শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪
আজ (১৮ই অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ও ‘ড্রিমার্স কনসাল্টেশন এন্ড রিসার্চ’ এর যৌথ উদ্যোগে ২০০তম ক্যাম্প সেলিব্রেশন প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়। প্রোগ্রামে বক্তব্যে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, “ডাক্তারদের আমরা সবসময় পেয়েছি, আমাদের যে কোন ক্রাইসিসে ; আমি প্যান্ডেমিক থেকে যদি ধরি আমরা সবসময়ই তাদেরকে পেয়েছি।”
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রচুর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল নিয়ে তিনি বলেন– “অনেক বেশি হসপিটাল বানিয়ে বা অনেক বেশি মেডিকেল ইন্সট্রুমেন্ট ইন্সটল করে যতটা না আমরা রোগীদের সেবা দিতে পারি, তারচে আরো বেশি ইফেক্টিভ হবে আমরা যদি মানুষকে রোগী হওয়া থেকে আটকাতে পারি।”
চিকিৎসকদের ভাতা বাড়ানো দরকার। প্রয়োজনের তুলনায় তাঁরা কম ফাইনান্সিয়াল সাপোর্ট পাচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। এ ফাইনান্সিয়াল সাপোর্টের অভাবে অনেক চিকিৎসক তাঁর পেশার প্রতি মনোযোগ ধরে রাখতে পারছেন না। এ বিষয়ে তিনি বলেছেন– “ডাক্তারদের আরো বেশি ফাইনান্সিয়াল সাপোর্ট দরকার। ডাক্তাররা অনেক বেশি পরিশ্রম করে। আমরা দেখেছি, আমাদের যে বন্ধুরা, ডাক্তার হওয়ার জন্য যে পরিমাণ পড়াশোনা বা পরিশ্রম করতে হয়, আমরা যারা ঢাবিতে থাকি তূলনামূলক কম ; আমাদের দিনরাত ২৪ ঘন্টা ওভাবে থাকতে হয় না। আমরা দেখেছি, ডাক্তাররা মেডিকেল কলেজ থেকে বের হয়ে ইন্টার্নি করার সময় তারা দেখা যায়, ওই পরিমাণ অর্থ পায় না যেটা সোশ্যালি রিকগনাইজ হওয়ার জন্য, একটা ফ্যামিলি মেইনটেইন করার জন্য অথবা সোশ্যাল ডিগনিটি নিয়ে সমাজে অবস্থান করার জন্য যে পরিমাণ অর্থ সমাজ প্রত্যাশা করে একজন ডাক্তারের থাকবে আসলে ওই পরিমাণ অর্থ থাকে না। আসলে সোশ্যাল বা ফাইনান্সিয়াল ইনসেন্টিভ না থাকলে ইফেক্টিভ কোন কাজে ওই পরিমাণ যে আগ্রহ বা ডেডিকেশন দেয়া বা ওটাকে সাস্টেইন করানো অনেক বেশি ডিফিকাল্ট হয়ে যায়।”
চিকিৎসকদের গ্রামে যাওয়ার চেয়ে সোশ্যাল ডিগনিটি বাড়ানো প্রয়োজন। এ বিষয়ে তিনি বলেন – “আমি সরকারি অনেক কঠিন আইন প্রণয়ন করতে পারি, যে ডাক্তারদের গ্রামে যেতেই হবে। গ্রামে গেলে তারা যে স্ট্যান্ডার্ড দিয়ে পড়াশোনা করেছে, যে স্ট্যান্ডার্ড দিয়ে তারা তাদের জীবন গড়েছে, তাদেরকে আমরা ওই সোশ্যাল ডিগনিটি নিশ্চিত করতে পারছি কি-না, ওই ডিগনিটি নিশ্চিত করে, আমি তাঁকে গ্রামে দিতে চাই তখন অবশ্যই ডাক্তাররা গ্রামে যেতে চাইবে। তখন যদি গ্রামে যেতে না চায় সেটা নিয়ে আমরা কথা বলব।”
অনেক চিকিৎসক আন্দোলনের বিপক্ষে ছিলেন, এ বিষয়ে তিনি বলেন – “আমি আন্দোলনের সময় দেখেছি, অনেক ডাক্তার আমাদের চিকিৎসা দিতে চায়নি, বিভিন্ন সময়ে আমাদের লিস্ট দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছে। আমরা সেখানে গিয়েছি ডাক্তাররা আমাদের লিস্ট দিয়ে পুলিশকে দিয়ে দিয়েছে বা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দিয়েছে।”
চিকিৎসকদের নিজের পেশাগত পরিচয়ই অনেক বড়। তিনি বলেছেন – “আমি বিশ্বাস করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ডাক্তারদের, তাঁদের (পেশাগত পরিচয়) এরচেয়ে বড় কোন পরিচয় প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ, কোন একটা রাজনৈতিক দলের (ব্যানারের) নিচে এসে ঐ রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে তাঁদেরকে পরিচিত হতে হবে, আমি মনে করি তাঁদের এটার প্রয়োজন নেই৷ ডাক্তার ইটসেল্ফ পরিচয়টা এতবড়, এটার মাহাত্ম্য এতবড়; আমি মনে করি রাজনৈতিক আবহে এই পরিচয়টা ম্লান হয়ে যায়।”
এছাড়াও তিনি চিকিৎসকদের সাথে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নিয়ে বলেন – “ডাক্তারদের যে ধরনের সহযোগিতা দরকার, আমরা করতে রাজি আছি।”
এ প্রোগ্রামে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি, ট্রেজারার, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সমন্বয়ক তারেক রেজা, বারডেম হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার নাসির উদ্দিন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার ইউনুস, বাংলাদেশ মেডিকেল ট্যুরিজম এসোসিয়েশনের সভাপতি আরিফুর রহমানপ্রমুখ।
প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদকঃ মঈন উদ্দীন আহমদ শিবলী, মোঃ ইরফানুর রহমান