ডিপ্রেশনের রোগীরা প্রায়শই বলে আমার কিছু ভাল লাগে না, মন ভাল নেই, মুড ভাল নেই। অর্থাৎ এটা একটা মুড ডিজঅর্ডার। এই ভাল না লাগা সব সময় থাকে। কিন্তু কোন কোন মুড ডিজঅর্ডারে এই ভাল লাগে না, তো পরক্ষণেই মন বেশ উল্লসিত। অর্থাৎ মুড এর মধ্যে ভাল না লাগা, আর ভাল লাগা’র দুটো pole আছে, যেটাকে বলে bipolar mood disorder. কিন্তু ডিপ্রেশনে শুধুই ভাল না লাগা, তাই এটা unipolar mood disorder!
ভাল না লাগার কারণ
অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোন কারণ আছে, যৌক্তিক বা অযৌক্তিক কারণ, যা আপনার কাছে মনে হতে পারে। কিন্তু যে Depression এর রোগী, তার কাছে প্রতিটি কারণই যৌক্তিক। তাই কখনো এটা বলা যাবে না যে আপনার এই মন খারাপের কারণটা অযৌক্তিক! এই কারণগুলো বিভিন্ন রকম হতে পারে, নিজের শারীরিক অসুস্থতা অক্ষমতা থেকে শুরু করে অন্যের সমাজের দেশের যে কোন সমস্যাই যা তার কাছে সমস্যা বলে মনে হয়, যা তাকে দুঃশ্চিন্তায় ভোগায় (anxiety), যা নিয়ে বেশি টেনশন করতে করতে, সেসব কারণেই সে এক সময় Depression এ চলে যেতে পারে। তাই মাথায় রাখা ভাল, ডিপ্রেশনের শুরুটা হতে পারে anxiety থেকে, আবার anxiety ছাড়াও হতে পারে।
Symptoms
কিছুতেই কিছু ভাল লাগে না।
মন ভাল লাগে না, শরীর ভাল লাগে না!
মন কিরকম ভাল লাগে না?
– আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।
– আমি আর পারছি না।
– আমি ব্যর্থ।
– জীবনে কোন আশা নাই, আনন্দ নাই।
– কি লাভ বেঁচে থেকে!
অর্থাৎ মনের মধ্যে এক কথায় চরম নৈরাশ্যবাদী (pessimism) অবস্থা বিরাজ করবে। ফলে নিজেকে সমাজ সংসার থেকে গুটিয়ে নেবে, কম মিশবে মানুষের সাথে, যখন চেয়ারে বসবে তখন পিছনের দিকে চুপসে হেলান দিয়ে অলস ভঙ্গিতে বসবে। যদি তার সমস্যা কি জিজ্ঞেস করা হয়, সে তার সমস্যাগুলো অনগর্ল বলে যাবে, এবং সাথে এটাও বলতে পারে, ‘আমার সমস্যার কোন সমাধান নেই।’ তার সমস্যার জন্য সে অন্যকে দায়ী করতে পারে, আবার দায়ী করতে পারে নিজেকেও, বলতে পারে ‘আমার অবস্থার জন্য আমি নিজেই দায়ী, আমি drug addicted ছিলাম, ড্রিংক করতাম, খারাপ কাজ করেছি, সময় নষ্ট করেছি, ইত্যাদি ইত্যাদি!’
তার যে শুধু মনই ভাল লাগে না, তা কিন্তু না। তার খেতে ভাল লাগবে না (reduced appetite, weight loss হবে), ঘুমাতে ভাল লাগবে না (disturbed sleep, শরীরে আড়ষ্টতা fatigue আসবে), loss of libido হবে, ঘরের কোণে জড়সড় হয়ে পরে থাকবে (motor retardation). অর্থাৎ তার psychological সমস্যাগুলো তার দৈনন্দিন জীবনের উপর এমনভাবেই প্রভাব ফেলবে যে ফলশ্রুতিতে তার এই somatic symptoms গুলো ডেভেলপ করবে!
রোগ ধরা যাবে কিভাবে
symptoms শুনে আর হিস্ট্রি নিয়ে। এক্সামিনেশনে কিছু কি পাওয়া যাবে?
যেতে পারে। কারণ Depression এর অন্যতম একটি কারণ physical illness, সে রকম কিছু বললে সেই সিস্টেম এক্সমিনেশন করে তার ফাইন্ডিংস পাওয়া যাবে। আর এই ধরণের রোগীদের suicidal tendency বেশি, তাই আগে মরার জন্য যদি অল্পস্বল্প কোন চেষ্টা করে (self harm) থাকে তার চিহ্ন পাওয়া যাবে, যেমন ছুড়ি দিয়ে হাত কাঁটা, হাতের উপর ট্যাটু আঁকা A+G (আবুল+গোলাপী)। আবুলকে ছেড়ে গোলাপী এখন ট্রেনে করে ভেগে গেছে কিনা সেই হিস্ট্রি নিতে হবে। কারণ কলিকালে এটাও Depression এর অন্যতম কারণ!
Investigation
Depression এর নির্দিষ্ট কোন test নাই। কোন physical illness আছে বলে সন্দেহ হলে সেই অনুযায়ী test করা যায়, যেমন hypothyroidism মনে হলে TFT.
চিকিৎসা
অন্য কোন physical illness থাকলে তার চিকিৎসা।
আর ডিপ্রেশনের সবচেয়ে ফলপ্রসু চিকিৎসা হল Cognitive behaviour therapy (CBT), counselling। পরিবার আশেপাশের কাছের মানুষকেই এটা বেশি করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের একটা প্রতিপাদ্য ছিল ‘Depression, let’s talk’ তাই রোগীর সাথে বেশি বেশি কথা বলতে হবে। তবে এইসব কথা না ‘তোর সমস্যার জন্য তুইই দায়ী, তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না হতচ্ছাড়া!’ Be positive, positive attitude, সাপোর্টিভ কথাবার্তা, ‘তোকে দিয়েই হবে, তুই আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট, রবার্ট ব্রুস, বিশ্বজয় কেবল তুইই করতে পারবি, ইত্যাদি ইত্যাদি!’ বিভিন্ন কাউন্সেলিং সেন্টার আছে, ওরাও ভাল কাউন্সেলিং করে।
এর পাশাপাশি ওষুধ psychiatrist এর পরামর্শ মত।
বিভিন্ন anti-depressant বাজারে আছে, নাম আমরা সবাই জানি। এদের কাজ মনকে ভাল লাগানো, আর আমরা জানি আমাদের শরীরে dopamine, serotonin (5-HT), nor adrenaline প্রভৃতির পরিমাণ বাড়লে আমরা হাসিখুশি থাকি। ওইসব ওষুধের কাজ এসব neurotransmitters এর পরিমাণ বাড়ানো। ধূমপান করলে dopamine বাড়ে, তাই অনেকে ছ্যাকা খেয়ে ধোয়ার রাজ্যে বসবাস করে আনন্দ পায়। এটা কি ঠিক? মোটেই না, কারণ আজকের সাময়িক আনন্দ আগামী দিনে ক্যান্সারে মৃত্যু!
ওষুধের ক্যাটাগরি
১। Tricyclic anti-depressant (TCA)
amitryptyline, dosulepin, imipramine, clomipramine.
এরা Serotonin, noradrenaline বাড়াবে।
খুবই ভাল, বেশ ইফেক্টিভ। শুধু side effects একটু বেশি। ঘুম পায় (sedation), গলা মুখ শুকায় (anti cholinergic effects), বুক ধরফর করে (palpitation, arrhythmia)।
রোগীর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। রোগী যানবাহন চালালে, মেশিন বা আগুনের কাজ করলে, অর্থাৎ ঘুম আসলে যেসব কাজে বিপদ ঘটতে পারে সেসব ক্ষেত্রে না দেয়াই ভাল। আর যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে একটু সাবধানে দিতে করতে হবে, ওই যে বলেছি arrhythmia করে, long QT করে।
২। Selective serotonin re-uptake inhibitor (SSRI)
citalopram, escitalopram, fluoxetine, paroxetine, sertraline.
নাম শুনেই বুঝতে পারি এরা serotonin বাড়াবে। TCA এর সাথে তুলনায় SSRI এর সবগুলো side effects ই কম, আবার efficacy ও কম। তাই risk benefit rario চিন্তা করে TCA বা SSRI প্রেসক্রাইব করতে হবে।
৩। Noradrenaline re-uptake inhibitor
venalafaxine, duloxetine, mirtazapine
নাম শুনেই বুঝি এরা noradrenaline বাড়াবে। কিন্তু এটা selective Noradrenaline re-uptake inhibitor না যে শুধু noradrenaline এর পরিমাণই বাড়াবে, পাশাপাশি বাড়াতে পারে serotonin এর পরিমাণও যেমন- venalafaxine, duloxetine. অন্যদিকে mirtazapine কে বলা হয় specific serotonergic inhibitor কারণ এটা অনেকগুলো serotonin receptor কে ব্লক করে।
৪। Monoamine oxidase inhibitor (MAOi)
খুব একটা আজকাল ব্যবহার হয় না।
ওষুধ বলতে এই। সাইড ইফেক্টস এডজাস্ট করতে লো ডোজ দিয়ে শুরু করে আস্তে আস্তে বাড়াতে হয়, তারপর আস্তে আস্তে কমিয়ে বন্ধ করতে হয়। দুটো বিষয় মনে রাখতে হয়।
প্রথমতঃ রোগী ১ মাস ওষুধ খেয়ে ভাল। দিলাম ওষুধ বন্ধ করে! এটা করা যাবে না। ৬ থেকে ১২ মাস ওষুধ খেতে বলা হয় relapse প্রিভেন্ট করতে।
দ্বিতীয়তঃ রোগীর ৬ মাস ওষুধ খাওয়া শেষ। রোগী পুরোপুরি সুস্থ। পরদিন থেকে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিল! এটাও করা যাবে না। কমাতে হবে আস্তে আস্তে ট্যাপারিং করে কয়েক সপ্তাহ ধরে। অন্যথায় discontinuation symptoms ডেভেলপ করতে পারে।
প্রতিটি মানব মন মুক্ত পাখির মত হতাশা কাঁটিয়ে ডানা মেলে উড়ুক মুক্ত আকাশে।
ডা. কাওসার উদ্দীন
ঢামেক, কে-৬৫