প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৯ মে ২০২০, শনিবার
হেলথ বিডির এডমিন খন্দকার মুহাম্মাদ হালিম কাজ করেন স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে, এই দুর্যোগে চিকিৎসা সেবা নিয়ে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে করা হয়েছে প্রতিবেদনটি।
ঘটনা প্রবাহ- ০১
হঠাৎ ছোট ভাইয়ের এপেনডিক্স এর মারাত্মক ব্যথা শুরু হলে তাকে নিয়ে গেলাম হাসপাতালে ভর্তি করানো হলো সার্জারী ওয়ার্ডে। ইফতারের পরেই সফল অপারেশন হল। ডিউটি ডাক্তার যথেষ্ঠ আন্তরিক ছিলেন। ডা. মইন স্যার যথেষ্ট সহযোগীতা করলেন। সাথে এপিকে শোয়েব সাথে সাথেই আল্ট্রার রিপোর্ট এর ব্যবস্থা করে দিলেন। এই করোনায় অনেকেই যেখানে মেডিকেলে রোগী নিচ্ছে না বা নিতে ভয় পাচ্ছে সেখানে ব্যাথা ওঠা মাত্র কোন চিন্তা ভাবনা ছাড়াই ভরসা করে নিয়ে গেলাম মেডিকেলে এবং ডাক্তারদের সহযোগিতায় তৎক্ষনাৎ চিকিৎসা সেবা পাওয়া সম্ভব হয়েছে।
ঘটনা প্রবাহ- ০২
আমার বান্ধবীর এক আত্মীয়ের মূত্রনালীর সমস্যা নিয়ে চট্টগ্রামে আসে। দীর্ঘদিন একটা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসারত থাকা অবস্থায় থাকলেও যথাযথ চিকিৎসা সেখানে নিতে পারেনি। কেননা তার যে অবস্থা ছিল তাতে বিভিন্ন বিভাগের সমন্বিত চিকিৎসার দরকার ছিল। তাদের অনেক বোঝানোর পরেও তারা চট্টগ্রাম মেডিকেলে যাবে না করোনার ভয়ে। এক মাসের বেশি প্রাইভেটে চিকিৎসা নিয়ে জীবন সায়াহ্নে এসে মেডিকেলে গেল। আর তার দু দিন পরেই সে মারা গেল। এই মৃত্যুর জন্য দায়ী কে? রোগী বা তার আত্মীয় আরেকটু সচেতন হয়ে যথা সময়ে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে আজ হয়তো বা তাকে মৃত্যু মুখে পতিত হতে হতো না।
ঘটনা প্রবাহ- ০৩
খুব কাছের এক ভাই, তার চাচা স্ট্রোক করেছিল। বাসার কেউ বুঝতে পারে নি। এদিকে সময় ২৪ ঘন্টা পার হয়ে গিয়েছিল। লক্ষণ শুনে দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে বললাম কিন্তু তারা ভয়ে রোগীকে হাসপাতালে নিলেন না। ফোন কলে চিকিৎসা দেয় এমন চিকিৎসক খুঁজলেন, এভাবে আরো এক দিন পার হয়ে গেল। পরে রোগী যখন অচৈতন্য অবস্থায় তখন তাদের হুশ ফিরল। দ্রুত একটা প্রাইভেট হাসপাতালে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে গেলেন কিন্তু সাথে সাথেই চিকিৎসক না পাওয়ায় সেখানে ভর্তি করিয়ে একদিন পরে চিকিৎসক দেখাতে পারলেন। এর মধ্যে ইমার্জেন্সীর ডিউটি ডাক্তার কিছু পরীক্ষা করতে দিয়েছিলেন। পরীক্ষায় দেখলেন রোগী স্ট্রোক করেছে এবং তিনি হাসপাতালে রেফার করলেন। রোগীর চিকিৎসা করাতে দেরি করায় রোগীর আজ দু সপ্তাহে এখনো উন্নতি নেই।
সমস্যাটা আসলে কোথায়?
একদল মানুষ যারা নিজেরা রোগীর সমস্যা না বুঝে তাদের চিকিৎসা বিষয়ক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে অতঃপর এর ভুক্তভোগী হচ্ছে শুধু রোগী নিজেই, অধিকাংশই জানে না রোগীর জরুরি চিকিৎসা কি? তার জন্য কতটা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া লাগতে পারে।
প্রতিদিনই কিছু না কিছু রোগী পাচ্ছি যেখানে রোগীকে মেডিকেলে বা হাসপাতালে ভর্তি করা দরকার সেখানে অনেকেই ফোনকলে চিকিৎসা সেবা চায়। অনলাইনে চিকিৎসক খুজেন এবং সেই সাথে সেবা।
আমরা যারা স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে কাজ করছি তারা শুরুতেই তাদেরকে জরুরী সেবার জন্যে বললেও অনেকেই উপেক্ষা করছে। মারাত্মক পরিস্থিতি হবার পরে আবার একই বিষয়ে পরামর্শের জন্যে যোগাযোগ করছে। আমাদের পরামর্শ থেকে বিরত থেকে রোগীর ১২ টা বাজিয়ে পুনরায় আমাদের কাছেই পরামর্শের জন্যে আসছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক
সিলভিয়া মীম