সময়টা ২০১৩ সালের মাঝামাঝি। মেডিকেলের পড়াশোনার যাতাকলে পিষ্ট গান পাগল কয়েকটা ছেলে শখের বসে ঠিক করলো একটি গানের দল তৈরি করবে। যেই ভাবা সেই কাজ। পছন্দ অনুযায়ী একেকজন একেকটা বাদ্যযন্ত্র শেখা শুরু করে। তারা প্রত্যেকে আলাদা ব্যাচের, কিন্তু সুরের স্রোতে ধুয়েমুছে যায় সে দূরত্ব। কখনো চা-বাগান বেষ্টিত হোস্টেলের রুমে, কখনোবা ছাদের কোনে, আবার কখনো চা-বাগানের কোন এক টিলার উপর চলতো তাদের প্র্যাকটিস। শ্রাবণের অলস বিকেলে সবাই মিলে যখন গলা ছেড়ে গান ধরত, সেই সুর তখন প্রতিধ্বনিত হত হোস্টেলের প্রত্যেকটা মানুষের অন্তরে। আর এভাবেই জন্ম “প্রতিধ্বনি” র।
বলছিলাম জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের নিজের হাতে গড়া ব্যান্ড “প্রতিধ্বনি”র কথা! শত আইটেম, কার্ড, টার্ম আর প্রফের গ্যাঁড়াকলে থেকেও কয়েকটা মানুষ নিজেদের জমানো টাকায় বাদ্যযন্ত্র কিনে ভাড়া করা প্যাডে গিয়ে প্র্যাক্টিস করছে, নতুন নতুন গান তুলছে, আর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ক্যাম্পাস মাতিয়ে রাখছে তারুণ্যের সুরে; সত্যিই এটা প্রমাণ করে ডাক্তাররা চাইলে পারেন না এমন কোন কাজ নেই।
শুরুর দিকে হাজারো প্রতিকূলতার সাথে যুদ্ধ করে, মেডিকেলের গৎবাঁধা জীবনের শৃঙ্খলমুক্ত হয়ে গুটিকতক গায়েন হবু ডাক্তার শেষপর্যন্ত তাদের মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল ব্যান্ড প্রতিধ্বনির। এর প্রতিষ্ঠার নেপথ্যে ছিলেন তৎকালীন ছাত্র ডা. আদর মোস্তফা নাজমুস সাকিব (গিটার),ডা. তনয় কুমার (ড্রামস), ডা. অনির্বাণ মোদক পূজন (বেস গিটার), ডা. রাহুল গুপ্ত (কন্ঠ), ডা. সৈয়দ তাবারুকুজ্জামান তামিম(রিদম গিটার), ডা. প্রসূন কান্তি দেব (কন্ঠ ও কিবোর্ড) এবং ডা. কাজী আজহারুল ইসলাম (লিড গিটার)
সময়ের পরিক্রমায় ছাত্রজীবন শেষ করে তারা আজ পেশাগত জীবনে ভীষণ ব্যস্ত। তবুও তারা প্রত্যেকেই “প্রতিধ্বনি”-কে ভালবেসে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়ে, যার যার জায়গা থেকে সহায়তা করে ব্যান্ডকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করছেন।। আর বর্তমান সদস্যদের প্রত্যেকেই সেই ভালবাসাকে আঁকড়ে ধরে “প্রতিধ্বনি” র পরিচালনার ভার নিজেদের কাঁধে সযত্নে তুলে নিয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন সৌমিত্র চন্দ স্বাক্ষর ( ড্রামস ও কাহন), এনামুল হাসান নিলয় (বেস গিটার), দীপ্ত দাশ (কন্ঠ, গিটার ও পারকাশন), ডা. মৃদুল গুপ্ত (বাঁশি), শাহরিয়ার আলম রাহি (কন্ঠ), তাসিন কায়সার (গিটার), দেবরাজ চৌধুরী (কণ্ঠ) তথাগত দাস অয়ম (লিড গিটার) ও আবির খান (কিবোর্ড)।
আজকের দিনে ব্যান্ড “প্রতিধ্বনি” জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের সকল সুরের পথযাত্রীদের প্রিয় অঙ্গন।
যাঁদের সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া “প্রতিধ্বনি” র এই পথচলা সম্ভব হত না তাঁরা হলেন অত্র কলেজের মাননীয় অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ আবেদ হোসেন, মাননীয় উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ এ কে এম দাউদ, হাসপাতালের মাননীয় পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ তারেক আজাদ , উপ-পরিচালক ডাঃ আরমান আহমেদ শিপলু, সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ মিজানুর রউফ শৈবাল, ডাঃ সৈয়দ অহিদুল হক (রাতুল)। আর যার প্রত্যক্ষ অনুপ্রেরণা ছাড়া ব্যান্ড “প্রতিধ্বনি” কেবল একটি স্বপ্নই থেকে যেত তিনি হলেন কলেজের সাংস্কৃতিক কমিটির সম্মানীত চেয়ারম্যান, অধ্যাপক ডাঃ শামীমা আখতার।
ব্যান্ড “প্রতিধ্বনি” এখন জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের কাছে একটি ভালবাসার নাম। কলেজে নবীনবরণ, সরস্বতীপূজা, বসন্ত বরণ, র্যাগ ডে, বর্ষবরণ সহ প্রতিটি অনুষ্ঠানে থাকে “প্রতিধ্বনি” র সরব উপস্থিতি। মূলত বাংলা গানের প্রতি ভালোবাসা থেকেই জন্ম প্রতিধ্বনির। সফট রক, বাংলা ব্যান্ড এবং আধুনিক বাংলা গানগুলির চর্চাতেই মনের খোরাক মেটায় ব্যান্ডটি। দেশীয় সংস্কৃতিকে লালন করতে ফোক গানের চর্চাও চলে সমান তালে। প্রতিধ্বনির সদস্যদের স্বপ্ন হল হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানিমুক্ত এক ভালবাসাময় পৃথিবীর। তারা বিশ্বাস করে একমাত্র সুরের মাধ্যমেই মানুষের কোমল প্রবৃত্তিকে জাগিয়ে তুলা সম্ভব। আর বিশেষ করে যেখানে চিকিৎসা ও সেবার মেলবন্ধন ঘটে সেখানে হবু ডাক্তারদের মনে এই কোমলতার একান্ত প্রয়োজন। তাইতো তারা সুরের পূজারী।
সময়ের আবর্তনে নতুন নতুন গানপাগলেরা এসে “প্রতিধ্বনি”কে এগিয়ে নিয়ে যাক, আর সবাইকে আপ্লুত করুক অপার সুরের মূর্ছনায়। “প্রতিধ্বনি”র জন্য রইলো অনেক শুভকামনা আর ভালবাসা।
প্ল্যাটফর্ম ফিচার রাইটারঃ উর্বী সারাফ আনিকা
৫ম বর্ষ,রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ।