বুধবার, ৩ জুন, ২০২০
ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান (স্বপন)
১৭তম ব্যাচ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ
বন্ধু ‘ডা. মঞ্জুর রশিদ চৌধুরীর’ মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। শোকসন্তপ্ত পরিবারকে আল্লাহ ধৈর্য ধারন করার ক্ষমতা দিন। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতবাসী করুন।
৪০ বছর পর তাঁকে নিয়ে লিখতে হবে ভাবি নি। সম্ভবত ১৯৭৯ সাল। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ১৭ তম ব্যাচের ছাত্র ছাত্রীরা চট্টগ্রাম ও সিলেটে হাইজিন (কম্যুনিটি মেডিসিন) ট্যুরে যাবে। Advanced Team এর সদস্য হিসেবে আমরা ক’জন ২/৩ দিন আগেই বেরিয়ে পড়লাম, যাতে ভ্রমণকালীন সময়ে থাকা, খাওয়া ও ট্রান্সপোর্টের কোন সমস্যা না হয়।
চট্টগ্রামের কাজ সেরে যখন সিলেট পৌঁছোলাম, তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। স্টেশন থেকে নেমে রিকশাওয়ালাকে বললাম, “এই রিকশা যাবে?” কোন জবাব নাই। কয়েকবার ডেকেও ফল পেলাম না। পাশের এক সহযাত্রী বললেন, “ড্রাইভার বলে ডাকেন।” ড্রাইভার বলতেই একজন সাথে সাথে এলো।
আমরা যখন সিলেট মেডিকেল হোস্টেলে পৌঁছোলাম তখন রাত ৮ টা বাজে। রিকশা থেকে নেমে হোস্টেলের করিডোরে দেখা হলো সুদর্শন, গুম্ফধারী, স্মার্ট ও প্রখর ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন এক তরুণের সাথে। সঙ্গে কয়েকজন যুবক। ইনিই মঞ্জুর রশিদ চৌধুরী। এক্স নটরডেমিয়ান। সম্ভবত উনি তখন ছাত্র সংসদের জেনারেল সেক্রেটারি। পরিচয় ও উদ্দেশ্য জানাতেই হৈ হৈ করে বললেন, “সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে।”
তারপর আমাদের থাকার রুম দেখিয়ে বললেন, “ফ্রেশ হয়ে ক্যান্টিনে আসুন।” আমরা ক্যান্টিনে রাতের খাবার খাওয়ার পর ছাত্র সংসদের আরও সদস্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তাঁকে দেখে মনে হলো, নেতা হলে এমনই হওয়া উচিত। বেশ কিছুক্ষণ কথাবার্তা ও আড্ডা দেবার পর মঞ্জুর বললেন, “আপনারা রেস্ট নেন, আগামীকাল ডিসি অফিসে ট্রান্সপোর্ট রিক্যুজিসনের জন্য যেতে হবে।”
পরদিন সকালে নাস্তা করে ডিসি অফিসে রওনা দিলাম। সাথে মঞ্জুর রশিদ। ডিসি অফিসে আমাদের সঙ্গে ডিসি সাহেবের পরিচয় করিয়ে দেবার পর ট্রান্সপোর্টের জন্য দরখাস্ত জমা দিতে অফিস সহকারীর কাছে গেলাম। মঞ্জুর তার সাথে হড়হড় করে সিলেটি ভাষায় কথা বলতে লাগলেন। কিছু বুঝলাম আর কিছু বুঝলাম না। কথা শেষে মঞ্জুর বললো, “চলেন শাহজালালের মাজারে যাই।” মাজার জিয়ারত করে হোস্টেলে ফিরে আসলাম।
এরপর ট্যুরের সব সদস্যরা এলো। মঞ্জুর ও তাঁর টিম আমাদের আপ্যায়নের কোন ত্রুটি করেনি। জাফলং, তামাবিল, চাবাগান, বিভিন্ন দর্শনীয় স্হান দেখায় তাঁর নিরবিচ্ছিন্ন সাহায্যে ও সহযোগিতা পেয়েছিলাম।
তাঁর মৃত্যুতে টাইম মেশিনে সেই কয়েকটি দিনের আনন্দময় সুখস্মৃতি আমাকে স্মৃতিকাতর করে তুলেছে। তুমি যেখানেই থাকো ভালো থেকো বন্ধু। বিধাতার অমোঘ নিয়ম। তবু যেতে দিতে হয়….