ডায়াবেটিস কি শুধু রোগ, নাকি জীবনের নতুন ধরণ?

মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৪

আমরা ডায়বেটিস সম্পর্কে কম বেশি সব জানি। শিক্ষিত পুরুষ বা মহিলারা জানে ডায়বেটিস সম্পর্কে। আজ আমরা ডায়বেটিস নিয়ে আরো জানবো।

ডায়বেটিস এর বাংলা অর্থ হলো বহুমূত্র রোগ। ডায়বেটিস হলো গুরুতর, দীর্ঘমেয়াদী রোগ, যেটি রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি থাকে। এই রোগ কখনো পরিবেশগত, শারীরিকগত, জিনগত হতে পারে। ডায়বেটিস সাধারণত মধ্যবয়সী পুরুষ বা মহিলা হতে পারে। তবে ইদানীং ১৬-২৫ বছর বয়সী ছেলে-মেয়েদের বেশি দেখা দিচ্ছে।

ডায়বেটিস রোগটি সে প্রাচীন কাল থেকে আছে। ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাদে একটি মিশরীয় পান্ডুলিপিতে ডায়বেটিস সম্পর্কে বলা হয়েছে। তখন তৎকালীন চিকিৎসক ডায়বেটিস রোগীদের জন্য প্রচুর পরিমাণ পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছিলো। পরবর্তী ভারতীয় চিকিৎসক এই রোগটি শনাক্ত করেছিলেন পিঁপড়া প্রস্রাবের দিকে আকর্ষণ করে। তখন এর নাম দিয়েছিলো মধুমেহ। ২৩০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে গ্রিক চিকিৎসক অ্যাপোলিনিয়াস অব মেমফিস ডায়বেটিস শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন। তবে ঐ সময় এই রোগের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিলো না, তবে ১৯৯১ সালে ইনসুলিন আবিষ্কার হওয়ার পর এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে ১৪ নভেম্বর ‘বিশ্ব ডায়বেটিস দিবস’ পালন করে থাকি।

২০১৯ সালে উইকিপিডিয়া তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বের ডায়বেটিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিলো প্রায় ৪৬ কোটি ৩০ লাখ। ন্যাশনাল গাডলাইন অন ডায়বেটিস মেলাইটাস (২০২৩) তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ডায়বেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ। ২০৪৫ সালে সেটি দ্বিগুণ হতে পারে।

প্রকারভেদ:

ডায়াবেটিস সাধারণত দুই প্রকার। যথা:

১) ডায়বেটিস মেলাইটাস।

২) ডায়বেটিস ইনসিপিটাস।

১) ডায়বেটিস মেলাইটাস: এটি আমাদের সবচেয়ে বেশি পরিচিত। ডায়বেটিস বলতে সাধারণত ডায়বেটিস মেলাইটাসকে বুঝায়। এই ডায়বেটিস সবার হয়ে থাকে। ইনসুলিন একটি রাসায়নিক পদার্থ বা হরমোন যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। অগ্ন্যাশয়ে ইনসুলিন মাত্রা কম থাকা অথবা ইনসুলিন উৎপন্ন না হওয়ার কারণে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। পরে দেখা দেয় ডায়বেটিস মেলাইটাস।

ডায়বেটিস মেলাইটাস আবার ৩ ধরণের। যথা:

১) টাইপ -১: যখন অগ্ন্যাশয়ে বিটা কোষ বিনষ্ট হয়, ফলে ইনসুলিন পুরোপুরি উৎপন্ন হচ্ছে না, তখন এই ধরণের ডায়বেটিস হয়ে থাকে।

২) টাইপ-২: যখন অগ্ন্যাশয়ে ইনসুলিন উৎপাদন কম হয় বা ইনসুলিন পুরোপুরি বিভিন্ন শরীরে সাড়া প্রদানে ব্যর্থ হয়, তখন টাইপ-২ ডায়বেটিস দেখা দেয়।

৩) গর্ভকালীন ডায়বেটিস: এটি গর্ভধারণকারী মহিলাদের হয়ে থাকে। গর্ভকালীন সময় রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়।

২) ডায়বেটিস ইনসিপিটাস: এই রোগ খুব কম মানুষের হয়ে থাকে। প্রতি ২৫ হাজারের মধ্যে একজন হয়ে থাকে। কিডনিতে ভ্যাসোপ্রেসিন (Vasopressin) হরমোনের অভাবে এই ধরণের ডায়বেটিস হয়ে থাকে।এই ধরণের ডায়বেটিসের জন্য Desmopressin নামক ঔষুধ সেবণ করতে হবে এবং রোগীকে বেশি করে পানি খেতে হবে।

লক্ষণ:

১) পলিইউরিয়া: ঘন ঘন প্রস্রাব।

২) পলিফেজিয়া: অতিরিক্ত ক্ষুধা ক্ষুধা ভাব।

৩) পলিডিপসিয়া: অতিরিক্ত তৃষ্ণা।

৪) দূর্বলতা ভাব।

৫) ওজন হ্রাস

৬) মুখে অ্যাসিটোনের গন্ধ পাওয়া যায়।

জটিলতা:

যদি ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখা না যায়, তাহলে বিভিন্ন জটিলতার মধ্যে দিয়ে যাবে। যেমন: স্টোক, চোখের রেটিনার ক্ষতি হতে পারে, কিডনিতে বিভিন্ন রকম সমস্যা হতে পারে, হৃদপিণ্ড বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে যেমন: মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন, করোনারি ব্লক হতে পারে ইত্যাদি।

ডায়বেটিস টাইপ -১ রোগী কোনো কারণবশত বেশি ইনসুলিন নিয়ে ফেলে তাহলে রক্তে গ্লুকোজে মাত্রা কমে গিয়ে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হবে এবং মস্তিষ্ক গ্লুকোজ যদি না যায়, তাহলে রোগীর মৃত্যু হতে পারে।

রোগ নির্ণয়:

রোগী যদি রেনডমাইজড ব্লাড গ্লুকোজ লেভেল ৭ থেকে ১০ mmol/L হয় অথবা ফাস্টিং ব্লাড গ্লুকোজ লেভেল ৬ থেকে ৬.৯ mmol/L হয়, তখন আমরা ডায়বেটিস রোগের সন্দেহ করি। নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমরা ওজিটিটি (ওরাল গ্লকোজ টোলারেন্স টেস্ট) করে থাকি। সেখানে আমরা নিশ্চিত করা যায় সে ব্যক্তি ডায়বেটিস রোগে আক্রান্ত কি না।

চিকিৎসা ও প্রতিরোধ:

টাইপ-১ ডায়বেটিস ক্ষেত্রে, কৃত্রিমভাবে ইনসুলিন নিতে হবে। কিছু ওষুধ নিতে হবে (চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী)

টাইপ -২ ডায়বেটিস ক্ষেত্রে, ঔষধ, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও শারীরিক ব্যায়াম করলে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখা যাবে। তবে পুরোপুরি নিরাময় হবে না।

গর্ভকালীন সময় চিকিৎসক তত্বাবধানে থাকতে হবে। প্রতিনিয়ত রক্তের গ্লুকোজ মাপতে হবে। তারপর খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। যদি ডায়বেটিস না নিয়ে আসতে পারে, তাহলে শিশুর বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে এবং মৃত্যু হয়ে যেতে পারে।

যাদের ডায়বেটিস ঝুঁকিতে আছে, তাদেরকে খাদ্যভ্যাস পরিবর্তন, শারীরিক পরিশ্রম, চিন্তামুক্ত থাকতে হবে, বেশি কাজের প্রেসার নেওয়া যাবে না ইত্যাদি। তাতে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদক: এস. এম. এম. মুসাব্বির উদ্দিন ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

প্ল্যাটফর্ম কনট্রিবিউটর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

আহতদের চিকিৎসায় এবার বাংলাদেশে ব্রিটিশ মেডিকেল টিম

Tue Nov 5 , 2024
মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর, ২০২৪ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা দিতে ঢাকায় এসেছেন দুই চিকিৎসকসহ ব্রিটিশ মেডিকেল টিম। আজ মঙ্গলবার চিকিৎসকদ্বয় রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশনে (নিটোর) আন্দোলনে আহত ভর্তি রোগীদের পর্যবেক্ষণ এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তারা আগামী ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত নিটোরে চি‌কিৎসা দে‌বেন। […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo