প্লাটফর্ম নিউজ, ২৪ আগস্ট, ২০২০, সোমবার
কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠার পর কারো কারো চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিয়েছে। কোভিড-১৯ ও চুল পড়ে যাওয়ার মধ্যে সম্পর্ক বর্তমান গবেষণায় স্বীকৃতি পেতে শুরু করেছে।
জুলি ফিশার নামে একজন নার্স, যিনি কোভিড আক্রান্ত রোগীদের দেখাশোনা করার কারণে কোভিডের লক্ষণগুলির সাথে সুপরিচিত ছিলেন। পরবর্তীতে নিজে আক্রান্ত হলে অতিরিক্ত চুল পড়া দেখে বিস্মিত হন। তিনি এ সম্পর্কে বলেন,
“আমার গোসল করার সময় প্রচুর পরিমাণে চুল পড়া শুরু করেছিল, প্রথমে আমি ভেবেছিলাম এটি সস্তা শ্যাম্পু ব্যবহার করার জন্য হচ্ছে। পরে কোভিড-১৯ এর উপসর্গ অনেকদিন ধরে আছে এমন ব্যক্তিদের গ্রুপে যুক্ত হয়ে আমি বুঝলাম, আমি একা নই। এটাও কোভিড সংক্রান্ত কোন উপসর্গ।”
সারাতোগা স্প্রিংসের র্যাচেল বাউমের ১০০ দিন এর বেশি সময় ধরে কোভিড-১৯ এর লক্ষণ ছিল। তারও চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা ছিল। এ বিষয়ে ইউসিএলএর ডেভিড জেফেন স্কুল অফ মেডিসিনের স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের ক্লিনিক্যাল প্রশিক্ষক সারা হোগান বলেন,
“একটি মানসিক ও শারীরিক চাপ সৃষ্টিকারী অসুস্থতা বা অভিজ্ঞতার কারণে ৩ থেকে ৫ মাস পরে চুলের ক্ষতি হয়।”
কোভিড এবং চুল পড়া
আমেরিকান একাডেমি অফ ডার্মাটোলজিস্ট চুল পড়ার কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে। সেগুলো হলঃ
•জিনগত
•বয়স
•হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
•অন্যান্য স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা
•ওষুধ এবং
•দুশ্চিন্তা
এসব কারণে চুল ক্ষতি হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশিরভাগ কোভিড-১৯ রোগীর যে ধরনের চুল পড়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে তা হলো টেলোজেন এফ্লুভিয়াম, যা
শারীরিক বা মানসিক চাপ, অধিক তাপমাত্রার জ্বর, অসুস্থতা, ২০ পাউন্ডের বেশি ওজন হ্রাসের কারণে হয়ে থাকে।
সারা হোগান বলেন,
“চুলের জীবনচক্রের তিনটি পর্যায় রয়েছে। ৯০% অবধি বৃদ্ধি পাচ্ছে, ৫% বিশ্রামের পর্যায়ে রয়েছে এবং ১০% অবধি পড়ে যাচ্ছে। যখন কোন বড় দুশ্চিন্তার ঘটনা ঘটে বা ব্যক্তি কোন কারণে শকে থাকে তখন চুলের প্রায় ৫০% পড়ে যায়। এটি জিনগত হতে পারে। ব্যাপারটা অনেকটা পূর্বনির্ধারিত, তবে আমরা জানি না ঠিক কার সমস্যাটি আছে। এছাড়া চুল পড়া অনেকটা ধীর প্রক্রিয়া। একট বড় ঘটনা ঘটে যাওয়ার ৩-৫ মাস পর আমরা অনুধাবন করি। বর্তমানে প্যানডেমিকের কারণে আমরা সেই সময়ে আছি।”
এ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কোভিড থেকে সেরে উঠা কিছু রোগী কেন চুল হারিয়ে ফেলে এবং অন্যরা হারান না, তা জানা বেশ কঠিন।
চুল পড়া দূর করতে করণীয়
চুল পড়া আত্মবিশ্বাস এবং আত্ম-চিত্তকে প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে বিব্রত না হওয়ার এবং নিজেই সমাধানের চেষ্টা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। একজন চিকিৎসক বা চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করে ঔষধ, পুষ্টির ঘাটতি বা হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে হচ্ছে নাকী তা জেনে নেওয়া জরুরি। এছাড়া প্রতিদিনের ঘুম, অনুশীলন এবং পুষ্টির ক্ষেত্রে উন্নতির হিসাব রাখতে হবে।
সারা হোগান রোগীদের মেডিটেশন করার পরামর্শ দিয়েছেন। যদি তা কাজ না করে, তাহলে চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।
তিনি আরো বলেন,
“আপনারা যা করতে পারেন তা হলো ধৈর্য্যের অনুশীলন। এ চুল পড়তে বেশ কয়েক মাস সময় লেগেছিল এবং সমস্যাটি দূর হতেও কিছুটা সময় লাগবে। মনে রাখতে হবে, চুল দীর্ঘমেয়াদী বেঁচে থাকার জন্য অত্যাবশকীয় নয়। সত্যিকারের বিষয়টি হলো, একজন মানুষ এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হচ্ছে। এখন সবকিছু ঠিক হওয়ার সময় দেওয়া উচিত।”
তথ্যসূত্রঃ
https://www.webmd.com/lung/news/20200723/hair-loss-an-unexpected-covid-misery-for-many