প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৬শে সেপ্টেম্বর, ২০২০, শনিবার
রাজধানীর শের এ বাংলা নগরে অবস্থিত শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সরকার নির্দেশিত পরিপত্রে বরাদ্দকৃত আর্থিক ব্যবস্থাপনার মধ্যেই কোভিডে ডিউটিরত অবস্থায় ও কোয়ারেন্টাইন সময়কালে চিকিৎসকদের জন্য মানসম্মত আবাসন ও নিরাপদ খাবারের ব্যবস্থা করেছে। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা ও দাবির কথা মাথায় রেখে কর্তৃপক্ষের এমন আন্তরিক সিদ্ধান্তে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন হাসপাতালটির চিকিৎসকরা।
৩৩তম বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার, ডা. নীহার রঞ্জন দাস জানান,
“ঐক্যবদ্ধ মুভমেন্টে সব আদায় করা সম্ভব। অন্যান্য কোভিড হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের জন্য এটি একটি উদারহণ তৈরি করেছে। এটি অন্যান্য হাসপাতালের জন্যও অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়।”
প্রসঙ্গত, গত ১২ এপ্রিল, ২০২০ রাজধানীর ছয় হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্য সেবাদানকারী চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার জন্য ১৯টি হোটেল নির্ধারণ করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু পরবর্তীতে ২৯শে জুলাই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান স্বাক্ষরিত পরিপত্র অনুযায়ী করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসিক হোটেলের বিল পরিশোধ না করার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। একইসঙ্গে চিকিৎসকদের জন্য বরাদ্দ হোটেলের সুবিধাও বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয় তাঁরা। উক্ত পরিপত্র অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকার মধ্যে দায়িত্ব পালনকারী একজন চিকিৎসক দৈনিক দুই হাজার টাকা এবং ঢাকার বাইরে এক হাজার ৮০০ টাকা ভাতা পাবেন বলে জানানো হয়।
তবে করোনা কালে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবাদানকারী চিকিৎসকদের আবাসন ব্যবস্থাপনা হোটেল বাতিলের সিদ্ধান্তে চিকিৎসকরা একইসাথে হন মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। এ বিষয়ে নিজেদের ন্যায্য দাবি আদায় করতে তাই রাজধানীর শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা সম্প্রতি ডিউটি শেষে কোয়ারেন্টাইনের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। ১৯শে সেপ্টেম্বর তাঁরা এই দাবিতে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, উপপরিচালক ডা. মামুন মোর্শেদ ও মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও কোভিড ইউনিটের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. শাহাদাৎ হোসেন রিপনের রুম ঘেরাও করেন।
পরবর্তীতে ২০শে সেপ্টেম্বর কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরার্মশক কমিটির ২০তম সভায় স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে তাঁদের পরিবার পরিজনদের কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। সে কারণেই ডিউটি শেষে কোয়ারেন্টাইনের জন্য নিরাপদ আবাসনের প্রয়োজনীয়তার কথা জানান চিকিৎসকরা। এদিকে, তাঁদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে ৩৩তম বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার এসোসিয়েশন হতেও এক প্রতিবাদলিপি দেয়া হয়।
অতঃপর চিকিৎসকদের দাবি ও আন্দোলনের মুখে শেষ পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের সমস্যাকে বিবেচনা করে এ বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে আন্তরিকতার পরিচয় দেন। নিজেদের দাবি আদায়ে প্রয়োজনীয় আন্দোলনের মাধ্যমে এমন দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির চিকিৎসকদের সাহসিকতা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার ভূয়সী প্রশংসা করছেন চিকিৎসক মহলের সংশ্লিষ্টরা। সেইসাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তাঁরা।