ডাক্তাররা কি ভয়ে পালিয়েছে? ১৯৭১ কী বলে?

সোমবার, ৬ এপ্রিল, ২০২০

১। যুদ্ধ করার আগে প্রস্তুতি লাগে। ১৯৭১ এর উদাহরণ যারা টেনে আনেন তাদের বলছি। ১৯৭১ সালেও শুরুতে ২৫ মার্চ থেকে পাকিস্তান আর্মি অপারেশন সার্চলাইটের নামে গণহত্যা শুরু করে। তখন বাঙ্গালি সবাই পালিয়ে জীবন বাঁচিয়েছে। ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। এরপর ট্রেনিং, অস্ত্র, খাবার সংগ্রহ করে প্রস্তুতি নিয়ে আবার সীমান্ত পেরিয়ে দেশে ঢুকে যুদ্ধ করেছে। খালি হাতে যুদ্ধ হয়না। ২৫ মার্চ থেকে প্রতিরোধ যুদ্ধে যারা অংশ নিয়েছিলো তাদের বেশিরভাগ মরেছে (যেমন- রাজারবাগ পুলিশলাইনে আক্রমণ)

২। ডাক্তাররা কোন ধর্মীয় জঙ্গি সংগঠনের সদস্য নয় যে বুকে বোমা বেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়তে বললেই আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ব। করোনার বিরুদ্ধে লড়াই আর জ্বর-ঠাণ্ডার চিকিৎসা এক না। সারা পৃথিবীতেই ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা পর্যাপ্ত রসদ চেয়ে প্রতিবাদ করেছে। কেউ খালি হাতে হাসতে হাসতে চিকিৎসা দিচ্ছেনা। বাধ্য হয়ে দিচ্ছে। নিজেরাও মরছে, রোগীকেও সংক্রমিত করছে। জীবাণুমুক্ত ছুরি-কাঁচি ছাড়া আপনি কি অপারেশনে রাজি হবেন? আপনি যদি মরতে রাজি থাকেন আমরাও চিকিৎসা দিতে রাজি আছি।

৩। ডেঙ্গুতে ১৫/২০ জন ডাক্তার মরছে। তাদের মধ্যে অন্তত ৩ জনের নাম বলতে পারবেন? অথচ একাত্তরে বীরশ্রেষ্ঠ ৩ জনের নাম তো বলতে পারবেন অনায়াসে। বিসিএস পরীক্ষাতেও আসে, বীরশ্রেষ্ঠদের নামে কত দালান-জাদুঘর-প্রতিষ্ঠান নামকরণ করেছেন। অথচ রোগীর জন্য জীবনে দেয়া সেইসব মৃত ডাক্তারদের নামে কোন প্রস্তাবনাও কোনদিন করেন নাই।

৪। ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে করোনা সম্পর্কে IEDCR জানতে শুরু করেছে। এরপর ইরান, ইতালি, আমেরিকা হয়ে যখন আমাদের এখানে আসা শুরু করেছে ততদিনে পেরিয়ে গেছে ৯ সপ্তাহ। তখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয় নাই। মার্চের মাঝামাঝি সময়ে মাত্র ১৭০০ কীট ছিল টেস্ট করার জন্য। PPE ছিল না। ডাক্তাররা যখন চিল্লাচিল্লি শুরু করল, ইন্টার্ণ ডাক্তাররা স্ট্রাইকে গেল, তখন আপনারা বুঝতে শুরু করলেন। কিছু PPE আসলো – সব চালান দিলেন ডিসি অফিসে, ব্যাংকে, মৎস্য প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তারা PPE পরে ফেসবুকে পোজ দিলো। ততক্ষণে অলরেডি ডাক্তাররা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মরতে শুরু করেছে। যখন একজন ডাক্তার করোনায় আক্রান্ত হয়- তখন সেই ডাক্তার নিজেও কিন্তু করোনার রোগী হয়ে যায়। ২৫ থেকে ৬৫% করোনা রোগীর কোন লক্ষণ প্রকাশ পায়না। আপনি কি করোনার রোগীর কাছে করোনার চিকিৎসা নিতে যাবেন?

৫। মুক্তিযুদ্ধ আর করোনার বিরুদ্ধে লড়াইকে মেলাতে যাবেন না। মুক্তিযুদ্ধে সাড়ে ৭ কোটি লোকের মধ্যে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেছে মাত্র ২০ থেকে ৪০ হাজার। বাকিরা সব নানান কারণে সার্টিফিকেট পেয়েছে। শরনার্থী ক্যাম্পে ভাত রান্না করেও মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট নিয়ে ঘোরে, ভাতা তোলে। কিন্তু করোনার সাথে যুদ্ধ সেইরকম জিনিস না। এখন ১৮ কোটির জন্য যুদ্ধে যাবে মাত্র ২৫-৩০ হাজার প্র্যাক্টিসিং ডক্টর। সেই হিসেবে যুদ্ধটা এখন আরও কঠিন। তাই বলে মুক্তিযুদ্ধের সাথে কখনোই তুল্য নয়। উপকারীর উপকার যে স্বীকার করেনা তাকে বলে অকৃতজ্ঞ। আর যে উপকারীর ক্ষতি করে তাকে বলে কৃতঘ্ন, সোজা বাংলায় নিমকহারাম। আপনারা ডাক্তারদের সাথে সেরকম আচরণ করছেন। ৫ হাজার কোটি দিলেন গার্মেন্টসে, ৭৩ হাজার কোটি দিলেন নানান ব্যবসায়ীরে, ডাক্তারদের কিচ্ছু দিলেন না। একটা শব্দও উচ্চারণ করলেন না। এমন মানুষের উপকার করতে কার ভালো লাগে? এমন মানুষের চিকিৎসা করতে কার ভালো লাগে?

লেখকঃ

সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. রাজিবুল বারি
পিএইচডি গবেষক, টোকিও ইউনিভার্সিটি
সাবেক বিভাগীয় প্রধান, রেডিওলজি, শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

জামিল সিদ্দিকী

A dreamer who want to bring positive changes in health sector in Bangladesh.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

মসজিদে জামাতে ৫ জনের অধিক অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা

Mon Apr 6 , 2020
৬ এপ্রিল, ২০২০ আজ সোমবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক জরুরী বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়ঃ “বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা ও প্যাগোডাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে জনসমাগমের মাধ্যমে এ রােগের বিস্তার ঘটেছে। আমাদের পাশ্ববর্তী দেশগুলােতেও এ ধরনের বিস্তার ও প্রাণহানির ঘটনার উদাহরণ বিদ্যমান। ইতোমধ্যে মুসলিম স্কলারদের অভিমতের ভিত্তিতে পবিত্র মক্কা মুকাররমা […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo