প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৯ জুলাই ২০২০, রবিবার
ডা. নিতীশ কৃষ্ণ দাস
সহকারী অধ্যাপক, ওরাল এন্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি বিভাগ,শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ।
যা প্রার্থনা করবো তাই হবে এরকম হলে, এই মুহুর্তে সৃষ্টিকর্তার কাছে কেবল একটা আবেদনই করতাম- “ডা. ইমুকে সুস্থ করে দাও, একজন সদ্যজাত শিশুর মাকে সুস্থ করে দাও।”
ইমু আমার পূর্ব পরিচিত ডা. মোবাশ্বেরের স্ত্রী, তারচেয়েও বড় কথা ও এখন মা। কয়েকদিন আগে সকালে হাসপাতালে এসে মোবাশ্বের বলল, স্যার আমার স্ত্রী প্রেগন্যান্ট, ইডিডি (আনুমানিক প্রসবের তারিখ) ২১ তারিখ কিন্তু ওর করোনা পজিটিভ ধরা পরেছে। মনটা মেঘে ঢেকে গেল, ঠিক নুঁয়ে পড়া গাছের মত ও বলতে লাগল, কোথায় কোথায় ওর স্ত্রীকে নিয়ে গেছে। কেউ চিকিৎসা দিতে রাজী হয়নি, কোথাও সিট নেই। আমি বললাম চলো আমার সাথে। গাইনির বিভাগীয় প্রধান ফাতেমা আশরাফ ম্যাডাম সব শুনে বললেন,
বাপু আমাদের এখানে “না” বলে কিছু নাই। তোমার স্ত্রীর জন্য যা দরকার সব করা হবে। তারপর হিসেব করে বললেন ২১ তারিখ পর্যন্ত যদি কোন সমস্যা না হয়, তবে এর মাঝে রোগী নেগেটিভ হয়ে যাবে, তখন আর সমস্যা থাকবে না। আর যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে নিয়ে আসবে আমরা সব কিছু করব।
কিন্তু সন্ধ্যার সময়ই ইমুর শ্বাসকষ্ট শুরু হলো। বাধ্য হয়ে আমাদের হাসপাতালে ৩ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করিয়ে দিলাম। রাতেই অবস্থা খারাপ হয়ে গেল। অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়ে একটু ভালো হলে সকালে সিজার করা হলো। বাচ্চা- মা দুজনেই তখন ভাল কিন্ত সন্ধ্যা থেকে মায়ের অবস্থা আবার খারাপ হতে শুরু করল। তীব্র শ্বাসকষ্টে স্যাচুরেশন খুব খারাপ ভাবে ওঠানামা করছিল।
একজন মা দীর্ঘ নয় মাস স্বপ্নের মোড়কে কি তীব্র যন্ত্রনা সহ্য করে তারপর বাচ্চা প্রসব করে, বাচ্চার মুখ দেখে সব ভুলে যায়। আর ইমু এখন জীবন- মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। একটা নবজাতক শিশু দুধের জন্য কান্না করছে, পাশে তীব্র শ্বাসকষ্টে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে তার মা। আর বাবা এত বড় প্রেসার নিয়ে প্রতিটি প্রহর গুনছে আর একপাশে অঝোরে কান্না করছে। করোনার এই সময়ে এটা কোন ভিন্ন বিষয় না। কিন্তু সব দুঃখতো আর সবাইকে সমানভাবে স্পর্শ করে না। ইমু এখন মা, মেয়েরা মা হলে নিষ্পাপ হয়ে যায়। প্রসব বেদনার সাথে মৃত্যু প্রায় যন্ত্রনা নিয়ে মা হয়ে এখন আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে আছে। আমরা পাপী- তাপী মানুষ, কিন্তু কিছু ভাল কাজতো করেছি। আসুন সবাই প্রার্থনা করি, হে সৃষ্টিকর্তা সেই বিবেচনায় এই সদ্যজাত বাচ্চাটাকে মাতৃদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত করোনা। কথা বলতে পারলে এই শিশুটিও সৃষ্টিকর্তার কাছে নিশ্চয়ই এই একটাই প্রার্থনা করতো,“হে মহান, আমার মাকে আমার কাছ থেকে এখনই নিও না”।