ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক আছেন মাত্র ৪০ জন

সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪

চিকিৎসক ও অন্যান্য জনবল সংকটে ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে স্বাস্থ্য সেবা ব্যাহত হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় হাসপাতালটিতে চিকিৎসক, নার্স ও সহায়ক জনবলের সংকট দীর্ঘদিনের, কিন্তু এখনো মিলেনি কোন সমাধান। ফলে ভর্তি হওয়া রোগীদের সেবা দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এছাড়া বরাদ্দ কম থাকায় ওষুধ সংকট রয়েছে জেলার বৃহত্তর চিকিৎসা সেবাদানকারী হাসপাতালটি।

সূত্রে জানা গেছে, ছয়টি উপজেলা নিয়ে গঠিত ঝিনাইদহ জেলার মোট জনসংখ্যা প্রায় ২০ লাখের বেশি। সদর উপজেলা ছাড়া বাকি পাঁচ উপজেলায় রয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও গুরুতর রোগীদের চিকিৎসা সেবা অপ্রতুল৷ ফলে জটিল বা গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যায় জেলায় বসবাসরতদের একমাত্র ভরসা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল। কিন্তু চিকিৎসক, নার্স ও সহায়ক জনবল সংকটে কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।

হাসপাতালের তথ্য বলছে, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের মোট পদ আছে ৬৩টি। চিকিৎসক আছেন ৪০ জন। পদ শূন্য ২৩টি।  এ ছাড়া সিনিয়র স্টাফ নার্স পদে ১৩টি, মিডওয়াইফ পদে ৬টি, স্টাফ নার্স পদে ২টি এবং অকুপেশনাল থেরাপিস্ট পদে ১টি সহ মোট ২৩টি শূন্যপদ রয়েছে। হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক, নার্স সহ বিভিন্ন পদে ২৬৮ টি পদের চাহিদা দেয়া হলেও ১৯১টি পদ পূরণ করেছে সরকার। বাকি ৭৭টি পদে কোনো জনবল নেই। এছাড়া তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী  সংকটেও ভুগছে হাসপাতালটি। তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারীদের ২২টি পদ শূণ্য রয়েছে। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কিছুকিছু কাজ করা হলেও প্রশিক্ষিত জনবল না থাকায় ভোগান্তি কমছে না।

হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্গানোগ্রাম ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী যে জনবল থাকার কথা, তার কাছাকাছিও নেই। প্রতিমাসে এই হাসপাতাল থেকে জেলার অন্তত ৫০ হাজার মানুষ বহির্বিভাগে সেবা নিয়ে থাকেন৷ সে হিসেবে প্রতিদিন সেবা নেন ১৬০০ এর বেশি রোগী। গুরুতর রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসাপাতাল হলেও রোগীর চাপ বেশি থাকায় নিয়মিত ভাবে হাসপাতালটিতে ৫ শতাধিক রোগী ভর্তি থাকেন৷ ফলে সীমিত সংখ্যক চিকিৎসক ও নার্স দিয়ে বহির্বিভাগ ও ভর্তি হওয়া রোগীদের সেবা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

হাসপাতালের প্রশাসনিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নভেম্বর মাসে এই হাসপাতাল থেকে বহির্বিভাগে স্বাস্থ্য সেবা নিয়েছেন ৪৪ হাজার ৫৬৯ জন। এর মধ্যে শিশু, মহিলা, সিজারিয়ান ও প্রসূতি, ডায়রিয়া এবং সার্জারি রোগী রয়েছেন।

হাসপাতালের নবনিযুক্ত তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্ল্যাটফর্মকে বলেন, ‘আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ চলমান। এ ছাড়া ওষুধ ক্রয় ও বিতরণে আগে যেসব অনিয়ম বা গতানুগতিক পদ্ধতি ছিল, আমি সেগুলো পরিবর্তনের চেষ্টা করে যাচ্ছি। জনবল সংকট কমে গেলে সেবা বাড়ানো যাবে। তারপরও চিকিৎসক, নার্স সহ সকলেই আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, মানুষ যাতে সেবা পায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি নতুন ধারা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। হাসপাতালে যেন রোগীদের কোনো ভোগান্তি না থাকে, দালালদের দৌরাত্ম না থাকে, সেসব বিষয়ে হার্ডলাইনে কাজ করছি। আমাদের শয্যা সংখ্যা সীমিত। ২০ লাখ জনগোষ্ঠীর জন্য শয্যা সংখ্যা আরও বাড়ানো প্রয়োজন।’

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২৫০ শয্যা হাসপাতালের জন্য যত সংখ্যক জনবল থাকার দরকার, এই হাসপাতালে সেটি নেই। তারা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এসব নিয়ে প্রতিবেদন দিয়েছেন। ওষুধ বন্টন, পরিচ্ছন্নতা, নিয়মানুবর্তিতা, পেশাদারিত্বের নিশ্চয়তা তৈরিতে সকলের প্রচেষ্টা রয়েছে। জনবল সংকট ঠিক করা গেলে চিকিৎসা সেবা আরও সহজ ও উন্নত হবে।

প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদকঃ মঈন উদ্দীন আহমদ শিবলী।

Moin Uddin Ahmad Sibli

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

৪৭তম বিসিএসের আবেদন স্থগিত

Mon Dec 9 , 2024
সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার অনলাইন আবেদন অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হয়েছে। আজ সোমবার বিকেলে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে এ কথা জানিয়েছেন। তবে অনলাইন আবেদন স্থগিতের বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি তিনি। আগামীকাল ১০ ডিসেম্বর সকাল ১০টায থেকে আবেদন শুরুর কথা ছিল এবং ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo