প্ল্যাটফর্ম নিউজ, শুক্রবার, ৫ জুন, ২০২০
মাসুদ রানা
সেশন ২০১৪-২০১৫
এমএইচ শমরিতা মেডিকেল কলেজ
ফাইনাল প্রফ পরীক্ষা শেষ হয়েছে, রেজাল্টের জন্য পথ চেয়ে আছে পাস হবে, নাকি ফেল হবে। সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আল্লাহর অশেষ রহমতে পাশ হয়ে গেল। আলহামদুলিল্লাহ!
নিজের নামের আগে ডাক্তার যুক্ত হয়ে গেল। এবার তো মহা খুশি। মনের অতি আনন্দে রাতে আর ঘুম আসছে না। মনের ভিতরে বার বার শুধু উঁকি দিয়ে উঠছে, কবে ইন্টার্নি শুরু করবো। রোগী দেখব। আরো কত কি! তা আর লিখে বোঝানো মুশকিল।
ইন্টার্নি শুরু হয়ে যাবে। শুরুর আগে প্রস্তুতির ব্যাপার আছে। নামের আগে ডাক্তার বসানোর ইচ্ছাটা যে আজ পূরণ হয়েছে। ইন্টার্নি শুরু হবে, তারিখ দিবে দিবে, তার কয়েক দিন আগেই করোনার বৈশ্বিক মহামারীর কারণে সব লকডাউন হয়ে গেল।
কিছু দিনের মধ্যেই মনে হয় সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু না, এ প্রাণঘাতী ভাইরাসের ভয়ংকর রুপ দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। রেজাল্টের পরে প্রায় আড়াই মাসেরও বেশি কেটে গেল। শোনা যাচ্ছিলো ইন্টার্নী শুরু হবে এই মহামারী মধ্যেই। কিন্তু আসলে মনে হয়নি শুরু হবে। কারণ যে ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েই চলছে, আর নবীন চিকিৎসক বলে কথা! ভুলবশত আক্রান্ত হবার চান্সটা একটু বেশি থেকেই যায়।
হঠাৎ করে আসলেই ইন্টার্নির জন্য ডাকা হলো। ডিউটি (রোষ্টার) দিয়ে দিয়েছে। আস্তে আস্তে ডিউটিতে কয়েকজন করে জয়েন করতে শুরু করেছে।
এরই মধ্যে এক দুঃখের খবর চলে এলো, এক সিনিয়ার আপু করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন! কি হবে এখন! সবার চোখে মুখে আতঙ্কে ছাপ। আমার এক কাছের বন্ধু, ওর আবার ইন্টার্ন জীবনের প্রথম ডিউটি পরের দিন রাতে। ওরে ফোন দিয়ে বললাম, এক সিনিয়র আপু করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আরো সাসপেক্টেড আছে। তার আসার দরকার নেই। বাসায় আছো, বাসাতেই থাকো। ও বললো, একটু আব্বুর সাথে আলাপ করে আমাকে পরে জানাবে।
একটু পরে ফোনে ওপার থেকে বন্ধু বললো, তার আব্বু বলেছেন, “এই চিকিৎসা পেশায় যখন এসেছো মানুষের সেবা করার জন্য, একটু জীবনের ঝুঁকি তো থাকবেই। তাই বলে সেবা বন্ধ থাকবে, তা তো নয়। তুমি ডিউটি করো, কিন্তু খুব সাবধানে করবে।”
কথাটা শুনে একটু চুপচাপ ছিলাম। কারণ প্রাণঘাতী ভাইরাস যেখানে অনেককেই মৃত্যুর কাছে হার মানিয়েছে, সেখানে এ রকম এক বাবার কথা শুনে বুকটা ভরে গেল। হাজারো সালাম এ রকম বাবাদের প্রতি।
বেঁচে থাকুক এ রকম বাবারা, সকলের ভালোবাসা ও দোয়া নিয়ে।