লিখেছেন ঃ ডাঃ মোহিব নীরব, প্রতিষ্ঠাতা-প্ল্যাটফর্ম
সামান্য হাঁচি কাশি থেকে কফের সাথে রক্ত যাওয়ার মত মারাত্মক সমস্যা বা যে কোন অসুখে একজন অসুস্থ ব্যক্তি যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হন-
কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে?(অসুখ কতটুকু তীব্র হলে)
কোন চিকিৎসকের কাছে যাবে(কোন বিষয়ের)?
কোথায় এবং কার কাছে যাবে? (চিকিৎসা কেন্দ্র ও চিকিৎসকের নাম, ঠিকানা)?
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে সিরিয়াল পাওয়া যাবে? (হাসপাতালে দীর্ঘ লাইন, রোগী পেশাজীবী হলে সময় বের করা)
তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে “ডক্টোরোলাডটকম” বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জন্য এ চ্যালেঞ্জগুলো সমাধানে কাজ করে যাচ্ছে। সবার জন্য সহজলভ্য চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের জন্য ডক্টোরোলাডটকম বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, হাসপাতাল ও চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র, স্বাস্থ্য সেবা সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে যেভাবে কাজ করছেঃ
বাংলাদেশের সকল চিকিৎসক, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রকে একটি নেটওয়ার্কে নিয়ে আসা যার ফলে একজন অসুস্থ ব্যক্তি এ উদ্যোগের মাধ্যমে তাঁর বাসার নিকটস্থ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে তাঁর সুবিধাজনক সময়ে দেখাতে পারবেন। (জরুরী সেবা এবং সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র পর্যায় ক্রমে যুক্ত করা হবে)। এর ফলে শহর কেন্দ্রিক বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা কেন্দ্রিক প্রচলিত ব্যবস্থায় রোগীদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সংক্রান্ত জটিলতা কমে আসবে।
নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা তথ্য ভাণ্ডার এবং ২৪ ঘন্টা চিকিৎসা উপদেশ(ব্যবস্থাপত্র নয়) দেয়ার ব্যবস্থা করা। চিকিৎসা সম্পর্কিত যে কোন জিজ্ঞাসা, প্রাথমিক চিকিৎসা, রিপোর্ট ও ব্যবস্থাপত্র ব্যখ্যা করা ইত্যাদি সেবা। এর ফলে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য জ্ঞানের অভাবে প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা না নেয়া জনিত জটিলতা এবং মৃত্যু ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হবে।
দেশ জুড়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, চিকিৎসক ও ডেন্টিস্টদের মাঝে রেফারেল ব্যবস্থা গড়ে তোলা। প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই সেখানে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের মাধ্যমে ও টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান ও রেফার করা। এর ফলে দেশের নাম করা হাতে গোণা কয়েকজন চিকিৎসকের চেম্বারে অবাস্তব সিরিয়ালের বদলে যোগ্যতা সম্পন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তথ্য রোগীদের কাছে সহজলভ্য হবে।
ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ক্লিনিক এবং হাসপাতালগুলোর তথ্য সংরক্ষণ ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। এর ফলে রোগীদের বিভিন্ন টেস্ট ও সেবার মান ও মূল্য সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা খাতের পজিটিভ ব্র্যান্ডিং এর মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশীদের বাংলাদেশে চিকিৎসা সেবা নিতে উদ্বুদ্ধ ও সহায়তা করা।
নিয়মিত বিনামূল্যে হেলথ ক্যাম্প, হেলথ চেক আপ এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা মূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা। প্রতি মাসে একাধিক হেলথ ক্যাম্প, প্রতি সপ্তাহে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অংশগ্রহণে রেডিও অনুষ্ঠান, বিভিন্ন হেলথ ফেয়ারে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও বিশেষ দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে, মেডিকেল কলেজ হাসপতালে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে স্বাস্থ্যবার্তা পৌঁছে দেয়া।
বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের জন্য বিশেষায়িত স্বাস্থ্য সেবা কর্মসূচী প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন যেমনঃ কর্পোরেট হেলথ বিজি লাইফ হেলথ কানেক্ট এর মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট সেবা প্রদান। দেশি ও আন্তর্জাতিক চিকিৎসকদের সোসাইটি, চিকিৎসাসেবা সংশ্লিষ্ট সংস্থা, তথ্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, উদ্যোক্তা, সরকারি কর্তৃপক্ষ, বেসরকারী উন্নয়ন সহযোগী সকলকে বাংলাদেশের সকল মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের জন্য এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা।
ডক্টোরোলাডটকম তাঁদের কার্যক্রম অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, ব্লগ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, হটলাইন ও কলসেন্টারের মাধ্যমে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের ৫৬ জেলায় ৬১৬৮ জন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক, ৪১১টি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সাহায্যে পরিচালিত করছে।
ডক্টোরোলাডটকম’এর এই উদ্যোগে ঘরে বসেই যেমন পাওয়া যাবে নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্য তথ্য(কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে, ওয়েব সাইটে/সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পেইজে মেসেজ করে), আপনার বাসার সব চেয়ে কাছের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেম্বারের ঠিকানা(ওয়েব সাইটে/হট লাইনে কল করে), বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সিরিয়াল দিতে পারবেন আপনার সুবিধাজনক এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কন্সাল্টেশন আওয়ারে(ওয়েব সাইট/হট লাইন) এবং আপনি চিকিৎসা সেবা নেবার পর আপনার সন্তুষ্টির কথা জানাতে পারবেন এবং সকল স্টেপে ডক্টোরোলা থেকে আপনার সাথে যোগাযোগ করা হবে। আপনার কাজ শুধু আপনার অসুবিধার কথা, এবং আপনি যে শহরে থাকেন সেটা ডক্টোরোলা কে জানানো। এবং এ সকল সুবিধা একে বারেই বিনামূল্যে।
যতটুকু লিখলাম সবগুলোই পাস্ট টেনস অর্থাৎ ডক্টোরোলাডটকম ইতিমধ্যে এ কাজগুলো করছে এবং ব্যক্তিগতভাবে এবং প্ল্যাটফর্মের ওয়ার্কিং টিমের অংশ হিসেবে কাজের মাধ্যমে দেশের মানুষের জন্য অল্প কিছু অবদান রাখছি বলে মনে করি। ভবিষ্যত পরিকল্পনার প্রায় অবিশ্বাস্য ডিজিটগুলো, এবং সম্পূর্ণ অসম্ভব পরিকল্পনাগুলো বাস্তবের জন্য তৈরি হচ্ছি। এ লেখায় মোটাদাগে উদ্যোগ সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়েছে, সাধারণ মানুষ ও রোগীর সুবিধা, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও প্রতিষ্ঠানের সুবিধা নিয়ে আপনাদের জানার আগ্রহে থাকলে আলাদা করে বিস্তারিত লেখা যাবে।
তলা বিহীন ঝুড়ি থেকে লাফ দিয়ে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি সম্মানজনক অবস্থানে এসেছে। স্বাস্থ্য খাতের অবিশ্বাস্য সাফল্যে দেশের জনগণ, সরকার, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রতিনিধি আইসিডিডিআর,বি, ব্র্যাক, গ্যাভি, গ্লোবাল ফান্ড, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অবদান অনস্বীকার্য, তেমনি ভবিষ্যতের বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে দি নেক্সট বিগ থিং হিসেবে ডক্টোরোলাডটকম, জিয়ন এবং সহযোগীরা যে উঠে আসছে তা জানাতে এ লেখা।