প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৫ নভেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার
করোনা পরিস্থিতিতে পরীক্ষা পেছানো ও সেশনজটমুক্ত মেডিকেল শিক্ষাবর্ষ সহ ৪ দফা দাবি নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি করছে ১ম, ২য় ও ৩য় পেশাগত পরীক্ষার মেডিকেল ও ১ম, ২য় পেশাগত পরীক্ষার ডেন্টাল শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, গত ২৭ অক্টোবর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হতে নোটিশের মাধ্যমে জানানো হয়, চলতি বছরের ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের পেশাগত পরীক্ষা নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নোটিশটি পাওয়ার পরেই ১ম, ২য় ও ৩য় পেশাগত পরীক্ষার মেডিকেল এবং ১ম, ২য় পেশাগত পরীক্ষার ডেন্টাল শিক্ষার্থীরা গত ১ নভেম্বর (রোববার) ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডিন অফিসে যান এবং সেখানে তাদের দাবিগুলো জানান।
তাদের দাবি গুলো ছিলঃ
১. করোনার সময়ে ঝুঁকি নিয়ে দ্বিতীয় ঢেউ এর মহামারির মধ্যে পেশাগত পরীক্ষা নয়।
২. সেশনজট নিরসন করে যথাসময়ে কোর্স সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩. বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোয় করোনায় কার্যক্রম বন্ধ থাকাকালীন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৬০ মাসের অতিরিক্ত বেতন নেওয়া যাবে না।
৪. করোনাকালীন শিক্ষার্থীরা কোনভাবেই স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিতে রাজী নয়, বন্ড সই দিয়ে কোনো পরীক্ষা নয় এবং কোনো শিক্ষার্থী প্রফ দিতে এসে করোনায় আক্রান্ত হলে এর দায়ভার কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। উক্ত দাবিগুলো পেশ করার পর কর্তৃপক্ষের যথাযথ সাড়া না পেয়ে তারা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ঐ দিনেই সকাল সাড়ে ১১ টা থেকে শাহবাগ মোড়ে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি করেন। পরবর্তীতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা গণমাধ্যমে তাদের দাবিগুলো জানান এবং তাদের এই সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের অনুরোধ জানান।
প্রথম দিন আন্দোলনের পরেও যথাযথ সাড়া না মিললে পরবর্তীতে ৩ নভেম্বর তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যান এবং তাদের ৪ দফা দাবি পেশ করেন। কিন্তু আশাহত হয়ে তারা সকাল ১০ টা থেকে মহাখালীতে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান কর্মসূচি করেন। এদিকে আজ ৫ নভেম্বর( বৃহস্পতিবার) পুনরায় শিক্ষার্থীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ গিয়ে তাদের দাবি গুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের বরাবার জানালে সেখান থেকে তাদের আশ্বস্ত করা হয় আগামী ৮ নভেম্বর, রবিবার সকাল ১১.৩০ ঘটিকায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত ভিসি, ডিন, সভাপতি( বিএমডিসি) ও অধ্যক্ষ মহোদয়ের সমন্বয়ে একটি ভার্চুয়াল মিটিং এ বিষয়গুলো আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়া হবে।
এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, “করোনার কারণে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সরকার অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে বিকল্প উদ্যোগ নিলেও আমাদের পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি আমাদের জন্য হুমকি।” তারা আরো বলেন, “স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাস সমূহে অবস্থান করা অত্যন্ত কঠিন বিষয়। অনেক ছাত্রাবাসে আমরা একই কক্ষে তিন থেকে চার জন বা তারও বেশি বসবাস করি। অনেকের জন্য একই শৌচাগার ব্যবহার করতে হয়। একটি বেসিন ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী ব্যবহার করেন।”
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ৮ মাস মেডিকেল শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা পতিত হচ্ছেন ভয়াবহ সেশন জটের দিকে। সেই সাথে, বেশিরভাগ বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে এরই মধ্যে সব বেতন পরিশোধের নোটিশ দিয়ে দেয়া হয়েছে।
করোনাকালীন বন্ড সই দিয়ে পেশাগত পরীক্ষায় ঝুঁকি নিয়ে অংশগ্রহণ, অসুস্থ হলে পরীক্ষা দিতে না পারা, বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে বন্ধের মধ্যেও অতিরিক্ত বেতন ও হোস্টেল ফি আদায় প্রভৃতি অমানবিক বিষয়গুলোই মূলত শিক্ষার্থীরা তুলে ধরে এর সমাধানের তাগিদ দিচ্ছেন। পাশাপাশি করোনাকালীন তারা যেন সেশনজটের মুখোমুখি না হোন, এ বিষয়ে তারা কর্তৃপক্ষকে বিকল্প সিদ্ধান্ত নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছেন। এখন অপেক্ষা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের।