লম্বা ও ঘন চুল মেয়েদের এক বিশেষ গর্বের জিনিস। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক চুল পড়া খুবই স্বাভাবিক। এই সংখ্যাটি ৫০-১০০। প্রতিদিন ৫০-১০০ টি চুল পড়াকে স্বাভাবিক বলে গণ্য করা হয়। এর অর্থ হল, নতুন চুল গজিয়ে পুরাতনের জায়গা নিচ্ছে ।
কিভাবে বুঝবেন আপনার চুল পড়া স্বাভাবিক নেই?
আঁচড়ানোর পর চিরুনিতে বা নিচে পড়া চুল নিয়ে গুনার চেষ্টা করুন, যদি সেখানে ১০০ টির বেশি চুল পাওয়া যায় কিংবা আপনার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মনে হয় কিংবা বাঁধার পর চুল আগের তুলনায় বেশি পাতলা হয়ে আসে তবে আপনার চুল পড়াকে অস্বাভাবিক ধরে নিতে পারেন।
চুল পড়ার কারনঃ
বিভিন্নভাবে ও বিভিন্ন কারণে চুল পড়তে পারে। যেমন, জিনগত কারণ বা জেনেটিক এন্ডজেনিক এলপেসিয়া ‘র কারণে চুল পড়লে তা ফেরত পাওয়া দুষ্কর । কিন্তু যদি তা টেলোজেন ইফ্লুভিয়াম হয় যা কিছু সময়ের জন্য চুল পড়া বাড়িয়ে দেয়, এ থেকে সহজেই পুর্বাবস্থায় ফেরত যাওয়া যায়।
১. প্রোটিন বা আমিষের অভাবঃ নতুন চুলের কোষ তৈরি হবার জন্য চুলের চাই পুষ্টি। চুলের জন্য প্রধান পুষ্টি হল আমিষ জাতীয় খাদ্য। যথেষ্ট পরিমাণ আমিষের অভাবে নতুন চুল গজাতে পারেনা। এর ফলে চুল পাতলা হয় ও কমে যায়।
২. খুশকি বা মাথার ত্বকের সোরিয়াসিসঃ মাথার ত্বক এর বিভিন্ন রোগ এবং খুশকির সমস্যা চুল পড়া বাড়িয়ে দেয়। জোরে চিরুনি দিয়ে আচড়ানো বা নখ দিয়ে চুলকানোর ফলে হেয়ার ফলিকল ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও চুল পড়ে।
৩. শারীরিক ও মানসিক চাপঃ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা ও মানসিক চাপ এর ভেতর দিয়ে গেলে চুল পড়ার হার বেড়ে যায়। পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যা এবং বিভিন্ন মেজর অপারেশন বা রোগের কারণে দ্রুত ওজন হ্রাস হয় ইত্যাদি কারণে চুল পড়ার হার বেড়ে যেতে দেখা যায়।
৪. অটো ইমিউন রোগব্যাধিঃ লুপাস, রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস, থাইরয়েড সমস্যা, সিকেল সেল এনিমিয়া, আয়রন ডেফিসিয়েন্সি এনিমিয়া ইত্যাদি রোগে চুল পড়ার পরিমাণ বেড়ে যেতে থাকে।
৫. চুল বাঁধার স্টাইলঃ বিভিন্নভাবে চুল বাঁধার ফলে চুলের আগা ফেটে যায়, চুল দুর্বল হয়ে পড়ে । টাইট করে পনিটেইল করলে বা বেনি করলে চুল পড়ার হার বাড়তে পারে। আবার অনেকদিন ধরে একই হেয়ারস্টাইল চুল পড়া ত্বরান্বিত করে।
৬. হেয়ারস্টাইল এর ক্ষেত্রে উচ্চ তাপ এর ব্যবহার এবং রিবন্ডিংঃ উচ্চ তাপে ব্লো ড্রাই বা তাপ দিয়ে চুল সোজা করা বা কার্ল করলে চুল তার স্বাভাবিক লাবণ্য হারিয়ে শুষ্ক হয়ে ভেঙে যায়, এর ফলে চুল পড়ে যায়। এছাড়া রাসায়নিক ব্যবহার করে চুল রিবন্ডিং করলে চুল পড়ে যেতে দেখা যায়।
৭. কতিপয় ঔষধের ব্যবহারঃ কিছু কিছু ঔষধ সেবনের ফলে চুল পড়া বেড়ে যেতে পারে। রক্তচাপজনিত রোগে ব্যবহৃত ঔষধ, এন্টি ডিপ্রেস্যান্ট জাতীয় ঔষধে চুল পড়তে পারে। জন্মনিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত ঔষধেও চুল পড়তে পারে।
বিভিন্ন চিকিৎসায় রেডিয়েশনে চুল পড়তে দেখা যায়।
৮. সন্তান জন্মদানের পরঃ মায়েদের ক্ষেত্রে সন্তান জন্মদানের আগে অর্থাৎ গর্ভকালীন সময়ে চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। কারণ এসময় ইস্ট্রোজেন হরমোনের আধিক্য থাকে। সন্তান জন্মানোর পর পর হরমোনের পরিমাণ কমে যেতে শুরু করে এবং চুলের বৃদ্ধি আগের তুলনায় কমে যায় ও চুল পড়া বাড়ে।
প্রতিকারঃ
চুল পড়া সমস্যায় প্রতিকার হিসেবে নিচের অভ্যাসগুলো করতে পারেনঃ
১। আমিষ জাতীয় খাদ্য যেমন, মাছ-মাংস , ডিম-দুধ প্রতিদিন এর খাদ্য তালিকায় যুক্ত করুন। প্রতিদিন একটি ডিম অথবা এক টুকরো মুরগির মাংস আমিষের চাহিদা পুরন করতে পারে।।
২। ভেজা চুল রগড়ে মুছবেন না।
৩। ডাক্তারের দেয়া ঔষধ সেবনে চুল পড়তে শুরু করলে এ সম্পর্কে তাকে অবহিত করুন এবং পরামর্শ মত ব্যবস্থা গ্রহন করুন।
৪। চুলে তাপ ও রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকুন।
৫। প্রাকৃতিক উপাদান সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
৬। মোটা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করুন। বড় চুলের ক্ষেত্রে প্রথমে নিচের অংশ এবং ক্রমান্বয়ে উপরের দিক থেকে এবং সব শেষে পুরো চুল – এভাবে আঁচড়ানোর চেষ্টা করুন, এতে চুল ভাঙার হার কমবে ।
৭। প্রতিদিন ৭-৮ গ্লাস পানি পান করুন ।
৮। চুল ও মাথার ত্বক সবসময় পরিষ্কার রাখুন ।
৯। ধুলাবালি থেকে চুলকে বাঁচাতে স্কার্ফ ব্যবহার করতে পারেন ।
১০। চুল বাঁধার সময় হাল্কা করে বাঁধুন এবং ঘুমানোর সময় ঢিলে করে বাঁধুন ।
১১। চুলের বৃদ্ধি বাড়াতে বিভিন্ন তেল, যেমন- নারিকেল, বাদাম, জলপাই ইত্যাদি তেল বা গন্ধে সমস্যা না হলে সরিষার তেল সপ্তাহে দুদিন ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়।
১২। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার গ্রহন করুন। সবুজ ও হলুদ শাক-সব্জি ও ফল গ্রহন করুন। এছাড়া পুষ্টির চাহিদা পূরণে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও আয়রন সাপ্লিমেন্ট হিসেবে সেবন করতে পারেন।
১৩। দুশ্চিন্তা মুক্ত ও উৎফুল্ল থাকার চেষ্টা করুন ।
স্বাভাবিকভাবে চুল পড়া না কমলে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা করিয়ে চুল পড়ার সঠিক কারণ জানুন এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
ফিচারঃ আরাফাত তান্নুম
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ
আমার মুখের কিছু কিছু জায়গায় দাড়ি উঠছে না এজন্য কোন বিভাগের ডাক্তার দেখাতে হবে? জানালে উপকৃত হব। ধন্যবাদ।