১ তে তা ১০ এর নিচে চলে আসে। সুতরাং স্পষ্ট প্রতীয়মান যে, স্থায়ী সমাধানের ক্ষেত্রে আইন অন্যতম প্রধাণ অস্ত্র।আইনটি কিরূপ হওয়া উচিৎ তা আইনের লোক না হয়েও একটা অউটলাইন দেওয়ার ধৃষ্টতা সময়ের প্রয়োজনে প্রদর্শন করছি-

ক)চিকিতসা সেবা প্রদানকারি ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিষ্ঠান রাস্ট্রের সেবা প্রদানে রত।সুতরাং তাদের উপর হামলা বা ক্ষতির ক্ষেত্রে রাস্ট্র বাদি হয়ে মামলা করবে।
খ) চিকিতসা সেবা প্রদানকারি ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিষ্ঠান এর ক্ষতি অজামিনযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
গ)অপরাধ প্রমাণিত হলে জেল বা জরিমানা বা উভয়ই প্রযোজ্য হবে।এক্ষেত্রে কারাদন্ডের সময় কোনভাবেই মওকুফ করা যাবেনা। কারাদন্ড ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে।হত্যার ক্ষেত্রে হত্যাকান্ডের জন্য প্রচলিত আইনে বিচার হবে।ক্ষতির পরিমাণ হিসাব করে জরিমানা ধার্য করা যেতে পারে।
ঘ)মামলা দ্রুত বিচারের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে।প্রয়োজনে বিশেষ কোর্ট স্থাপণ করা যেতে পারে।
ঙ)সংবিধানের ২য় ভাগে ১১ নং অনুচ্ছেদে মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। ৩য় ভাগে ৩১ নং অনুচ্ছেদে আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার বর্ণনা করা হয়ছে।সুতরাং রাস্ট্রের কাছে চিকিৎসকদের রক্ষার্থে আইন প্রণয়ন করার ব্যাপারটি সংবিধাণ পরিপন্থি নয়।
এ বিষয়ে আমরা বিশেষজ্ঞদের কন্সাল্টেশন নিতে পারি।

২)বেশিরভাগ দুর্ঘটনাগুলো জরুরী বিভাগে ঘটে।যেহেতু, ব্যক্তিগতভাবে পুলিশি প্রহরা সম্ভব নয়, জরুরীবিভাগে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপণ করে অনেক দুর্ঘটনা এড়ানো যেতে পারে।

৩) জনগণের কাছে কোন লেভেলের হাসপাতালে কোন ধরণের চিকিৎসা হওয়া সম্ভব সে বিষয়ে প্রচারণার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

৪) বিভিন্ন সাপ্লাইয়ের অপ্রতুলতার জন্য অনেক অনভিপ্রেত ঘটনার জন্ম হয়। এই অপ্রতুলতা দুরিকরণে চিকিৎসক বা নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তিবর্গ যে সম্পর্কিত নয় তা জানানো যেতে পারে।

অনেক কিছু করা সম্ভব না হলেও ১ম ২য় দুটি বিষয় বাস্তবায়ন হলেও দুর্ঘটনা অনেক কমে আসবে বলেই আমার বিশ্বাস। এ মুহূর্তে তা সময়ের দাবি। আমি যা বলেছি তা কিছু প্রস্তাবনা মাত্র। সকল চিকিৎসক সম্মিলিতভাবে কোন সিদ্ধান্ত নিলে অনেক সহজ সমাধান সম্ভব।
আমরা নির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাবনার সাথে বিগত বছরগুলোতে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার সকল তথ্য, প্রমাণ, ডকুমেন্ট ছবি সহ একটা ফাইল তৈরি করে চিকিৎসকদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর পেশ করতে পারি।যারা পেশাজীবী রাজনীতির সাথে জড়িত তাদের অনেকেই দেশের মূল রাজনীতিতেও অনেক প্রভাব রাখেন। তাই আশা করব নিজের পেশার মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তারা পেশাজীবী রাজনীতির যথার্থতা প্রমাণ করবেন। নতুবা শুধুমাত্র দলীয় লেজুড়বৃত্তির রাজনৈতিক অংশ হয়ে থাকলে তারা তাদের পেশার মানুষেরই সমর্থন হারাবেন।
এরপরও যদি আমাদের রক্ষাকবচ হিসেবে কোন আইন পাশ না হয় তবে সিদ্ধান্ত নিজের- দেশে থাকবেন নাকি পালাবেন, নাকি এই নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনেই সীমাবদ্ধ থাকবেন!!!
পুনশ্চঃ
ভারতের তামিল নাড়ু মেডিকেল কেয়ার সার্ভিস ও মেডিকেল কেয়ার ইন্সটিটিউশনের নিরাপত্তার জন্য প্রযোজ্য আইনটি সবার জ্ঞ্যাতার্থে তুলে ধরলাম-
ACT No. 48 OF 2008.
An Act to prohibit violence against medicare service persons and damage or loss to property of medicare service institutions and for matters connected therewith and incidental thereto.
WHEREAS, acts of violence causing injury or danger to life of medicare service persons and damage or loss to the property of medicare service institutions are on the increase in the State creating unrest among medicare service persons resulting in total hindrance of such services in the State;
AND WHEREAS, it has become necessary to punish the persons committing violence by making the offence as cognizable and non-bailable and to provide for compensation, for damage or loss caused to the property of medicare service institutions, to be determined by court;
BE it enacted by the Legislative Assembly of the State of Tamil Nadu in the Fifty-ninth Year of the Republic of India as follows:—
1. (1) This Act may be called the Tamil Nadu Medicare Service Persons and Medicare Service Institutions (Prevention of Violence and Damage or Loss to Property) Act, 2008.
(2) It shall be deemed to have come into force on the 18th day of July 2008.
2. In this Act, unless the context otherwise requires,—
(1) “medicare service institution” means any institution providing medicare to people which is under the control of the State or the Central Government or local bodies including any private hospital having facilities for treatment of the sick and used for their reception or stay; any private maternity home where women are usually received and accommodated for the purpose of confinement and ante-natal and post-natal care in connection with child birth or anything connected therewith; and any private nursing home used or intended to be used for the reception and accommodation of persons suffering any sickness, injury or infirmity whether of body or mind, and providing of treatment for nursing or both of them and includes a maternity home or convalescent home;
(2) “medicare service person” in relation to a medicare service institution shall include,—
(a) registered medical practitioners (including a person having provisional registration);
(b) registered nurses;
(c) medical students;
(d) nursing students;
(e) para medical workers; employed and working in such medicare service institutions;
(3) “property” means any property, movable or immovable or medical equipment or medical machinery owned by or in possession of, or under the control of, any medicare service person or medicare service institution;
(4) “ violence” means activities of causing, any harm, injury or endangering the life or intimidation, obstruction or hindrance to any medicare service person while discharging his duty in the medicare service institution or causing damage or loss to the property.
3. Any person either by himself or as a member or as a leader of a group of persons or organization, commits or attempts to commit or abets or incites the commission of any act of violence shall be punished with imprisonment for a term which shall not be less than three years but which may extend to ten years and with fine.
4. Any offence committed under section 3, shall be cognizable and non bailable.
5. (1) In addition to the punishment specified in section 3, the person shall be liable to pay compensation for the damage or loss caused to the property, as determined by the court.
(2) If the person has not paid the compensation under sub-section (1), the said sum shall be recovered under the provisions of the Tamil Nadu Revenue Recovery Act, 1864 as if it were an arrear of land revenue.
6. No claim for compensation for the damage or loss caused to the property shall be made by the medicare service person or medicare service institution, before any authority, under the Tamil Nadu Property (Prevention of Damage and Loss) Act, 1992.
7. Save as otherwise provided in this Act, the provisions of this Act shall be in addition to and not in derogation of, any other law for the time being in force.
8. (1) The Tamil Nadu Medicare Service Persons and Medicare Service Institutions (Prevention of Violence and Damage or Loss to Property) Ordinance, 2008 is hereby repealed.
(2) Notwithstanding such repeal, anything done or any action taken under the said Ordinance shall be deemed to have been done or taken under this Act.

(By order of the Governor)
S. DHEENADHAYALAN,
Secretary to Government,
Law Department.

ডক্টরস ডেস্ক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

বিএসএমএমইউ এমডি, এমএস রেসিডেন্সি প্রোগ্রামের সার্কুলার

Sun Oct 26 , 2014
টাকা জমা দেওয়ার সময়ঃ ২৭ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর অনলাইন ফর্ম সাবমিশনের শেষ তারেখঃ ১৪ নভেম্বর। পরীক্ষার তারিখঃ ২৮ শে নভেম্বর (শুক্তবার) সময়: সকাল ৯.০০-১২.০০ স্থান বুয়েট : ক্যাম্পাস Share on FacebookTweetFollow us

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo