প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৫ এপ্রিল ২০২০:
কোভিড-১৯ মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের প্রথম চিকিৎসক হিসেবে শহীদ হলেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দীন। তার মৃত্যু এক দিক দিয়ে যেমন শোকের, তেমনি হতাশার, ক্ষোভের।
বিগত ২৩ মার্চ তাঁর ফেসবুক পোস্টে তিনি জানিয়েছিলেন তার কর্মরত থাকার কথা, সাবধান করেছিলেন জনগণকে।
মরহুম সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দীনের দায়িত্বে থাকার সময়ের কথোপকথন জানা যায় তাঁর এক সহকর্মীর কাছ থেকে। তাতেই জানা যায়, গত ২৬ মার্চের আগ পর্যন্ত তিনি সুরক্ষা সামগ্রী পান নি, অথচ কাজ করছেন আরো অনেক আগ থেকেই। সুরক্ষা সামগ্রী ও পোশাক পর্যাপ্ত না থাকায় নিজ উদ্যোগেই তিনি ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন পিপিই এর। শুধু নিজের জন্যে নয়, দুশ্চিন্তা করছিলেন সবাইকে নিয়ে, তাঁর জুনিয়র চিকিৎসকদের নিয়ে। দুআ চেয়েছিলেন সবার জন্য। মেসেঞ্জারে থেকে যাওয়া মেসেজ থেকে তাঁকে জানতে পারা গেল। যদি লেখা না থাকতো, হয়তো লোকচক্ষুর অন্তরালেই থেকে যেতেন এই যোদ্ধা।
এই ছবিটি এক সপ্তাহ আগের, ৮ এপ্রিল বুধবারের। চিকিৎসক হয়েও যখন সিলেটে আইসিইউ পেলেন না, করোনা যুদ্ধের সম্মুখ যোদ্ধা হয়েও যখন তাঁকে ঢাকায় আনার কোন সরকারি ব্যবস্থাপনা হলো না, তখন নিজেই নিজের জন্য খুঁজেছেন এম্বুলেন্স, শেষকালেও নিজের ব্যবস্থাতেই আসতে হয়েছে ঢাকায়। খুব কি বেশি চাওয়া ছিল? অনেক বড় কিছু? সিলেটে জায়গা হলো না তাঁর, তাই চেয়েছিলেন। আর চাইবেন না, কখনোই না।
ডা. মঈন উদ্দীনের মৃত্যুতে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন অনেকেই। এক চিকিৎসক তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন,
“এই মৃত্যু চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো আমরা কতটা প্রস্তুত? এদেশে চিকিৎসকরা কত অসহায়? সত্যি বলতে কী, এদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা কতিপয় লোভী, দুর্নীতিবাজ, পা-চাটা, কমিশন খাওয়া, ঘুষখোর দুর্নীতিবাজ লোকদের হাতে বন্দী, যারা কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই বলতে পারে, আমেরিকা সিংগাপুরের চেয়ে বেশী প্রস্তুতি।
এই মৃত্যুর জন্য দায়ী কে?
তিনিই দায়ী, তারাই দায়ী যারা হাতে খেলনা বন্দুক দিয়ে চিকিৎসকদের লড়াই করার গান শোনান!
তিনিই দায়ী, টকশোতে গিয়ে যিনি বলতে পারেন না, ‘এই সকল দুর্নীতিবাজদের স্বাস্থ্য প্রশাসন থেকে ঘাড় ধরে বের করা দরকার’।
দায়ী আমরা, পলায়নপর চিকিৎসক সমাজ, যারা ভাবি ‘দুনিয়া গোল্লায় যাক, আমি ঠিক আছি তো?’
যুদ্ধের শুরুর আগেই যদি আমরা সিপাহশালারদের হারিয়ে ফেলি, তাহলে বুঝতে হবে আমাদের স্ট্রাটেজিতে ভুল। এই স্ট্রাটেজিক প্ল্যানারদের কৈফিয়ত সহ, শাস্তি সহ বিদেয় করা উচিৎ। তা না হলে আরো খারাপ কিছু অপেক্ষা করছে।
বাংলাদেশে যদি ৪৫ জন রোগীর সাথে দুই জন চিকিৎসক মারা যায়, তাহলে আমেরিকার মতো বিশ হাজার রোগী মৃত্যুবরণ করলে কয়জন ডাক্তার মারা যাবে? ৮০০ জন চিকিৎসক। আর আঠারো লক্ষ রোগী মারা গেলে? এদেশে ডাক্তার, নার্স কাউকেই খুঁজে পাওয়া যাবে না।”
দেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ, প্রথম মৃত্যু ১৮ মার্চ। এর মাঝেই হাজার হাজার প্রবাসী বাঙালি আক্রান্ত দেশ থেকে নিজ দেশে ফিরেন, যাদের শুধু হোম কোয়ারেন্টাইনের পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। ধারণা করা হয়, শুরুতে আরো ভালো ব্যবস্থাপনা না করায় করোনা ছড়িয়ে যায়।
যথাযথ সুরক্ষা সামগ্রী তখনো সব হাসপাতালে পৌঁছে নি।
এই সময়ের মাঝে ডা. মঈন উদ্দীন হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।