ড্যানিয়েল ফিরেরা ডস সানতোস, তার গর্ভকালীন সময়ের পঞ্চম মাসে বেশ অসুস্থ হয়ে যায়। তার প্রচন্ড জ্বর আর লাল ফুসকুরি হয় সারা শরীর জুরে। সে খুব দ্রুত সুস্থও হয়ে উঠে। এর কিছুদিন পর তিনি হাসপাতালে তার গর্ভকালীন পরীক্ষার জন্য গেলে সে জানতে পারে যে তার গর্ভস্থ শিশুটির মস্তিষ্কের গঠন ক্ষতিগ্রস্ত। এরপর ডিসেম্বরে তার বাচ্চা, জুয়ান পেদ্রো ভূমিষ্ঠ হলে দেখা গেল তার মস্তিষ্ক মাত্র ২৬ সে.মি যা স্বাভাবিক নবজাতকের চেয়ে ২০% কম।
সনতোস আগে কখনোই জিকা ভাইরাসের পরীক্ষা করে নাই, কিংবা সে এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত ছিল কিনা সে সম্পর্কেও তার কিছু জানা নেই। তবে সে তার নবজতকের এই অবস্থার জন্য এই ভাইরাসকেই দায়ী করে, কেননা সে ব্রাজিলের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এমন এক শহরে থাকে যেটাকে জিকা ভাইরাসের জন্য অনুকূল পরিবেশ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। আর পেদ্রো ব্রাজিলের সেই ৩৭০০ বাচ্চাদের একজন যাদের মাইক্রোসেফালি আছে যেটা জিকা ভাইরাস সংক্রমনের একটি লক্ষণ।
প্রধানত আফ্রিকা থেকেই এশিয়া আর ব্রাজিলে এই ভাইরাসের আগমন। ব্রাজিলের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ক্রান্তীয় আবহাওয়া, নিম্ন আর্থসামাজিক অবস্থার আর এডিস মশার প্রকোপের কারণে এই এলাকায় এই ভাইরাস অনেকটা দাবানলের মতই ছড়িয়ে পরছে।
ইয়েল স্কুল অব পাবলিক হেল্থ এর রোগত্বত্তের প্রফেসর, ডা. অ্যালবার্ট কো-এর মতে, ব্রাজিলের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এই শহর, রিসিফ জিকা ভাইরাসের বৃদ্ধির জন্য অনুকূল। তিনি আরও ধারনা করেন যে ব্রাজিলে এই ভাইরাসের অনুপ্রবেশ ঘটেছে ২০১৪ এর ওয়ার্ল্ড কাপে আগত পর্যটকদের মাধ্যমে। রিসিফ শহরের বসবাসকারী সানতোস ও তার মত হাজারো পরিবারের জন্য মশা একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের বাসার পাশ দিয়ে চলে গিয়েছে বর্জ্য নিষ্কাশনের ড্রেন, আর সাথে আছে আশেপাশে পরে থাকা খালি বোতল বা কনটেইনারে জমে থাকে বৃষ্টির পানি, যা মশার প্রজননের জন্য একটি উত্তম ক্ষেত্র।
ব্রাজিলে সবসময় এরকম মশার প্রকোপ ছিল না, ১৯৪০ ও ১৯৫০ সালে ব্রাজিল সরকারের মশা নির্মূল পদক্ষেপের মাধ্যমে ১৯৫৮ সালে ব্রাজিলকে মশা মুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষনা করা হয়ে ছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মশা আবার ফিরে এসেছে। যার প্রধান কারন হচ্ছে অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে ওঠা শহর আর তাদের অপর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও বর্জ্য নিস্কাষন ব্যাবস্থা। কুওটো মাইয়া হাসপাতালের ডাক্তার সিউসি নানস এর মতে, এই এলাকায় পানি সরবরাহ অপর্যাপ্ত হওয়ায় শহরবাসী তদের ব্যাবহারের জন্য পর্যাপ্ত পানি ট্যাংকে জমা করে রাখে, যা মশার বংস বৃদ্ধির জন্য সহায়ক। তার মতে এগুলো ছাড়াও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মশা নির্মূল পদক্ষেপের প্রতি উদাসীনতাও মশা বৃদ্ধির একটা কারণ।
দিন দিন মশার প্রকোপ এতোটাই বেড়ে যাচ্ছে যে ব্রাজিলের প্রধানমন্ত্রী ডিলিমা রউসেফ এডিস মশার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছেন। তিনি ২২০০০০ জন আর্মড ফোর্সেস সদস্য নিয়োগ করেছেন, যারা বাড়ী বাড়ী গিয়ে জনগনকে মশার প্রকোপ রোধের প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন করবে।
একদল গবেষকদের ধারনা করছেন এডিস ছাড়াও হয়তো কিউলেক্স প্রজাতির মশাও জিকা ভাইরাসের বাহক হিসেবে কাজ করছে। কারন রিসিফ শহরে এডিসের চেয়ে কিউলেক্সের প্রকোপ বেশী। আর যদি তাদের এই ধারনা সত্যি হয় তাহলে এই ভাইরাসের প্রতিরোধ যতটুকু চিন্তা করা হয়েছিল তার থেকে কঠিন হবে। কেননা কিউলেক্স মশা বংশ বিস্তার করে নোংরা পানিতে।
তাই আপাতোত এই ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায় হচ্ছে মশার কামড় থেকে বাঁচা। আর একারনেই দিন দিন রিসিফে মসকিউটো রিপেলেন্ট ক্রিমের চাহিদা বাড়ছে। এই বেড়ে চলা চাহিদার সাথে সাথে রিপেলেন্ট ক্রিমের মূল্যও বাড়ছে। একারনে ব্রাজিল সরকার অসচ্ছল গর্ভবতি মায়েদের বিনামূল্য রিপেলেন্ট ক্রিম সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত ঘোষনার পর, সানতোসকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তার কাছে কি কোন মশা নিবারক ছিল কিনা? উত্তরে সে শুধু হাসলো। জন্মের পর থেকেই অন্যান্য মাইক্রোসেফালি বাচ্চাদের মতো পেদ্রোও রাতদিন কাঁদতে থাকলো। সে ঘুমানোর সময় মাত্র কয়েক ঘন্টার জন্য থামে। সেই মূল্যবান সময়গুলোতে সান্তোস তার আঙ্গুলগুলো পেদ্রোর বুকের কাছে রাখে যেটাকে সে আঁকড়িয়ে ধরে। না হলে পেদ্রো তার ছোট আঙ্গুল দিয়ে খামচি কেটে নিজেকে জাগিয়ে তুলতো। সে বলেছিল, তার স্বামী বাচ্চার অবিরত হৈ চৈ এর জন্য রাগান্বিত ছিলেন, যেটা তার টেলিভিশন শো দেখার সময় বিরক্ত করতো। ছেলের যথাযথ জন্ম না হওয়ায় সে গভীরভাবে হতাশ ছিল। কয়েক সপ্তাহ পরে পেদ্রো বাসায় আসলো, তার বাবা চলে গেলেন। যাওয়ার সময় টেলিভিশনটাকে নিয়ে গেলেন যেটা ছিল তাদের ছোট্ট ঘরের সৌখিন বস্তু।
বাংলাদেশ কি জিকার ঝুঁকি থেকে মুক্ত?
যদিও জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলেও এ ভাইরাস নিয়ে বাংলাদেশে শঙ্কার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘রোগ বিস্তারকারী এডিস মশা এখানে আছে। যেহেতু ভাইরাসটি এখনো এ দেশে নেই আর তাই এখনই এটিকে চিন্তার কারণ হিসেবে মনে করছি না।’
সুত্র ঃ ইন্টারনেট
অনুবাদ ঃ নওমি নূর,ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল।
link ta to pora jasse na
koi..ami to parcchi..onno kauk dekhte boloto
Thanks for such contemporary topic.
Very good translation.
কোন লিনক?