আমার মেডিকেল লাইফের একমাত্র আবাস ছিল ডাঃ ফজলে রাব্বি হল। যার নামে এই হলটি, আজকে সেই ফজলে রাব্বির কথা মনে পড়তেই হবে।
_
অসাধারন মেধাবী এই মানুষটি ১৯৫৫ সালে আমার প্রিয় এই ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকেই এমবিবিএস পাস
করেছিলেন!
মাত্র ত্রিশ বছর বয়সে লন্ডন রয়েল কলেজ থেকে এমআরসিপি ডিগ্রি অর্জন করেন ডাঃ ফজলে রাব্বি, তাও একটি নয়, ইন্টারনাল মেডিসিন এবং কার্ডিওলজি- এই দুই বিষয়ে
দুটি, যা লন্ডনের রয়াল কলেজের ইতিহাসেও রেকর্ড ।
_
তরুন বয়স থেকেই শোষণের বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করেন তিনি।
স্বনির্ভর গণমুখী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পক্ষে লড়াই করে যাওয়া ডাঃ ফজলে রাব্বি স্বাধীনতাকামী তরুন চিকিৎসক সমাজের কাছে হয়ে
উঠেছিলেন স্বাপ্নিক মানুষের প্রতিকৃতি।
_
১৯৭০ সালে অধ্যাপক ডাঃ ফজলে রাব্বি “Pakistan best professor award” এর জন্যে
নির্বাচিত হন। কিন্তু, তিনি বললেন, স্যরি, শোষকদের কাছ থেকে আমি কোন পুরষ্কার নেবোনা। অথচ আজ তার কবরে যারা ফুল দিতে যায়, তার সেই সব উত্তরসূরীরা সামান্য পদ পদবীর জন্য যে কারো পা চাটতে একমিনিট দ্বিধাও করেনা।
_
২৭ মার্চ,১৯৭১। কিছু সময়ের জন্যে কার্ফু স্থগিত হলে ডাঃ রাব্বি চলে আসেন তার প্রিয়
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ওই এলাকায় ঘটে যাওয়া কালরাত্রির নৃশংসতা নিজের চোখে দেখে বসে থাকতে পারেননি তিনি। সিদ্ধান্ত নেন তার মেধা দিয়ে দেশের সঙ্কটে কিছু করার ।
_
পরবর্তী ৯ মাস দেশের জন্য ছিল তার নিরবিচ্ছিন্ন যুদ্ধ। দেশ ছেড়ে যাওয়ার অনেক সুযোগ থাকা
সত্তেও একটিবারের জন্যেও সে কথা না ভেবে কাজ করে যান অক্লান্ত।
কি চিকিৎসায়, কি টাকা-পয়সার প্রয়োজনে, গেরিলা যোদ্ধারা
তাকে চেয়ে পায়নি, এমন দিন বিরল !
_
১৫ই ডিসেম্বর, ১৯৭১। বিজয়ের দিনটির জন্য আর মাত্র একদিনের প্রতীক্ষা। কে যেন,
দরজায় কড়া নাড়লো, কিন্তু না, এবার আর মুক্তিসেনা না, ফজলে রাব্বীর বাড়ির সামনে একদল রাজাকার-আলবদর! নিয়ে গেল তাকে, তার আর বিজয় দেখা হলনা!
_
স্যার, আজ আমরা যে বিজয়ের লাল সূর্য দেখি, সে সূর্যে আপনারও রক্ত আছে। সে রক্ত হাতে কেউ না কেউ, কোথাও না কোথাও নিশ্চয়ই দেশের জন্য কিছু করার প্রতিজ্ঞা করে।
কেউ না কেউ কোথাও না কোথাও, লক্ষ লক্ষ কিংবা অন্তত একজন !!
ডাঃ মহিউদ্দিন কাউসার,
চিকিৎসক, লেখক, কার্টুনিস্ট।