It isn’t a hospital, it is a school of humanity where treatment is free not only for poor but also by poor
Dr.Edrick S Baker এমন একজন ব্যক্তিত্ব যাঁকে “মহান ” শব্দটি দ্বারা বিশেষায়িত করা যায় না, যাঁকে নোবেল পুরষ্কার দ্বারাও পুরষ্কৃত করা যায় না। কারণ মহান শব্দটি ইদানিং এমন অনেকের নামের আগে বসে যারা আদৌ এর যোগ্য নয়। আর নোবেল পুরষ্কারের কথা কি বলব… এটা তো সুদ খেয়েও পাওয়া যায় গুলি খেয়েও পাওয়া যায়। যেটা পাওয়া যায় না সেটা হল সম্মান, ভালবাসা। আর সেটাই পাওয়ার যোগ্য এই অদ্ভুত মানুষটি।
ইত্যাদিতে দেখার পরে কখনোই ভাবিনি যে তাঁর সাথে দেখা করতে পারব। কিন্তু আমার বন্ধু বাবনের অদম্য আগ্রহে সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেকের চোখ ফাঁকি দিয়ে অবশেষে তা সম্ভব হয়েছে।
ইউরোপ আমেরিকার বিলাস বহুল জীবনকে পদাঘাত করে তৃতীয় বিশ্বের একটি হত দরিদ্র দেশ বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলার কাইলাকুরীর মত একটি বন্য জায়গায় যেখানে এখনো সভ্যতার আলো ঐ অর্থে পৌঁছেনি, যেখানে নাছোড়বান্দা নেটওয়ার্কটাও পিছু ছেড়ে দেয়, সেখানে বাংলা মায়ের হতদরিদ্র সন্তানদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সেবার দুহাত বাড়িয়ে এই কসাই (ডাক্তার) মানুষটি। যিনি একে একে জবাই দিয়েছেন তাঁর সকল শখ আহ্লাদ, আর তিলে তিলে সেবা ও স্বাস্থ্য বিপ্লব ঘটিয়েছেন দুর্গম অরণ্যের বুক চিড়ে একদল স্বল্পশিক্ষিত অথচ সুশিক্ষিত নিরলস কর্মী নিয়ে। নিজ হাতে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করেছেন এমন একদল কর্মী বাহিনী নিরলস সেবা দানই যাদের ব্রত। নিজের চেতনার বীজ বুনে দিয়েছেন তাদের মাঝে।
দেশের নামীদামি হাসপাতালে বসে যারা স্বাস্থ্য সেবার নামে বড় বড় বুলি আউড়ে বেড়ায় তাদের উচিৎ একবার কাইলাকুরীর মাটির হাসপাতালে চোখ বুলিয়ে আসা। যেখানে ডাক্তার, রোগী,কর্মী একই ঘরে মাটিতে বসে খাবার খায়, নাম মাত্র খরচে অথবা বিনা মূল্যে পায় অনেক রোগের সর্বোচ্চ ও আন্তরিক চিকিৎসা, ডায়াবেটিসের মত রোগের প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণ, বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেয় মা ও শিশুদের এমন আরও অনেক কার্যক্রম।
রোগীর সাথে আগত স্বজনদের জন্য শহুরে ক্লিনিক গুলোতে যখন টেলিভিশন দেখার মত বিনোদন ব্যবস্থা থাকে তখন এই মাটির হাসপাতালে থাকে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও রোগীর সেবা প্রভৃতি শিক্ষা মূলক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা।
আক্ষরিক অর্থে মানব সেবা বলতে যা বুঝায় একজন ডাক্তার হিসেবে নিরলস ভাবে তাই করে চলেছেন 73 বছর বয়সী এই প্রচার বিমুখ মানুষটি যাঁর সাদামাটা জীবন যাপনের ষোল আনা বাঙালীত্বের ছাপ মিলে মিশে একাকার হয়েছে গ্রাম বাংলার ধূলি মাখা গণ মানুষের সাথে।
শিক্ষক ব্যতীত অন্য কাউকে স্যার বলে সম্বোধন না করা আমি স্যার বলে ডেকেছিলাম মাটির ঘরে বাস করা এই খাঁটি মানুষটিকে। মৃদু হেসে আপত্তি জানিয়ে বললেন ভাই বলে ডাকতে। নিরহংকার এই সদা হাস্যোজ্জ্বল মানুষটিকে সবাই ডাকে “ডাক্তার ভাই ” বলে। তাঁকে নিয়ে একটি কবিতা লেখার ইচ্ছা প্রকাশ করায় আপত্তি জানান প্রচার বিমুখ নিরহংকারী সদা হাস্যোজ্জ্বল এই মানুষটি। অবশেষে অনুমতি দেন তাঁর সেবা ও স্বাস্থ্য বিপ্লব নিয়ে কিছু লেখার শর্তে। তাৎক্ষণিক আটটি পঙক্তি শোনানোর দুঃসাহসও করেছি বটে এবং কথা দিয়েছি অতি শীঘ্রই এটি সম্পূর্ণ করে উপহার হিসেবে উনাকে দিব।
অমিতাভ বচ্চনের সমবয়সী, মানব সেবায় নিবেদিত প্রাণ এই ব্যক্তিটি আশায় দিন গুণছেন যে, তাঁর অবর্তমানে হয়তো শাহরুখের মত কোন যোগ্য উত্তরসূরী পূর্ণ করবে তাঁর স্থান, প্রকৃত অর্থে যা কোনদিন পূরণ হওয়ার নয়।
আমি গর্বিত, মাদার তেরেসাকে স্বচক্ষে না দেখতে পেলেও দেখেছি তাঁরই মত এক মহৎ প্রাণকে, ডাঃ এড্রিক এস বেকারকে, ডাক্তার ভাইকে…যাঁকে লেখনীর মাধ্যমে ধারণ করার ক্ষমতা আমার মত ক্ষুদ্র প্রাণের জন্য অসম্ভব।
লিখেছেনঃ মিশু মুস্তাফিজ