প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৫ জুলাই, ২০২০, বুধবার
সারা দেশে কেবল অক্সিজেন সংকটের কারণে করোনা আক্রান্ত বহু রোগী মারা যাচ্ছে। হাসপাতাল অব্যবস্থাপনার কারণে অনেক সময় অক্সিজেন থাকার পরও রোগীরা সেটা পাচ্ছে না। সময় মত অক্সিজেন সরবরাহ না পাওয়ার জন্য করোনা ওয়ার্ডের রোগীর মৃত্যুর হার বাড়ছে। করোনা রোগীদের শ্বাসকষ্ট শুরু হলে অতি প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে এই অক্সিজেন। করোনা সংকটকালীন সময়ে যখন মানুষ অক্সিজেন সিলিন্ডারের অভাবে প্রতিদিন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে ঠিক সেই সময় “পে ইট ফরওয়ার্ড বাংলাদেশ”, “মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন” এবং “নেসার ফাউন্ডেশন” এর উদ্যোগে মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা ‘অক্সিজেন ব্যাংক’।
“পে ইট ফরওয়ার্ড বাংলাদেশ” এবং “মানুষ মানুষের জন্য” ফাউন্ডেশন এর যৌথ উদ্যোগে সারা দেশে ইতোমধ্যেই অনেক পিপিই বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে। তাদের এবারের উদ্যোগ বিনামূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ।
চট্টগ্রামের আলোচিত অজ্ঞাতনামা রোগীদের বন্ধুখ্যাত সাইফুল ইসলামের “নেসার” এবং মানবিক সংগঠন “অনেস্ট” একটিমাত্র অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে এ যাত্রা শুরু করেছিলেন। পরে এ উদ্যোগে এগিয়ে আসে “পে ইট ফরোয়ার্ড বাংলাদেশ” ও “মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন”। সহায়তা দেয় ঢাকা ও চট্টগ্রামের অন্তত ২৫টি রোটারি ক্লাব। আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসেন পে ইট ফরোয়ার্ডের সদস্য ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা।
চট্টগ্রামে শুরু হওয়া এ উদ্যোগ এখন ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকা, সিলেট, বরিশাল, রাজশাহী, কুমিল্লা, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
কিছু শর্ত সাপেক্ষে, নিজস্ব বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মতামত অনুযায়ী অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে। অক্সিজেন ব্যাংক প্রজেক্টে এ পর্যন্ত ৮০ টার উপরে সিলিন্ডার কেনা হয়েছে। খরচ গেছে প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা। দেশের বিভিন্ন স্পটে ৩৫০+ সিলিন্ডার দিয়ে সেবা চলছে ২৪/৭। এই প্রজেক্টে অনেকেই নিজের ঘরের সিলিণ্ডার জমা দিয়েছেন সর্বোচ্চ ব্যবহার এর জন্য। দেশ-বিদেশ থেকে অনেকেই পাঠিয়ে দিয়েছেন ডোনেশন। অনেক ডাক্তার সারাক্ষণ টেলিমেডিসিন সেবা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও লজিস্টিকসে আছেন একদল। কার্যক্রম চলছে প্রায় ৬টি বিভাগীয় শহর।
ডোনারবৃন্দ, সেবাপ্রত্যাশী এবং সংশ্লিষ্ট সকলের স্বার্থ বিবেচনায় রেখে তাঁরা একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার নীতিমালা প্রণয়ন করেছে :
- অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারের জন্য আমরা কোনো ফি নিচ্ছি না। তবে, ব্যবহারের পরে কেউ চাইলে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এই কর্মকান্ড অব্যাহত থাকবে এবং আরও বেগবান করার জন্য অনুদান প্রদান করা যাবে।
- সিলিন্ডারের জন্য নিরাপত্তা জামানত হিসেবে টাকা ১০০০০/- জমা দিতে হবে। নিয়ম মেনে সিলিন্ডার ফেরত দেয়া হলে এই সম্পূর্ণ টাকাই ফেরতযোগ্য। কেউ এই টাকা জমা দিতে অপারগ হলে, পরিস্থিতি বিবেচনায় বিনা জামানতেও সিলিন্ডার দেয়া যেতে পারে।
- বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতামত অনুযায়ী অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৩ বা এর নীচে আসলে অক্সিজেন প্রয়োজন হবে। ৯০ এর নীচে আসলে প্রয়োজন হবে ‘হাইফ্লো অক্সিজেন’এর, যা কেবল হাসপাতালেই দেয়া সম্ভব। এই বিবেচনায় সিলিন্ডারগুলো প্রাথমিকভাবে দু’দিন ব্যবহারের জন্য দেওয়া হবে। কেবলমাত্র আমাদের তালিকাভুক্ত ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী বিশেষ বিবেচনায় এই সময় বাড়ানো হবে। যৌক্তিক কারণ ছাড়া সিলিন্ডার ফেরত প্রদানে বিলম্বের জন্য নিরাপত্তা জামানত থেকে দৈনিক টাকা ১০০০ হিসেবে জরিমানা কেটে রাখা হবে।
- সিলিন্ডার এবং সম্পূর্ণ সেট বুঝিয়ে দেওয়া হবে; অক্সিজেন ব্যাংক প্রজেক্টের উদ্যোগে শামিল স্বেচ্ছাসেবী ডাক্তাররা প্রয়োজনে সঠিকভাবে অক্সিজেন দেয়া এবং ফ্লো নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে পরামর্শ দেবেন। কিন্তু ব্যবহারকারীদের কোনো ভুলের জন্য কোন দুর্ঘটনা হলে তাতে তারা দায়বদ্ধ থাকবেন না।
অক্সিজেন ব্যাংক এর কর্মকাণ্ড যেসব জায়গায় পৌঁছেছে, সেগুলোর ফোন নাম্বার নিচের ছবিতে সংযুক্ত করা হলো:
এভাবেই গড়ে উঠছে একটা বিশাল ব্যাংক, অগণিত মানুষের ভালোবাসায় অনেক অনেক মানুষের জীবন বাঁচানোর তরে।
ফান্ডরেজার লিংক :https://www.facebook.com/donate/2358908771076031/