প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৩ মার্চ ২০২১, মঙ্গলবার
অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া
চিকিৎসক, কাউন্সিলর,
সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার,
ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার, বাংলাদেশ।
খুব কাছের একজনের ফোন পেলাম রাত তিনটায়। ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। খুব অস্থির করছে। বাবা-মা বুঝতে পারছেন না কি করবেন। কারন খুঁজতে যেয়ে দেখা গেল, ছেলেটি দেশের নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষে পড়ে। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। সম্ভ্রান্ত পরিবার। কোচিং ভর্তি হওয়া থেকে জুতো কিনতে যাওয়া- সবখানেই মা সাথে নিয়ে যেতেন। এমনকি বাবা- মায়ের মাঝে এক বিছানায় ঘুমিয়ে পড়াটাও তার নৈমিত্তিক রুটিন ছিল কলেজ অবধি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে ভর্তির পর পরই হোস্টেল জীবন শুরু। পদে পদে সিনিয়রদের র্যাগিং, প্রতি পরীক্ষায় ফার্স্ট হবে মগজের আশৈশব নির্দেশের প্রতিধ্বনি, কারো সাথে মিশতে না পারার অক্ষমতা নিয়েও প্রথমবার ডিন’স এ্যাওয়ার্ড পেলো ছেলেটা। কিন্তু ভেতরে ভেতরে যে সে ক্ষয়ে যাচ্ছিল এটা কেউ বুঝতে পারেনি। মা নিয়ম করে টিফিন বক্সে বেশি করে খাবার পাঠিয়েছেন বন্ধুদের সহ। বাবা হাত খরচ দিয়েছেন উজার করে। কিন্তু কেউ জানতে চায়নি, ছেলেটার ‘ভেতরের আমি’ কেমন আছে?
লজ্জায় ছেলেটিও বলে নি যে বন্ধ ঘরে কিভাবে সিনিয়ররা নীল ছবি ছেড়ে গিয়ে তাকে কাপড় খুলিয়ে অশ্লীলতার চূড়ান্ত করেছে। কাউকে বলতে না পারার এই কষ্ট, ভুলতে না পারার এই যন্ত্রণা ধীরে ধীরে নীরবে তাঁকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। এরপর যেদিন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের ভিডিওটি দেখেছে সাথে সাথে প্যানিক অ্যাটাক শুরু হয়েছে।
তারপর সেই কাউন্সেলিং টেবিলের গল্প-
আমরা বাচ্চাদের বড় করতে অংক, ইংরেজি, বিজ্ঞান, নাচ, গান, ছবি আঁকা কত কিছু শেখাই কিন্তু নিজেকে কিভাবে ভালো রাখতে হয় সেটা শেখাই না। জীবনের উত্থান- পতন কিভাবে গ্রহণ করতে হয় সেটা শেখাই না। ফার্স্ট হলে সেলিব্রেট করি এক গাল হেসে কিন্তু ফেল করলে কখনোই বলিনি ঠিক আছে। কখনো কখনো জীবনে আমরা সবাই ফেল করি। বাচ্চার সাথে নিজের অজান্তেই দূরত্ব তৈরি হয়। ফলে মা- বাবা উজাড় করে দিলেও বাচ্চা তার অনেক লজ্জার কথা বাবা- মার সামনে বলতে পারেনা।
বাচ্চারা নিঃশ্বাস নিক খোলা মনে। বেয়াদবির চিন্তাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ওর কি মন চায় অকপটে শুনুন। কেন ভিন্নমত পোষণ করছেন সে লজিকগুলো বাচ্চাকে বুঝিয়ে বলুন। বাচ্চার সিদ্ধান্ত বাচ্চাকেই নিতে দিন। বাচ্চাকে শুধু সাফল্যের জন্য কংগ্র্যাচুলেট না করে প্রতিদিন যে আপনার পাশে থাকে তার জন্য স্বীকৃতি দিন, ধন্যবাদ জানান।
ভালোবাসা মানে শর্তহীনভাবে পাশে থাকা। মানুষের পাশে থাকতে পারা মানুষগুলোর জন্য অনেক অনেক সম্মান ও ভালোবাসা।