সবকিছুরই ভালো এবং খারাপ দিক থাকে।আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও বিজ্ঞানের দুটি রূপ আছে।এর একটি কল্যাণকর আর অপরটি অভিশপ্ত রূপ।অভিশপ্ত রূপটি কখনও কখনও বর্ণবাদের মুখোশ পরে আবির্ভূত হয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে বর্ণবাদ!!আঁতকে ওঠার মতোই কথা।আরোও আঁতকে ওঠার ব্যাপার হবে যখন আপনি জানবেন খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃ্ষ্ণাঙ্গদের ওপর বিজ্ঞানের বর্ণবাদের গিলোটিন চালানো হয়েছিল।
১৯৩২ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক হেলথ সার্ভিস বিভাগ ৩৯৯ জন কৃ্ষ্ণাঙ্গের ওপর টাসকিগি সিফিলিস এক্সপেরিমেন্ট চালায়।
এই গবেষনার ফলে ১২৮ জন কৃ্ষ্ণাঙ্গ সিফিলিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।সিফিলিস আক্রান্ত স্বামী থেকে ৪০ জন স্ত্রী ও ১৯ জন গর্ভজাত শিশুও সিফিলিসে আক্রান্ত হন।
কেন এই অমানবিক গবেষনাঃ বিজ্ঞানীরা মনে করতেন সিফিলিস জীবাণু সংক্রমণের ক্ষেত্রে বর্ণ ভূমিকা রাখে।
তারা মনে করতেন সাদারা সিফিলিসে আক্রান্ত হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্নায়ুতন্রেটির জটিলতায় ভোগে এবং কালোরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হৃদ-সংবহননালীর জটিলতায় ভোগে। তাদের এই ধারণাকে পাকাপোক্ত রূপ দিতেই এই গবেষনা।
কীভাবে কৃ্ষ্ণাঙ্গদের এই গবেষনায় অন্তর্ভূক্ত করা হলঃ
এই গবেষনা করার জন্য টাসকিগি আলবামা এর দরিদ্র, অল্পশিক্ষিত, অনাহারী কৃ্ষ্ণাঙ্গদের বেছে নেয়া হলো।
এই কৃ্ষ্ণাঙ্গ সমাজের লোকেদের অবস্থা এতটাই নাজুক ছিল যে এরা কখনও ডাক্তার দেখেনি।
তাদেরকে প্রথমে নানা চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট করা হলো। যেমন- ” বিশেষ ফ্রি চিকিৎসা পাওয়ার শেষ সুযোগ।” তাদেরকে বোঝানো হলো আমরা তোমাদের শরীর থেকে বদ রক্ত দূর করতে চাই; তোমরা আমাদের চিকিৎসা নাও।তাদের বিশ্বাসে যাতে কোন খাদ না থাকে সেজন্য দলে ভেড়ানো হলো কিছু কৃ্ষ্ণাঙ্গ ডাক্তার ও নার্সকে।
যাদেরকে এই গবেষনায় অন্তর্ভূক্ত করা হয় – আসলে তাদের দেহে সিফিলিসের জীবাণু প্রবেশ করিয়ে পরবর্তী লক্ষন/পর্যায়গুলো পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে বছরের পর বছর এবং বিনা চিকিৎসায়।বিনিময়ে তাদের এক বেলা খাবার দেয়া হতো।এই গবেষনার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল- মৃত্যু অবধি সিফিলিস জীবাণু মানব দেহে কী কী লক্ষন প্রকাশ করে তা দেখা এবং মৃত্যুর পর ঔ ব্যক্তির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরীক্ষা করে দেখা হতো কী কী পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।ভেবে দেখুন কতটা নিষ্ঠুর হলে এ কাজ করা যায়!!
৩৯৯ জন কৃ্ষ্ণাঙ্গ নিয়ে প্রায় ৪০ বছরের গবেষনা চলাকালীন সময়ের মধ্যে পেনিসিলিন আবিষ্কৃত হয় এবং ১৯৪০ সালে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয় যে ,Penicillin সিফিলিসের চিকিৎসায় ব্যবহারযোগ্য। এরপরও ঔ ৩৯৯ জন কৃ্ষ্ণাঙ্গকে Penicillin দিয়ে চিকিৎসা করানো হয়নি।
অবশেষে ১৯৭২ সালে টিভি রিপোর্টার Harry Reasoner গবেষনার নামে চলা অমানবিক প্রকল্পটির কথা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেন এবং বর্ণনা করেন এভাবে-“It as an experiment that used human being as laboratory animals in a long and in efficient study of how long it takes syphilis to kill someone.”
উনার রিপোর্টের মাধ্যমে গবেষনাটির নানাদিক গণমাধ্যমে আসে।তখন যুক্তরাষ্ট্র সরকার অনেকটা বাধ্য হয়েই এই গবেষনা বন্ধ করে দেয়।পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে National Research Act. পাশ করা হয়।
১৬ মে,১৯৯৭ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ক্ষমা চান এই বলে-“What was done cannot be undone.But we can end the silence.We can stop turning our heads away.We can look at you in the eye and finally say on behalf of American people,what the United States Government did was shameful and I am sorry……..To our African American Citizens.”
সমাজকে সভ্যতাকে এগিয়ে নিতে হলে গবেষনার বিকল্প নেই । তবে সে গবেষনায় যেন অবহেলা না থাকে,কারো অকল্যাণ যেন না হয় এই প্রত্যাশায় শেষ করছি।
তথ্যসূত্রঃ
http://www.scientific bangladesh.com
http://www.infoplease.com
http://www.brown.edu
ডাঃ মনজুর ই মুরশিদ