প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২ জুন, ২০২০, মঙ্গলবার
অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী
মগজের নিজস্ব ইমিউন ব্যবস্থা নিজের কোষের গুরুতর ক্ষতি করতে পারে। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা থেকে ব্লাড -ব্রেইন প্রতিবন্ধক এর মাধ্যমে পৃথক হয়ে আছে। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের নিজস্ব ইমিউন ব্যবস্থা ‘নিউরো ইমিউন সিস্টেম’ যেকোন সংক্রমণ আর ফরেইন কোষ থেকে মগজকে রক্ষা করে। মগজের ইমিউন কোষ মাইক্রোগ্লিয়ার আছে নানা কাজ। মৃত বা আহত মগজ কোষ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য নিউরনদের সাহায্য করে। পরিস্থিতি সাপেক্ষে দৈহিক অবয়ব আর আচরণ বদলানোর ক্ষমতা আছে এদের, এতে নানারকম ভূমিকাও রাখতে পারে। সংক্রামক বস্তু বা আঘাতে এরা সাড়া দেয় এবং সক্রিয় হয়ে উঠে। সক্রিয় হলে এদের হয় পুনঃজনন, এরপর চলে যায় অকুস্থলে। সাড়া দেওয়ার পর মাইক্রোগ্লিয়া নিঃসরণ করে সাইটোকিন আর কেমোকিনস।
তবে স্নায়ু অবক্ষয়ী রোগে মাইক্রোগ্লিয়ার রয়েছে ক্ষতিকর ভূমিকা, যেমন আলজাইমার রোগ আর পারকিন্সন রোগ। গ্লিয়া নামে নন নিউরনাল কোষের অংশ হল মাইক্রোগ্লিয়া। গ্লিয়া কোষগুলো মগজের নিউরন রক্ষা করে বলে জানা। এরা অনন্য এই কারনে যে অন্যান্য মগজ কোষের থেকে এদের উৎস ভিন্ন। মগজ কোষ উদ্ভুত হয় নিউরাল স্টেম কোষ থেকে। মাইক্রোগ্লিয়া উদ্ভুত হয় ডিম্বথলি (yolk sac) থেকে, এরপর বিকশিত হওয়ার সময় আগেভাগে এসে উপস্থিত হয় মগজে।
প্রদাহ হলে মাইক্রোগ্লিয়ার কর্ম বদলে যায়। মগজ রক্ষার জন্য আগ্রাসী রূপে আবির্ভূত হয়। প্রুনিং বা কাটছাঁট করার মাধ্যমে মাইক্রোগ্লিয়া নিউরনের মধ্যে যে সংযোগ গুলো এদের ছিন্ন করতে থাকে। এদের গ্রাস করে ফেলে। এই কাটছাঁটের সময় দূর্বল নিউরন কাটা পড়ে, থেকে যায় শক্তিশালী গুলো। মাইক্রোগ্লিয়ার পৃষ্ঠদেশে আছে বিশেষ রিসেপ্টর। অন্যান্য কোষ থেকে আসা যন্ত্রণার সঙ্কেত এরা চিহ্নিত করে। এই সঙ্কেতের আকর্ষণে মাইক্রোগ্লিয়া ছুটে যায় সমস্যা স্থলে। প্রদাহের কারনে মগজের ভারসাম্য নষ্ট হলে জীবিত নিউরনে যন্ত্রণা হয়। এই সংকেত পেয়ে মাইক্রোগ্লিয়া এদের জীবন্ত অবস্থায় গ্রাস করে। মগজের সংযোগ আর কাজ কর্মে হয় দারুণ ক্ষতি। অনেক সময় মাইক্রোগ্লিয়া ভয়ানক আগ্রাসী হয়ে উঠে, যা নিয়ন্ত্রণ করা অসাধ্য হয়ে যায়। এরা তখন মগজের চারপাশের কোষদের ধ্বংস করতে থাকে, হয়ে উঠে ভয়ংকর।