প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৩ জুন ২০২০, মঙ্গলবার
দিদারুল আলম সজল
সিনিয়র অফিসার, সোনালী ব্যাংক।
বাপ-মায়ের খুব শখ ছিলো, তাঁদের বড় ছেলে ডাক্তার হবে। দুইবার পরীক্ষা দিয়েছিলাম। একবার পাইছিলাম ২৪, পরের বারেরটা বলা যাবে না।
সবাই ডাক্তার হইতে পারে না।
আমাদের কলেজের যে বন্ধুরা ডাক্তার হইছে, তাঁরা প্রত্যেকেই আমার চেয়ে হাজারগুণ বেশি মেধাবী ও পরিশ্রমী।
একজন মানুষের ‘ডাক্তার’ হয়ে উঠার পথটা কতটা কঠিন তা জানে ওই ব্যক্তি, তার পরিবার ও আপনজনরা। মেডিকেল এর হলগুলোতে গেলে দেখবেন তাদের অবস্থা। ঢামেকের ফজলে রাব্বী হলে খাইতে গেলে দেখতাম, পোলাপান খাইতে খাইতে পড়তেছে। এক আপুর দেখছি মাথার সব চুল পইড়া যাইতেছে।
মেডিকেলের ”প্রফের” সময় অনেক পোলাপান নাকি চাপের ঠেলায় ‘সুইসাইড’ পর্যন্ত করে ফেলতে চায়!
এমবিবিএস পাশ করা একজন ডাক্তার কত রোজগার করে খবর নিয়েছেন কোনদিন?
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বাথরুম পর্যন্ত থাকে না। ডাক্তাররা কিসের মধ্যে থাকে খবর নিয়েন একটু।
এদেশের কয়টা হাসপাতালের পরিচালকরা ডাক্তার?
সব তো ব্যবসায়ীদের দখলে।
ডাক্তাররা নাকি খুব উচ্চ ফি নেয়?
কয়জন ডাক্তার নেয়? আমি নিজেই তো সামান্য সর্দি-জ্বর হলে প্রফেসর খুঁজি। ২০ বছরের অভিজ্ঞ একজন প্রফেসর ডাক্তারের ৬০০/- ফি কি বেশি?
অতিরিক্ত পরীক্ষা দেওয়া ও ঔষধ কোম্পানি সংক্রান্ত কিছু অভিযোগ আছে, যা অনেক ক্ষেত্রেই সত্যি। খবর নিয়ে দেখেন এর পিছনেও অনেক ঘটনা আছে। নতুন ডাক্তারদের ক্লিনিকগুলোর কাছে আত্নাসহ বিক্রি করে দিতে হয়।
আমাদের পরিবারের মধ্যে দুইজন ডাক্তার। সুমী খালামনি ও সোহেল মামা। আমরা যে কোন প্রয়োজনে যে কোন সময় তাদের ফোন দিয়ে ফ্রি ট্রিটমেন্ট নেই। কখনো সম্মানী দেওয়ার চিন্তাও করি না।
ডাক্তাররাই সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র পেশাজীবি, যাদের কাছে মানুষ আসে ফ্রি তে সেবা নেওয়ার জন্য। অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে গেলে তারা এই চিন্তা করে না। উল্টা চা-পানির পয়সা দিয়ে আসতে চায়।
ডাক্তারের কাছে ফ্রি ট্রিটমেন্ট চান, অথচ উনাদেরও সংসার আছে, পরিবার আছে, পেট উনাদেরও চালাতে হয়।
২০০০/- দামের শার্ট পরা মানুষকেও দেখছি ডাক্তারের ফি ২০০/- কমানো নিয়ে ঝুলাঝুলি করতে।
ঢামেক ও চমেক দুই জায়গার আইসিইউতেই রোগী নিয়ে থাকার অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে। হাসপাতালের একজন গার্ড বা আয়ার যে পাওয়ার একজন ডাক্তার এর তা নেই। এটা নির্মম বাস্তবতা। স্বাস্থ্যসেবায় সবচেয়ে নিরীহ ও নির্যাতিত প্রাণীর নাম ডাক্তার।
নচিকেতার ‘ও ডাক্তার’ গান শুনে সব ডাক্তার কে ‘কসাই’ ভাবাটা ঠিক না। ভালো-খারাপ সব পেশাতেই আছে।
আল্লাহ তায়ালা যদি দুনিয়াতে কারো মাধ্যমে জীবন দিয়ে বা নিয়ে থাকেন তা হলো ‘ডাক্তার’।
তাঁদের মাইরেন না। তাঁরা আল্লাহর উছিলা।
ভদ্রলোক বলে তাদের উপর এমন অত্যাচার কইরেন না।
আজ ডাক্তারদের পিটিয়ে মেরে ফেলতেছেন, কাল নিজে মরার সময় ডাক্তার পাবেন তো?
একসময় ডাক্তার হতে না পারার দুঃখ কাজ করতো।এখন আর হয় না। বরং আমার মেধাবী বন্ধুদের জন্য ভয় হয়। শুয়োরের বাচ্চারা আবার ওদের গায়ে হাত তুলবে না তো?
এখন তো শুয়োরদের পাল্লাই ভারী!
ডাক্তারদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
আমি লজ্জিত, বিরক্ত, বিব্রত!