ডা. তাসনিয়া আহমেদ এর “দুইশো তেরোর গল্প”

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৫ জুলাই, ২০২১, বৃহস্পতিবার

 

একজন শিক্ষার্থীর ডাক্তার হবার স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ শুরু হয় তখন যখন সে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সাদা এপ্রোন গায়ে মেডিকেল কলেজে প্রবেশ করে। শত শত আইটেম, কার্ড, টার্ম, ওয়ার্ড এবং টিউটোরিয়াল ক্লাস এর ভীড়ে যখন একজন মেডিকেল শিক্ষার্থীর জীবন নাজেহাল, তখনই ক্লাসের ফাঁকে অবসর সময়ে ক্যান্টিনে বন্ধুদের সাথে কাটানো সময়গুলো যেন ব্যস্তময় জীবনে এক স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে আসে। মেডিকেলের আরও একটি মজার দিক হচ্ছে হোস্টেল জীবন যেখানে এক রুমে থাকা কিছু মানুষের মধ্যে গড়ে উঠে এক অদ্ভুত বন্ধন। ছাত্রজীবনের এই পাঁচটি বছর একসাথে কাটানো সময়গুলো যেন সারাজীবনের জন্য এক সুখময় স্মৃতি হিসেবে গেঁথে থাকে মনের মধ্যে।

আর সেই সুন্দর দিনগুলো জনসাধারণের সামনে তুলে ধরতে ডা.তাসনিয়া আহমেদ প্রকাশ করেছেন “দুইশো তেরোর গল্প”।

ডা.তাসনিয়া আহমেদ সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ২০১৩-১৪ ব্যাচ এর শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি যে হোস্টেলে থাকতেন তাঁর রুম নাম্বার ছিল দুইশো তেরো যাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে তাঁর গল্পের কাহিনী। ডা. তাসনিয়ার ভাষ্যমতে ‘ওয়ান ফাইন মর্নিং আমার মনে হলো, এই যে পাঁচ বছর ধরে ওসমানী মেডিকেলে পড়লাম, এক বছর ইন্টার্নি করলাম, সাড়ে ছয় বছর সিলেট থাকলাম, সারা জীবনের জন্য নামের আগে একটা ডাক্তার লাগায়ে ফেললাম, সারা জীবনের ফিক্সড ডিপোজিটের মতো কিছু বন্ধু নিয়ে আসলাম, তো এই এত এত কিছু নেয়ার পরে আমি ওসমানী মেডিকেলকে, সিলেট শহরকে, আমার প্রিয় হোস্টেলটার দুইশো তেরো নাম্বার রুমকে, আর আমার এই প্রফেশনের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে আমি কী দিতে পারলাম? আমার মনে হতে থাকলো, আমি যেহেতু লিখতে পারি, আমার সামনে একটা বিরাট সুযোগ আছে, টু শো গ্র‍্যাটিচ্যুড টু মাই কলেজ, টু পে দ্য রেসপেক্ট দ্যাট মাই প্রফেশন ডিজার্ভস! সেই ভাবনা থেকে শুরু করলাম নিজেদের জীবনের ছোট ছোট গল্প নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘দুইশো তেরোর গল্প’।

এই ‘দুইশো তেরোর গল্প’ এরই একটি চরিত্র, সিওমেকের এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং ডা. তাসনিয়া আহমেদ এর এক সিনিয়রের সন্ধানে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ মেডিকেল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্ল্যাটফর্মের ফেসবুক গ্রূপে একদিন পোস্ট দেন। যেখানে তিনি লিখেন “আমি সিওমেকের একজন প্রাক্তন ছাত্রীকে খুঁজছি। আপুর নাম কিংবা তিনি কোন ব্যাচ, আমার এই মুহূর্তে সঠিক মনে নেই (সম্ভবত ৩৬ বা ৩৭ তম ব্যাচ এইরকম সময়ের ছাত্রী তিনি); শুধু এইটুকু জানি, আপু ওসমানী মেডিকেলে পড়ার সময়ে দিলরুবা বেগম ছাত্রীনিবাসের ২১৩ নাম্বার রুমে থাকতেন। কোনো এক রিইউনিয়নের সময় তিনি এই রুমটা দেখতে এসেছিলেন, তখন আমি সেই রুমের বাসিন্দা। একটা রুমকে ঘিরে তাঁর যে আবেগ সেদিন দেখেছি, সেই আবেগ দাগ কেটে গেছিলো মনের গভীরে। এই ঘটনার প্রায় তিন বছর পরে আমি আমার তৃতীয় বই এবং প্রথম উপন্যাস ‘দুইশো তেরোর গল্প’ যখন লিখি, আপুর সাথে আমাদের কথোপকথনটুকু সামান্য পরিবর্তন করে এই ঘটনাটা বইতে রেখে দিই। বইটির প্রকাশক যিনি, তিনি এই অংশটুকু পড়ে এতোটাই আবেগতাড়িত হয়েছেন, তিনি চাচ্ছেন আপুকে এই বইটির এক কপি তার তরফ থেকে উপহার দিতে। আপু যদি এখানে থেকে থাকেন, কিংবা আপুর কোনো সম্মানিত ব্যাচমেট যদি এই সামান্য ইনফরমেশনটুকু (জানি, খুবই টাফ, তবু একটা চেষ্টা করে দেখি) থেকে আপুকে চিনে থাকেন, প্লিজ একটু মেনশন করবেন বা কমেন্টে জানাবেন বা আমাকে মেসেজ দেবেন।”

পরবর্তীতে প্ল্যাটফর্মের সদস্যদের সহযোগীতায় ডা. তাসনিয়া তাঁর উক্ত সিনিয়রকে খু্ঁজে পেলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন ”থ্যাংকস টু প্ল্যাটফর্ম। এই বিশাল কমিউনিটির সবাই পোস্টটাকে এতো বেশি রিচ করিয়েছেন এবং ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই এতো বেশি সাহায্য করেছেন, যে পোস্ট দেয়ার চব্বিশ ঘণ্টাও পার হয়নি; অথচ ওইটুকু ইনফোর ওপর ভিত্তি করে আপুকে আমি পেয়েও গেছি। দিস ইজ সামথিং যেটা প্রতিদিন ঘটে না। অদ্ভুত সুন্দর, অদ্ভুত মায়াময় একটা ঘটনা ঘটে গেলো আর তার সাক্ষী হলাম আমি।” আবারও, ধন্যবাদ প্ল্যাটফর্মকে এবং প্রত্যেকটা মানুষকে যাঁরা আপুর কাছে আমার এই মেসেজটা পৌঁছে দিয়েছেন এবং আমার আবেগটাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমাকে সর্বাত্মক সাহায্য করেছেন।”

পরিশেষে একটা কথাই বলা যায় মেডিকেল কলেজের ডেমো ক্লাস, টিউটোরিয়াল, লেকচার, ওয়ার্ড, আইটেম, টার্ম আর প্রফের ফাঁকে তৈরি হওয়া এই টুকরো টুকরো গল্পগুলি আজীবন এক সুখময় স্মৃতি হিসেবে বেঁচে থাকুক, বেঁচে থাকুক এমন বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে তৈরির হওয়া ‘দুইশো তেরোর গল্প’।

Khurshida Jabin Zinia

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

Which form of transportation will be the safest in COVID-19 era?

Thu Jul 15 , 2021
Platform news, 15 july, 2021, Thursday Whether its across the country or to your local office, having to rely on public transportation might put travelers at increased risk, despite increased social distancing measures. According to a recent study, a person is 300 times more likely to develop COVID-19 infection while […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo